ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দ্য ইউনিভার্সিটি অব সিডনির গবেষণা

চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৯ নভেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে অতীতের বিভিন্ন সময়ের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে অবৈধ অগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু তাতে কমছে না চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে আসা অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহ, মজুদ ও এর অপব্যবহার। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যক্তি পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার দিক দিয়ে বিশ্বে ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৬তম। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগরীর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার জনকণ্ঠকে বলেন, অবৈধ অস্ত্র তো আছেই। আবার বৈধ অস্ত্রও অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে। কারা এগুলোর ব্যবহারকারী এবং কোথা থেকে আসছে, প্রথমে সেগুলো আমরা শনাক্ত করছি। পরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অবৈধ অস্ত্র মজুদের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অরাজনৈতিক বলে কথা নয়। অবৈধ অস্ত্র যারাই ব্যবহার করছে আইনের চোখে তারাই অপরাধী। এগুলো আমরা নজরদারি করছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মহানগর পুলিশের তথ্যানুযায়ী, নগরীর ১৬টি থানায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অতীতের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ২০১৪ সালে এসব থানাগুলোতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার বাবদ মামলার সংখ্যা ছিল ১৩১টি। এর আগে ২০১৩ সালে ছিল ১১৬টি, ২০১২ সালে ১২৬টি, ২০১১ সালে ৯৩টি, ২০১০ সালে ৫১টি এবং ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযানের মধ্যে আছে, গত ৫ আগস্ট ফটিকছড়িতে এক মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এলজি, কাটা রাইফেল, রিভলবার, এয়ার গান ও একনলা বন্দুকসহ বিপুল পরিমাণে গুলি ও কার্তুজ। এছাড়া গত ২৭ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানাধীন আইস ফ্যাক্টরি রোডে বাস্তুহারা কলোনিতে অভিযান চালিয়ে অত্যাধুনিক একে-২২ রাইফেল, এসএমজিসহ বিপুল পরিমাণে অগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এত অস্ত্র উদ্ধারে দেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কমারই কথা। কিন্তু তা কমছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি দেশে কয়েকটি জঙ্গী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যে ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে তাতে করে দেশে এখনও প্রচুর পরিমাণে অবৈধ অগ্নেয়াস্ত্র মজুদ আছে বলে ধারণা করা যায়। পুলিশ আরও জানিয়েছে, জঙ্গীগোষ্ঠী বাদেও রাজনৈতিক বিভিন্ন নেতাকর্মী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারিদের হাতেও প্রচুর পরিমাণে অবৈধ অস্ত্র মজুদ আছে। আর এসব অস্ত্র চট্টগ্রামে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংঘর্ষে ব্যবহারও হয়েছে। এমন অবস্থায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জনজীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। দ্য ইউনিভার্সিটি অব সিডনির ২০১৬ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের কাছে বৈধ-অবৈধ মিলে মোট সাত লাখ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এর অনুপাত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে দশমিক ৫টি। এর মধ্যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা হচ্ছে ৪ লাখ। গবেষণায় আরও জানানো হয়, ব্যক্তি পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার দিক দিয়ে ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৬৬তম অবস্থানে। বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের এ গবেষণা ‘গান পলিসি অর্গানাইজেশন’ নামক ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। বাংলাদেশ বাদেও বিশ্বের সবক’টি দেশের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নিয়ে তাদের এমন গবেষণা আছে। দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে দুই শতাধিক অস্ত্র ব্যবসায়ী সক্রিয় আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামেই আছে ৪০ জনের মতো। ভারত ও মিয়ানমার থেকে অস্ত্র কারবারীরা অস্ত্র দেশে সরবরাহ করছে। এছাড়া চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে অগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হচ্ছে।
×