রহিম শেখ ॥ ক’দিন বাদেই ঈদ। চলছে তুমুল কেনাকাটা। পোশাকের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক পণ্য কিনতে ধনী-গরিব সবাই এখন মহাব্যস্ত। এরমধ্যে অন্যতম নতুন জুতো। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নানা রঙ আর বাহারি ডিজাইনের এসব জুতো-স্যান্ডেলের খোঁজে ফ্যাশনসচেতন তরুণ-তরুণী ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ ছুটছেন মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলে। পোশাকসহ কিছু পণ্যে বিদেশী আধিপত্য থাকলেও জুতার বাজার সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে দেশী পণ্যের একচেটিয়া দাপট। ক্রেতাদেরও পছন্দের শীর্ষে ব্র্যান্ডের জুতাগুলো। এবার বর্ষা মৌসুমে ঈদ হওয়ায় বৃষ্টি, কাদা এবং আর্দ্রতার বিষয়টি মাথায় রেখে জুতোর ডিজাইন করা হয়েছে। দামি ব্র্যান্ডের শোরুমের পাশাপাশি ফুটপাথের দোকানেও এসেছে জুতা-স্যান্ডেলের নতুন নতুন কালেকশন। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীর জুতার দোকানগুলো সেজেছে রকমারি সব জুতার সমাহারে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাহারি ডিজাইন এনেছে। ঈদ উপলক্ষে এ্যাপেক্স, ওরিয়ন, বাটা, বে-এম্পোরিয়াম, জেনিস ও আড়ংসহ নানা ব্র্যান্ডের দোকানে রয়েছে জুতার বিশেষ সংগ্রহ। এছাড়া বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, এলিফ্যান্ট রোডের মার্কেট, নিউমার্কেট, মৌচাক, মালিবাগ, পলওয়েল মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, গুলিস্তান, সদরঘাটসহ অন্যান্য বাজারের দোকানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জুতা। ব্রান্ডের জুতায় ভিসা ও মাস্টারসহ নানা কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকদের কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় দিয়েছে। ফলে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর গ্রাহকরা ব্র্যান্ডের জুতাকেই বেছে নিচ্ছেন। জুতার বাজারে এবার সব ধরনের ফ্যাশনই চলছে। স্লিপার থেকে স্যান্ডেল, মোকাসিন, লোফার, কেডস, ক্যাজুয়াল সবই আছে ঈদের বাজারে। রং-নকশাতেও আছে বৈচিত্র্য। কালো বা চকোলেট রঙ্গের পরিবর্তে বর্তমানে অ্যান্টিক সোনালি, রূপালী বা মেরুন রং, কখনও সাদা রঙ্গের জুতা-স্যান্ডেল পছন্দ অনেকের। এ ধরনের বাহারি রঙ্গের স্যান্ডেলের সঙ্গে থাকে পাথর ও পুঁতির কাজ।
জানা গেছে, পোশাকসহ কিছু পণ্যে বিদেশী আধিপত্য থাকলেও জুতার বাজার সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে দেশী পণ্যের একচেটিয়া দাপট। ক্রেতাদেরও পছন্দের শীর্ষে ব্র্যান্ডের জুতাগুলো। ঈদ উপলক্ষে বাটা সু প্রায় একশত নতুন ডিজাইন নিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্মকর্তারা। একইভাবে এ্যাপেক্স, ওরিয়ন ও বে-এম্পোরিয়ামও কয়েক শতাধিক নতুন ডিজাইন নিয়ে এসেছে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, বেচা-কেনা ততই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন এসব কোম্পানির বিক্রয়কর্মীরা। তবে গ্রাহকরা বলছেন, মানের তুলনায় অনেক জুতার দাম বেশি। তারপরেও পছন্দের জুতা দাম দিয়ে কিনছেন।
বাটার কাওরান বাজার শাখার ব্যবস্থাপক জাহিদ হাসান বলেন, এবার ঈদ আয়োজনে বাটার জুতায় তিনটি বিষয় পাওয়া যাবে আরামদায়ক, স্টাইলিশ ও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম। একই সঙ্গে নক্সা ও রঙ্গের ক্ষেত্রেও এবার বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন ক্রেতারা। কালো, বাদামি, নীলসহ থাকছে আরও কিছু রঙ্গের উপস্থিতি। তিনি বলেন, বিক্রি ভালই হচ্ছে। আগের চেয়ে বাটার জুতা অনেক উন্নত করা হয়েছে। তাই গ্রাহকও বাড়ছে। পাঁচ শ’রও বেশি কালেকশন নিয়ে এবারের ঈদে হাজির হয়েছে এ্যাপেক্স। মেয়েদের জন্য রয়েছে ওয়েজ হিলের নিনো রসি। আছে ব্যালেরিনার কালেকশন। ফ্যাশনে নতুন মাত্রা দিতে আছে সান্দ্রা রোসার ভিন্ন ধাঁচের গ্ল্যাডিয়েটর স্যান্ডেল। এ ছাড়া আছে পিপ টো ফ্ল্যাট স্যান্ডেল। বিক্রি হচ্ছে ৬৯৯ থেকে শুরু করে ৩১৯০ টাকায়। শিশুদের জন্য এ্যাপেক্সে আছে টুইংকলারের নানা রং ও ডিজাইনের স্যান্ডেল, স্পোর্টস স্যু পাম্প, লোফার। দাম ৩৯০ থেকে ১৯৯০ টাকার মধ্যে। ছেলেদের জন্য ভেনচুরিনির ফরমাল স্যুজ, লোফার ইত্যাদি পাওয়া যাবে। আছে মাভেরিকের বুট ও মোকাসিনের কালেকশন। ছেলেদের জুতা ও স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৯০ থেকে ৯৯৯০ টাকায়।
এ্যাপেক্সের বিক্রয় ব্যবস্থাপক সুজাউল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, পাঞ্জাবির সঙ্গে সাধারণত স্লিপার, স্যান্ডেলই সবাই পছন্দ করছেন। অনেকে আবার বেল্টসহ বেছে নিচ্ছেন ব্যাক বেল্ট স্লিপার। ওরিয়ন ফুটওয়্যারের কর্মকর্তা মিনহাজ আহমদ বলেন, ঈদের এ সময়ে সবাই চায় নিজেকে একটু আলাদাভাবে তুলে ধরতে। সে হিসেবে ছেলে-মেয়ে-শিশুসহ সব বয়সী সবার কথা বিবেচনায় নিয়ে ওরিয়নে থাকছে চার শতাধিক নক্সার জুতার সংগ্রহ। একই সঙ্গে ওরিয়ন এনেছে ‘এথনিক ওয়্যার’ নামে ছেলেদের জন্য বিশেষ নক্সার জুতা, যা মানানসই পাঞ্জাবির সঙ্গে। ঈদে ক্রিসেন্টে ৫০০টি নতুন ডিজাইনের জুতা বাজারে আসছে। ক্রিসেন্ট ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান এম কাদের বলেন, আমাদের সব পণ্যই চামড়ায় তৈরি। দেশেই নিজস্ব কারখানায় তৈরি। মাত্র ৬০০-৭০০ টাকার মধ্যে চামড়ার তৈরি জুতা-স্যান্ডেল ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছি আমরা। কিছু জুতা কিস্তিতে কেনা যাবে। পিওর লেদার ছাড়াও আড়ংয়ে আছে আর্টিফিশিয়াল লেদারের জুতা। আছে স্লিপার ও মেয়েদের জন্য সেমিহিল স্যান্ডেল। বিকাশের মাধ্যমে কেনাকাটা করলে ২০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফার পাওয়া যাবে এখানে।
সরেজমিনে বসুন্ধরা সিটি, বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, রাপা প্লাজা, মেট্রো শপিংমল, জেনেটিক প্লাজা, ফার্মগেট, এলিফ্যান্ট রোড ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিভিন্ন শো-রুম ঘুরে দেখা যায় চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা জুতা-স্যান্ডেলও বিক্রি হচ্ছে কম-বেশি। বড় বড় শপিংমল আর নামিদামী বিপণিবিতানের বাইরে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও আমদানিকৃত স্যান্ডেল জুতার আধিক্য। এসবের দাম গড়ে আড়াই শ’ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। রাজধানীর এলিফ্যান্ড রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও চৌরঙ্গীতে হাজার-বারো শ’ টাকায় মোটামুটি ভালমানের আমদানি করা স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম এক হাজার পাঁচ শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে এমন স্যান্ডেলের চাহিদা বেশি। আমদানি করা কেডসের চাহিদাও কম নয়। এসবের দাম এক হাজার থেকে ছয়-সাত হাজার টাকা বা এরও বেশি। ফুটপাথে আমদানি করা স্যান্ডেল, জুতা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। ঈদের ভিড় সামলে একটু বেশি লাভের আশায় ফুটপাথের দোকানিরাও এক দরে পণ্য বিক্রি করছে। ঈদ সামনে রেখে বাড়তি প্রস্তুতি রয়েছে দেশীয় ব্র্যান্ডের জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। নতুন নতুন ডিজাইনের জুতা-স্যান্ডেল বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। ব্র্যান্ডের ভালমানের স্যান্ডেল-জুতা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়।