ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হতে পারে এটাই জীবনের শেষ দিন, শেষ ঈদ

তানভীরুল আলম তোহা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:৪০, ৭ জুন ২০২৫

হতে পারে এটাই জীবনের শেষ দিন, শেষ ঈদ

আজ পবিত্র ঈদুল আযহা। বিশ্বের মুসলিম সবাই  খুব হাসি আনন্দে মেতে রয়েছেন আজকের এই দিনটায়। তবে অনেকের জীবনে হতে পারে এটাই জীবনের শেষ ঈদ, শেষ দিন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। আশেপাশের বেশিরভাগ রোগীই এরইমধ্যে মারা গেছেন, বাকিরা মৃত্যুর অপেক্ষায়। 

৫২ বছর বয়সী নূর আলম সিদ্দিক, পেশায় স্কুল শিক্ষক। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়া বাবাকে আইসিইউ তে রেখে অপেক্ষা করছেন একটু প্রশান্তির। আজ ঈদের আনন্দ সবার জন্য হলেও তাদের ঈদ আনন্দ আটকে রয়েছে এই হাসপাতালের বারান্দায়। 

অপেক্ষমান নূর আলম সিদ্দিক (৫২) বলেন, আমার বাবা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন,স্ট্রোক করেছেন। আমার বাড়ি নওগাঁ পত্নিতলা থানা এলাকায়। পরিবার গ্রামের বাসায় ঈদ করছে। বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু যেতে পারছিনা৷ আমার ও দুই ছেলে আছে কিন্তু আমার তো এখানে বাবা আছে। আমি তো আমার বাবাকে এখানে রেখে ঈদ করতে যেতে পারছিনা বলে ও জানান তিনি। 

একই ইউনিটে ভর্তি রোগীর স্বজন আকলিমা বেগম (৫৫) বলেন, বোন তিন বার স্ট্রোক করেছে। তারমাঝে একবার পড়ে গেছিলো, তারপর আবার মাথায় সেলাই করেছে এসবের জন্যই এই হাসপাতালেই আছি। 
এররকম আরও শতাধিক মানুষের ঈদ কাটছে এভাবেই। সমস্ত আনন্দ উৎসব ভুলে চেষ্টা কেবল প্রিয় মানুষদের পাশে থাকার। এরকম রোগী ফিরে পাওয়ার আশায় কাটছে স্বজনদের ঈদ। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক রোগীর স্বজন জানান,বাবার সাথে এবারের ঈদ হাসি আনন্দে কাটানোর ইচ্ছে ছিল। কিন্তু গতকাল বাবা আকস্মিক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় আইসিইউতে এডমিট করতে হয়েছে এভাবেই কাটছে এবারের ঈদ। 

এ মানুষ গুলোর পাশে যারা থেকে গেছেন তারা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। সবচেয়ে সংকটময় পরিবেশে রোগীর পাশে থাকটায় যেন তাদের ও ঈদ আনন্দ। 

অনন্তকালের যাত্রার অপেক্ষায় যারা, তাদের পাশে থাকা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যই হয়তো কবি লিখেছেন, মৃত্যু আয়, তিন পাত্তি খেলি আয়। মৃত্যু সত্য, মৃত্যু বাস্তব, এই সুনিশ্চিত মৃত্যু পথযাত্রীদের পাশে থেকেই নিজেদের ঈদ আনন্দ খুঁজে পান রোগীর স্বজনরা। 

মুমু

×