ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্ত বন্ধ করার দাবি স্থানীয়দের ॥ দুই দিনে আরও এসেছে সহস্রাধিক

রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাতে সমঝোতার পরও অনুপ্রবেশ থেমে নেই

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাতে সমঝোতার পরও অনুপ্রবেশ থেমে নেই

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ সহিংসতার মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরসহ নানা উদ্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। প্রতিদিনই বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দলে দলে সপরিবারে আসছে তারা। পাশাপাশি ফেরার ক্ষেত্রে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিরুৎসাহিত করার তৎপরতাও লক্ষ্যণীয়। দ্বিপাক্ষিক এবং জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক চেষ্টার ফলে মিয়ানমার সরকার যখন অনেকটাই নমনীয় তখনও কেন রোহিঙ্গা আসা থামছে না সে প্রশ্ন উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা এমনকি রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যেও। যেহেতু এদেশে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে সেহেতু নতুন করে আরও রোহিঙ্গা কেন আসতে দেয়া হচ্ছে সেটিও অনেকের জিজ্ঞাসা। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এখনই কড়াকড়িভাবে বন্ধ করে দেয়া উচিত বলে অভিমত অনেকের। কেননা, ভেতরে এনে ফেরত পাঠানোর চেয়ে আসতে না দেয়াটাই যৌক্তিক। এদিকে, বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই কত সংখ্যক রোহিঙ্গা এসে পড়েছে সে সম্পর্কে নানা তথ্য প্রকাশিত হলেও সবই অনুমাননির্ভর। কারণ, এর মধ্যেই নিবন্ধিত হয়ে গেছে ৬ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। নিবন্ধিত হওয়ার লাইনে রয়েছে আরও অনেকে। শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজোয়ান। তিনি জানান, গত বুধবার পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছে ৬ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালকের এ তথ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে বাংলাদেশে কত রোহিঙ্গা এসেছে? কেননা, এতদিন পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে ধারণা দেয়া হয়েছিল অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখের কিছু বেশি। তবে আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থা ধারণা দিয়েছিল যে, রাখাইন থেকে নতুন করে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৮ লাখের কম নয়। সবকিছু পরিষ্কার হবে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর। কিন্তু নিবন্ধিত হতে চায় না এমন রোহিঙ্গার সংখ্যাও কম নয়। কারণ, অনেকেই থেকে যেতে চাইবে অন্যত্র চলে যেতে বাংলাদেশকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহারের আশায়। তাছাড়া আগে থেকেই অনেক রোহিঙ্গা রয়েছে, যারা ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। নতুন আসাদের মধ্যে বিশেষ করে আত্মীয়স্বজনরা পুরনোদের সহায়তা পাচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে নিবন্ধন ॥ রোহিঙ্গারা দফায় দফায় আগে অনুপ্রবেশ করলেও নতুন করে আসা রোহিঙ্গা ঢেউ অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে। একসঙ্গে এত রোহিঙ্গা এর আগে আর আসেনি। তবে বাংলাদেশ সরকার এবার তাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় আনার প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সহজ হবে বলে মনে করছে । বাংলাদশে পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজোয়ান শুক্রবার কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এ নিবন্ধনের মাধ্যমে যে তথ্য ভা-ার তৈরি হচ্ছে তা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দু’দিনে অনুপ্রবেশ সহস্রাধিক ॥ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার দিন বৃহস্পতিবার এবং পরদিন শুক্রবার নতুন করে টেকনাফে লক্ষ্য করা গেছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ স্রোত। দুইদিনে অনুপ্রবেশ করেছে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা। এপারে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া এবং ওপারে রাখাইন রাজ্যের মংডুর দংখালী এলাকায় অনুপ্রবেশে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের ঢল দেখা গেছে। মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টায় আরএসও এবং কিছু এনজিও ॥ রোহিঙ্গা ইস্যু জিইয়ে রাখতে চায় এমন মহলও এরমধ্যে নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। তারা চায় এ সমস্যাটিকে বজায় রাখতে। কেননা, এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে যখনই আশার আলো দেখা যাচ্ছে তখনই চলছে নেতিবাচক প্রচার। আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) ক্যাডাররা এবং কিছুসংখ্যক এনজিও প্রতিনিধি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা নেতাদের শুক্রবার বলে বেড়ায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমঝোতা স্বাক্ষর হলেও ওই সমঝোতা স্মারকে প্রাধান্য পেয়েছে মিয়ানমারের সকল প্রস্তাব। এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব স্থান পায়নি।
×