ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চারুকলায় চলছে শেষ মুহূর্তের বিপুল শৈল্পিক কর্মযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

চারুকলায় চলছে শেষ মুহূর্তের বিপুল শৈল্পিক কর্মযজ্ঞ

মনোয়ার হোসেন ॥ আপন সীমানা পেরিয়ে বাংলার নববর্ষ এখন নজর কেড়েছে সারাবিশ্বের। উদ্যাপনের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে হয়েছে বিশ্বসমাদৃত। বাংলা নতুন বছরটি রাঙিয়ে দিতে ১৯৮৯ সালে লোকজ অনুষঙ্গের নানা শিল্পকাঠামো নিয়ে রাজপথে বেরিয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। সৌন্দর্যের স্বকীয়তাযুক্ত সেই শোভাযাত্রাটি ইতোমধ্যে অর্জন করেছে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি। তাই এ বছর পহেলা বৈশাখের এই আনন্দ আয়োজনটি সেজে উঠছে আরও বর্ণিল রূপে। নববর্ষের সবচেয়ে রং ছড়ানো আয়োজনটির চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে শিল্পাচার্য জয়নুলের স্মৃতিধন্য চারুকলা অনুষদে চলছে বিপুল শৈল্পিক কর্মযজ্ঞ। অপরদিকে নাগরিক জীবনে নববর্ষ উদ্্যাপন প্রথার প্রবর্তন করা রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণের আয়োজনটি এবার পদার্পণ করছে পঞ্চাশতম বছরে। ১৯৬৭ সালে স্বাধিকারের চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াসে শুরু হওয়া প্রভাতী অনুষ্ঠানটির পঞ্চাশ বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে ধানম-ির ছায়ানট ভবনে চলছে মহড়া। এছাড়া এই প্রথম সারাদেশের সরকারী-বেসরকারী স্কুলে মঙ্গল শোভাযাত্রা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বিপুল বর্ণাঢ্যে উদ্্যাপিত হবে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৪। গ্রামীণ জনপদ থেকে উঠে আসা বৈশাখী উৎসবের আবাহনে ঝলমল করছে শহর ঢাকা। এ যেন শেকড়ের কবি সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’র মতো সুন্দর। নজরুলের ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী’র মতো রূপময়। বর্ষবরণের উচ্ছ্বাসমাখা প্রস্তুতিতে বিরাজ করছে রবীন্দ্রনাথের অমর গীতবাণী ‘আনন্দালোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’। বাঙালিত্বের অহংকারের বৈভবময় এই প্রাণের উৎসবটির জন্য অপেক্ষা মাত্র আজকের দিনটি। কাল পুব আকাশে লাল রঙের সূর্যটি জেগে উঠতেই উচ্চারিত হবে প্রাণের আকৃতিমাথা সেই শব্দগুলো এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ... গানের সুর। অসাম্প্রদায়িক বাঙালীর সবচেয়ে বড় উৎসব উদ্যাপনে প্রস্তুত গোটা দেশ। প্রাণে প্রাণে বইছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। এখন শুধু বলার অপেক্ষা ‘মুছে যাক গ্লানি, মুছে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’। পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণের প্রতীক্ষায় উৎসব শুরুর আগেই পাওয়া উৎসবের বর্ণিল আবহ অনুভব করা যাচ্ছে। ঢাকার প্রায় প্রতিটি অলি-গলিতে উদ্যাপিত হবে পহেলা বৈশাখ। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে প্রস্তুত হয়েছে পাড়ার তরুণরা। হিন্দু -মুসলমানের বিষয় নয় সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাঙালী হয়েছে। বর্ষবরণ উৎসব আরও বর্ণাঢ্য ও শেকড়ঘনিষ্ঠ করতে কাজ চলছে দিন-রাত। ঘরে ঘরেও চলছে প্রস্তুতি। যে যার মতো করে ঘর সাজাচ্ছেন। পোশাক কিনছেন। সব কিছুতেই রয়েছে বাঙালিয়ানার প্রাধান্য। জাতীয় আয়োজনগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে দৃশ্যমান চারুকলা অনুষদের প্রস্তুতি। লিচুতলার সবুজ শ্যামল আঙিনায় পূর্ণতা পাচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রার নানা অনুষঙ্গ। হাতি-ঘোড়া, বাঘ থেকে শুরু করে ময়ূরপঙ্খি নাওসহ নান্দনিক সব শিল্প-কাঠামো প্রকাশিত হচ্ছে স্বরূপে। ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্তির ২৯তম শোভাযাত্রাটির প্রতিপাদ্য ‘মঙ্গলালোকে আনন্দালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’। ইতিহাসের হাতছানি দেয়া রমনা বটমূলে বর্ষবরণের ৫০তম প্রভাতী অনুষ্ঠানটি মহিমান্বিত করে রাখতে বুধবার দুপুরেও মহড়া হয়েছে ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে। ভরদুপুরে সুর ছড়িয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বাঙালী জাতিসত্তার সুন্দরতম প্রকাশটি মেলে ধরা পঞ্চাশতম এ বর্ষবরণের বিষয় ‘আনন্দ, বাঙালীর আত্মপরিচয়ের সন্ধান ও অসাম্প্রদায়িকতা’। ছায়ানটের প্রভাতী অনুষ্ঠান কিংবা চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার বাইরেও পহেলা বৈশাখের সকাল থেকে রাত অবধি বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের আয়োজনে রঙ্গিলা রূপে ধরা দেবে রাজধানী ঢাকা। সেই সূত্রে চোখে পড়েছে বিভিন্ন সংগঠনের নববর্ষকে স্বাগত জানানোর নানামুখী প্রস্তুতি। এ বছর প্রথমবারের মতো দেশের ৩০ হাজার সরকারী-বেসরকারী স্কুল-কলেজ থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই শোভাযাত্রা বের করার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারীভাবে পহেলা বৈশাখ উদ্্যাপনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় জাদুঘর ও প্রতœস্থানসমূহ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। নববর্ষে শহরবাসীর নতুন পোশাকের চাহিদা মেটানোর দৃশ্য নজরে পড়েছে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট থেকে শুরু করে বসুন্ধরা শপিং মলসহ দেশীয় ফ্যাশন হাউসনির্ভর মার্কেটগুলোয়। বুধবারও এসব বিপণিবিতানগুলোয় ছিল উৎসব উদ্্যাপনে নতুন পোশাক সন্ধানীদের তুমুল ভিড়। এর বাইরে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত হচ্ছেন লাল মলাটে বাঁধাই করা চিরায়ত হালখাতার হিসাব হাল নাগাদের তৎপরতায়। রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, র‌্যাডিসন ব্লু, ওয়েস্টিন, ঢাকা রিজেন্সি, খাজানাসহ ব্রাক, সিডিএম রাজেন্দ্রপুরের উদ্যোগে উদযাপিত হবে নতুন বছরের উৎসব। দেশের বিত্তবানদের পাশাপাশি বিদেশী অতিথিদের বাংলার সংস্কৃতি চেনানোর পাশাপাশি মুখরোচক বাংলা খাবার পরিবেশনসহ পহেলা বৈশাখে নানা আয়োজন রেখেছে এসব অভিজাত হোটেল। এছাড়া ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের উদ্যোগেও পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হবে। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও সকল উপজেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ আলোচনা সভা ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। ইউনেস্কো কর্তৃক মঙ্গল শোভাযাত্রাকে স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে গুরুত্বারোপ করে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। বটমূলে ছায়ানটের পঞ্চাশতম প্রভাতী বর্ষবরণ পহেলা বৈশাখ ভোর ছয়টা ১০ মিনিটে রাজরূপা চৌধুরীর সরোদের সুরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের পঞ্চাশতম বর্ষবরণের সূচনা হবে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা পঞ্চাশতম নববর্ষ উদ্্যাপনকে একই সঙ্গে আনন্দপূর্ণ ও তাৎপর্যময় করতে আয়োজনে থাকছে লোকগানের পৃথক পর্ব। সব মিলিয়ে ঘণ্টা দুয়েকের গান ও পাঠাবৃত্তির মূল পর্ব শেষে পরিবেশিত হবে প্রান্তিক সংস্কৃতির কথা বলা ঘণ্টা ব্যাপ্তির পালাগান। নববর্ষ উদ্্যাপনকে কেন্দ্র করে জাতীয় উৎসবে পরিণত হওয়া আয়োজনটি এ বছর দেড় ঘণ্টা বর্ধিত হয়ে চলবে প্রায় সকাল ১০টা অবধি। এছাড়া পুরো আয়োজনে ভেসে বেড়াবে পঞ্চকবির গান। গাওয়া হবে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুল প্রসাদ ও রজনীকান্ত সেনের গান। সেই সঙ্গে মানবিকতার আবাহনে গীত হবে বাউলসাধক লালন সাঁইয়ের গান। ১৪২৪ বঙ্গাব্দের বর্ষবরণে ছায়ানটের শিল্পী শিক্ষক ও শিক্ষার্থী শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হবে দশটি সম্মেলক গান। একককণ্ঠে গাওয়া হবে ১৪ গান। সব মিলিয়ে পরিবেশনায় অংশ নেবে ১৬০ কণ্ঠশিল্পী। পহেলা বৈশাখ ভোর ৬টা ১০ মিনিটের সরোদিয়া রাজরূপা চৌধুরীর সরোদের সুরে ভোরের রাগালাপে শুরু হবে আপন সংস্কৃতির পথরেখা মেলে ধরা বটমূলের ৫০তম বর্ষবরণ। গাওয়া হবে ১৯৬৭ সালের প্রথম বর্ষবরণে পরিবেশিত ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও’ গানটি। এছাড়াও বাঙালিত্বের গৌরবগাথার স্মারক এই নববর্ষের অনুষ্ঠানে সম্মেলক ও একককণ্ঠে গাওয়া হবে ‘আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে’, ‘ওরে বিষম দরিয়ার ঢেউ’, ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘ভোরের হাওয়ায় এলে ঘুম ভাঙাতে’, ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী’ ও ‘উদয়শিখরে জাগে মাভৈ মাভৈ’সহ মোট ২৪ গান। একককণ্ঠে গান শোনাবেন চন্দনা মজুমদার, খায়রুল আনাম শাকিল, মিতা হক, ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সিসহ খ্যাতিমান শিল্পীরা। সুরের আশ্রয়ে মানুষের মাঝে মঙ্গলের বারতা ছড়ানো আয়োজনটিতে গানের সঙ্গে থাকবে কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ। সব মিলিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী চলবে গান ও পাঠাবৃত্তিতে সাজানো অনুষ্ঠানটি। এরপর বৈশাখী শুভেচ্ছা কথনে মঞ্চে আসবেন ছায়ানট সভাপতি সন্্জীদা খাতুন। শুভেচ্ছা কথন শেষে খানিকটা বিরতি দিয়ে শুরু হবে বর্ষবরণের পঞ্চাশ বছর পূর্তির বিশেষ আয়োজন। বাংলার লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যের আলোয় ‘দেওয়ানা মদিনা’ শীর্ষক পালাগান পরিবেশন করবেন নেত্রকোনার দিলু বাউল। এই বিশেষ আয়োজনের কারণে ছায়ানটের এবারের প্রভাতী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান প্রায় দেড় ঘণ্টা দীর্ঘ হবে। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ‘আনন্দালোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ প্রতিপাদ্যে অকল্যাণ ও অশুভকে রুখে দেয়ার প্রত্যয়ে বটমূলে বর্ষবরণের প্রভাতী অনুষ্ঠান শেষে বের হবে ২৯তম মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় শোভা পাবে সর্বমোট ১২টি শিল্প কাঠামো। মূল শিল্প কাঠামোটি হচ্ছে ২৫ ফুট উচ্চতার সূর্যের মুখ। যার একপ্রান্তে থাকবে হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী আর অন্যদিকে থাকবে সূর্যের বিপরীতে বীভৎস কদাকার মুখ। শুভ ও অশুভÑমানুষের অন্তনির্হিত এই দুই রূপ তুলে ধরা হবে। সে সঙ্গে ছোট ছোট আরও ১৬টি হাস্যোজ্জ্বল সূর্য মুখ থাকবে। এবার শোভাযাত্রা আবার ফিরে আসছে সমুদ্রবিজয়ের স্মারক হিসেবে তৈরি করা ময়ূরপঙ্খি নাও। এই শিল্প-কাঠামোটির উচ্চতা হবে ২৫ ফুট। প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রায় ঠাঁই পাওয়া হাতি, ঘোড়া, বাঘ ও টেপা পুতুলও স্বরূপে ফিরছে এবারের আয়োজনে। এছাড়াও বিশাল কদাকার মুখের এক দানবের শিল্প কাঠামোও নির্মিত হচ্ছে, যা দিয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের কুৎসিত মুখটি আবারও তুলে ধরা হবে জাতির সামনে। এছাড়াও শোভাযাত্রায় শোভা রাজা-রানির মুখোশসহ নানা অনুষঙ্গ। সকাল ৯টায় বের হবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভযাত্রার উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিভিন্ন লোকজ অনুষঙ্গ আর বিশাল আকৃতির সব বাহন নিয়ে এ শোভাযাত্রা চারুকলার সামনে থেকে বের হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) হোটেল চত্বর ঘুরে টিএসসি প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে। হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও নববর্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে ‘সানসিল্ক হাজারও কণ্ঠে কোটি বাঙালীর বর্ষবরণ’। এ বছর অর্ধযুগে পদার্পণ করবে চ্যানেল আই ও সুরের ধারা আয়োজিত পহেলা বৈশাখের আয়োজনটি। অনুষ্ঠানটি শুরু হবে বৃহস্পতিবার বিকেলে। চৈত্র সংক্রান্তি উদ্্যাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটি শুক্রবার সকালে বরণ করে নেবে বৈশাখকে। শুক্রবার পহেলা বৈশাখে সূর্যোদয় থেকে শুরু করে বেলা ১২টা পর্যন্ত একটানা চলবে বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে সুরের ধারা ও সারাদেশ থেকে নির্বাচিত এক হাজার শিল্পীর কণ্ঠে গান, নাচসহ নানা পরিবেশনা। এর মধ্যে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে পঞ্চকবির গানসহ ছয়টি একক পরিবেশনা থাকবে। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন দেশের বিশিষ্ট রবীন্দ্র, নজরুল এবং আধুনিক গানের বরেণ্য শিল্পীরা। থাকবে ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু ও তার দল এলআরবির বিশেষ পরিবেশনা। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে সানসিল্ক বৈশাখী ফ্যাশন শো। বৃহস্পতিবার চৈত্র সংক্রান্তির বিকেল থেকে সুরের ধারার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে ‘চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব ১৪২৩’। রাত এগারোটা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত চলবে চৈত্র সংক্রান্তি অনুষ্ঠান। এবারকার চৈত্র সংক্রান্তির বিষয় ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্র’। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই। অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে বাঙালীর হাজার বছরের বিভিন্ন ঐতিহ্যের উপাদান দিয়ে সাজানো বৈশাখী মেলার হরেক রকম স্টল। স্টলগুলোতে শোভা পাবে পিঠা-পুলি, মাটির তৈরি তৈজস, বেত, কাঁথা, পিতল, পাট-পাটজাত দ্রব্যের জিনিসপত্রসহ রকমারি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ নানান পণ্য। বৈশাখে পাঁচ বিভাগীয় শহরে আল্পনা উৎসব নববর্ষ উদ্্যাপনে আল্পনার রঙে রঙিন হবে সারা দেশ। এবার ঢাকার মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ ছাড়াও ‘আল্পনায় বাংলাদেশ’ নামের উৎসবটি ছড়িয়ে যাবে দেশের পাঁচটি বিভাগীয় শহরে। ঢাকার মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ডিসি হিল, রাজধানীর পদ্মা নদীরপার, খুলনার শিববাড়ি সার্কেল, বরিশাল বঙ্গবন্ধু পার্ক রোড, ময়মনসিংহের টাউন হল সার্কেলে ‘বাংলালিংক-আল্পনায় বাংলাদেশ’ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসবের আয়োজক এশিয়াটিক ইএক্সপি, টাইটেল স্পন্সর বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেড ও সহযোগী স্পন্সর বার্জার পেইন্টস লিমিটেড। ১৩ এপ্রিল রাত এগারোটা থেকে শুরু হবে এই আল্পনা অংকন। যৌথভাবে এ আয়োজনের উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমীন চৌধুরী ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ের প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট এলাকায় আল্পনা আঁকতে যোগ দেবেন দুই শতাধিক চিত্রশিল্পী। আল্পনা আঁকাআঁকির পাশাপাশি এ আয়োজনে থাকছে বাঙালী খাবারের ফুড কর্নার, ফটো বুথ, ফেস পেইন্টিংসহ নানা আয়োজন। গান শোনাবে লোকজধারার ব্যান্ডদল চিরকুট । ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর ‘জাগো নব আনন্দে’ শুক্রবার বৈশাখী সকালে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে শিশুপার্কের পাশে নারকেলবীথি চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে ‘জাগো নব আনন্দে’ শিরোনামে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। এর উদ্বোধন করবেন অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। প্রধান অতিথি থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। সভাপতিত্ব করবেন ঋষিজের সভাপতি ফকির আলমগীর। এবারের আয়োজন উৎসর্গ করা হয়েছে কবি সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক, কবি শহীদ কাদরী, মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রম এবং পশ্চিমবঙ্গের লোকসঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যকে। ঋষিজের বর্ষবরণের ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবার চার গুণীকে সম্মাননা জানানো হবে। তারা হলেনÑ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক রথীন্দ্রনাথ রায় ও উমা খান, সাংবাদিক-গীতিকার ফকরে আলম এবং কবি নাসির আহমেদ। আয়োজনের শুরুতেই দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেবে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। এরপর অসমের শিলচরের নৃত্যদল নৃত্যায়ন নৃত্য পরিবেশন করবে। আলোচনা ও সংবর্ধনা শেষে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে একক কণ্ঠে লোকসঙ্গীত পরিবেশন করবেন মীনা বড়ুয়া, আবু বকর সিদ্দিক, অনিমা মুক্তি গোমেজ, আবিদা রহমান সেতু, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, হালিমা খাতুন। একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ফকির আলমগীর, ভারতের কমালীকা চক্রবর্তী ও অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, সুমী আক্তার, সুমী শবনম, হালিম খান ও সমর বড়ুয়া। বাউলদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ আয়োজন।
×