ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মজৈবনিক ॥ কি যেন হারিয়ে এলাম

প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

আত্মজৈবনিক ॥ কি যেন হারিয়ে এলাম

মাকিদ হায়দার ॥ ছিমছাম ছোট শহরের যে এলাকাটিতে আমাদের বাড়ি ছিল সেই এলাকাটির নাম জিলাপাড়া। এই জিলাপাড়াটি তখনকার দিনে কয়েক ঘর হিন্দু-মুসলমান বিশেষত সুবল ধোপা গায়ক সন্তোষ দা এবং আমাদের বাড়িতে নিয়মিত মিষ্টি সাপ্লাই করত যে ঘোষ বাবুটি এরা সকলেই এই পাড়াতেই যে থাকতেন এমনটি নয়, কেউ কেউ হয়ত দিলালপুরে, গোপালপুরে, কিংবা লাহিড়ীপাড়ায় থাকতেন, তবে সুবল ধোপা যে আমাদের পাড়াতেই থাকতেন সে কথা এখনও মনে আছে। মনে থাকার প্রধান কারণ, সুবল ধোপাকে প্রায়ই দেখতাম আমাদের বাড়ি থেকে গাদা গাদা কাপড় নিয়ে যেতে এবং ধুয়ে কয়লায় ইস্ত্রি দিয়ে সেগুলোর সুন্দর পরিপাটি করে বাড়িতে দিয়ে যাওয়ার সময় আমার মাকে প্রায়ই বলতেন, আমাকে দেখিয়ে, কাকিমা আপনার ছেলেটি ভীষণ দুষ্ট। কেন বাবা সুবল কি হয়েছে? আমরা যেখানে ধোয়া কাপড়গুলো শুকাতে দেই সেই মোহাম্মদ ড্রাইভারের বাড়ির পূর্ব দিকের মাঠ, সেই মাঠের ভেতর দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে দু-তিনটা আধাভেজা-আধা শুকনা শাড়িগুলোর ওপর দিয়ে আপনার ছেলে প্রায়ই দৌড় দিয়ে কখনও ঢুকে পড়ে মোহাম্মদ ড্রাইভারের বাড়িতে, আবার কখনও সোজা চলে আসে এই বাড়িতে। কাকিমা যদি রোকনকে একটু শাসন করতেন। সুবল ধোপার বাড়িতে জেলা স্কুলের শিক্ষক আবদুল আজিজ বাস করতেন। আমি আমার মায়ের পেছনেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম সুবল ধোপার অভিযোগ, অভিযোগগুলো সত্য, মা সুবলকে আশ্বস্ত করলেন দুষ্ট ছেলেটিকে নিয়ে আর পেরে উঠি না, তয় বাবা তোমাকে আমি ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই আট আনা দিলাম তোমার তো শাড়িগুলো কাচতে সাবান লেগেছিল তাই ওই আট আনা পয়সাই আমার মায়ের কথা শেষ করার আগেই সুবল দা মাকে বললেন- কাকিমা আমরা পাবনা ছেড়ে কলকাতায় মানে ইন্ডিয়ায় চলে যাব, আর ওই আট আনা পয়সা তখন অবশ্যই নেব, নিয়ে আমার মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত কাছে রেখে দেব এবং ভাবব, আমাদের ফেলে আসা পাবনা শহরের জিলাপাড়ার হাকিম কাকি আমাকে আট আনা পয়সা দিয়েছিল তারই ছেলে রোকনের দুষ্টমির ক্ষতিপূরণ হিসেবে। দেখলাম হঠাৎ করেই সুবল ধোপা বাচ্চা ছেলেদের মতো কেঁদে ফেলে বললেন, বাড়ির সব বেচাকেনা শেষ হয়ে গিয়েছে যে কোন রাতে, দিনে, আমরা চলে যাব, যাবার আগে রোকনের নামে যে অভিযোগ করলাম, তার জন্য আমার খারাপ লাগছে। বেশ কিছুক্ষণ সুবল দা কথা বলতে পারলেন না। মাঝখানে দেখলাম বারদুয়েক চোখ মুছলেন এবং যাওয়ার সময় যেন হঠাৎ করেই বললেন- রোকন কোন্ স্কুলে পড়ে? মা বললেন, এই তো কিছুদিন আগে, কসিমুদ্দিন মৌলানা সাহেবই ওকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলা স্কুলে ভর্তি করেছে ক্লাস থ্রিতে। আমার মায়ের কথা শেষ হতেই সুবল ধোপা যেন হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলেন আমি আমার মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আমাকে দেখতে পেয়ে বললেন রোকন তুমি ভাল করে লেখাপড়া করবে, যত লেখাপড়া করবে, তত বড় হবে, তারপর যদি আমাদের মাঠে মেলে দেয়া কাপড়গুলো পা দিয়ে মাড়িয়ে দাও, সেবার আমি কিন্তু কাকা বাবুকে বলে দেব। আরও অনেকগুলো শাড়ি, পাজামা, পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট নিয়ে সুবল ধোপা এগিয়ে গেল তৎকালীন সিভিল সাপ্লাই অফিসের দক্ষিণ দিকে, তাদের নিজ বাড়ির দিকে। ক্লাস ফোরে ওঠার কিছুদিন পরেই আমাদের জিলাপাড়ার বাড়িতে দেখি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটল। আমাদের বাড়ির পূর্ব-উত্তর দিকেই থাকতেন গফুর সাপুড়ে, তিনি পাবনা জজকোর্টের সামনে সাপের খেলা দেখাতেন, আর বিভিন্ন রোগের ওষুধ বিক্রি করতেন। ওষুধ বিক্রির আগে গফুর সাপুড়ে তার বাক্সের ভেতর থেকে দুটো সাপ, মানুষের কিছু হাড় এবং একটি মরা মানুষের মাথা বের করে হাতের ছোট ডুগডুগিটা যখন ছেলে আব্দুল বারেকের হাতে তুলে দিয়ে বাজাতে বলতেন নেচে নেচে, বারেক নেচে নেচে তার হাতের ডুগডুগিটা যখন বাজাতে শুরু করত তখনই কিছু লোক, বিশেষত যে সব লোকজন বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ থেকে মামলা মোকদ্দমার জন্য জজকোর্টে আসতেন, কোবাদ মিষ্টিওয়ালার দোকানে মিষি খেতেন এবং আট আনা ১ টাকা দিয়ে ঘড়ি-চশমা ঠিক করতেন লিলি স্টোরের মালিক আফতার মিয়ার বাপের দোকান থেকে। তারাই নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে ক্রেতা হয়ে ওষুধ মাদুলী কিনতেন গফুর সাপুড়ের নিকট থেকে এবং তাদের বাড়তি পাওনা হিসেবে তারা দেখতেন সাপের খেলা। ছেলে সাপটির না গফুর সাপুড়ে দিয়েছিল দিলীপ কুমার। আর মেয়ে সাপটির নাম ছিল, মধুবালা। পাবনা জিলা স্কুলে দক্ষিণ দিকেই পাবনা জজকোর্ট। এই জজকোর্টের আরও একটু পশ্চিমে পুলিশদের বেড়িয়াল গ্রাউন্ড, সেই বেড়িয়াল গ্রাউন্ডের দক্ষিণ দিকে আছে আরও একটি স্কুল। এই স্কুলটির নাম গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউশন। আমরা যারা ক্লাস থ্রি-ফোরের ছাত্র ছিলাম, টিফিন হলেই দল বেঁধে চলে যেতাম গফুর সাপুড়ের সাপের খেলা দেখতে, আমাদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় ছিল সেই মরা মানুষটার মাথা। সাপুড়ে যে খেলাটি দিয়ে তার দিনের কার্যক্রম শুরু করতেন সেটি এখনও আমার খুবই মনে আছে, আব্দুল বারেক ডুগডুগি বাজিয়ে যখন প্রায় বিশ ত্রিশ জন শ্রোতা এবং ক্রেতাকে জড়ো করতেন, ঠিক তখনই গফুর সাপুড়ে একটা চিকন সুতার ভেতরে ওই মরা মানুষের মাথাটিকে বা খুলিটাকে খুবই সুকৌশলে পরিয়ে দিয়েই, তিনি খুবই উচ্চৈঃস্বরে মন্ত্র পড়তে পড়তে, একসময় সেই মাথার খুলিটাকে হুকুম করতেন। তুমি যারই ছেলে হও- বাবা, ভাই, কাকা, মামা, যাই হও না কেন, এই গফুর সাপুড়ের হুকুম তোমাকে শুনতেই হবে, এই পাবনা শহরের জজ, দারোগা, আমার হুকুম শোনে, আর তুমি না শুনে যাবে কোথায়, বলেই তিনি হুকুম করতেন তার হাতে ধরা সুতার মাথার সেই খুলিটাকে। যাও বাবা আমার হাতের নিচ থেকে নেমে সুতার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ো, সত্যিই দেখতাম, সেই কার বা কার মাথার খুলি ঠিকই সেই হাতে ধরা সুতার মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে পড়তো, অথচ সেই সুতার মাঝে কোথায়ও কোন গিট দেয়া ছিল বলে আমার সহপাঠীদের কারোই কখনও মনে হয়নি, শুধু ঐটুকু খেলা দেখার লোভেই আমরা জনাকয়েক টিফিন আওয়ারে চলে যেতাম জজকোর্টের উত্তর দিকের সেই ছোট পরিসরের জায়গাটিতে। মধ্য পঞ্চাশে কিংবা কিছু আগে থেকেই পাবনা জিলা স্কুলে একটি নিয়ম ছিল, প্রতি ছাত্রকে সারা মাসে ৮ আনা পয়সা জমা দিতে হতো দুপুরের টিফিনের জন্য। সেই ৮ আনার বিনিময়ে আমাদের মিলতো সিঙ্গাড়া-বিস্কুট, মাঝে মাঝে বিস্কুটসহ লক্ষ্মী ঘোষের ১ আনা দামের রসগোল্লা, কি অন্য কোন দোকান থেকে জিলাপি। আমরা কয়েকজন সেগুলো স্কুলে না খেয়ে হাফ ইংলিশ প্যান্ট আর মাঝে মাঝে *ইজার প্যান্টের পকেটের ভেতরে লুকিয়ে নিয়ে চলে যেতাম, আব্দুল বারিকের নাচ, আর তার বাবার সাপ খেলানোসহ মাথার খুলিটাকে কিভাবে তিনি নিচে নামাতেন তাই দেখতেন। তখন খুব সম্ভবত কাছারিপাড়ার পশ্চিম দিকে, ইছামতি নদীর ধারে দোতলা একটি বাড়িতে থাকতেন আমাদের জিলা স্কুলের হেড মাস্টার সদরউদ্দিন আহমেদ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে মারদহ মুর্শিদাবাদ, কলকাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে আমাদের মতো অবোধ বালকদের সুবোধ করার দায়িত্ব তিনি নিয়েছিলেন, যেমন নিয়েছিলেন পাবনা জিলা স্কুলের এই গুরুভার। তিনি কিন্তু কিছু দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছিলেন সহকারী হেড মাস্টার আব্দুল জব্বার, আর সত্যেন পালের ওপর এবং আরো একজন শিক্ষকের ওপর, যিনি পাবনা শহরের সবচেয়ে খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, যাকে দেখলে যে কোন স্কুলের ছাত্রদের বুকের কম্পন শুরু হয়ে যেত, তার নাম মৌলানা কসিমউদ্দিন আহমেদ। নামের আগে মৌলানা টাইটেল, মাথায় জিন্নাটুপি থাকলেও উল্লাপাড়া নিবাসী জিলাস্কুলের সেই কসিমউদ্দিন আহমেদকে যদিও পরবর্তীতে আইয়ুব খান তাঁকে তমঘায় এ খেদমত। *খেতাব দিয়েছিলেন সেই তিনিই ছিলেন সর্বাধুনিক মানুষ। তার ওপরে দায়িত্ব ছিল, তার নিজের পাড়া, জিলাপাড়ার কোন ছেলেই যেন জিলা স্কুল ছাড়া অন্য স্কুলে ভর্তি না হয়। এই নির্দেশটা ছিল দিলালপুরের সহকারী হেড মাস্টার সত্যেন পালের উপরেও। নির্দেশক ছিলেন, হেড মাস্টার সদরউদ্দিন আহমেদ। ওই নির্দেশের আওতায় আমি পড়েছিলাম বলেই আমাদের বাড়ির সামনে থেকে, আমাকে প্রায় জোর করেই ধরে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করালেন তার প্রিয় স্কুলে এবং সেই তিনিই যখন, গফুর সাপুড়ের সাপের খেলা দেখা মগ্ন জনাকয়েক ছাত্রের ভেতরে আমার কানটি সযত্নে ধরে বেশ বার কয়েক টানাটানি করে বললেন, স্কুলে যা আমি তোদের বাবা মার কাছে যাচ্ছি। প্রচন্ড কানডলা, তার চেয়েও বেশি হলো ভয়, আব্বাকে যদি সত্যিই বলে দেয়, কিংবা জিয়া ভাইকে অথবা রশীদ ভাইকে তাহলে কপালে কিছু না কিছু জুটবেই। আমার কান ছেড়ে দিয়ে হঠাৎ করেই হেড মৌলানা স্যার, ডুগডুগি বাজানো আব্দুল বারেকের কান দুটি ধরে প্রায় চিৎকার করেই বললেন, গফুর মিয়া তুমি এই * [ফিতাওয়ালা প্যান্টকে বলা হয় ইজের প্যান্ট, বোতাম লাগানোগুলোকে বলা হতো ইংলিশ প্যান্ট] * তমঘায়ে খেদমত উপাধিটি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর প্রত্যাখ্যান করেন মৌলানা কসিমউদ্দিন আহমেদ। ছেলেটিকে স্কুলে না দিয়ে সাপুড়ে বানাতে চাও? বারেককে সঙ্গে না নিয়ে এলে, ডুগডুগি না থাকলে... রাখো তোমার ওসব কথা, যদি জিলা স্কুলে দিতে নাও পারো, ওই গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে ভর্তি করিয়ে দাও, অন্তত অক্ষর জ্ঞান কিছু তো হবে। আব্দুল বারেকের কান ছেড়ে দিয়ে কোন কথা না বলে তার প্রিয় হারকিউলেক্স সাইকেলটি চালিয়ে তিনি স্কুলের দিকে এগিয়ে গেলেন, নাকি আব্বার কাছে নালিশ দিতে গেলেন, সেই ভাবনাটাই খুব পেয়ে বসেছিল। ক্লাসে ফিরে এলাম আমারই ফুফাত ভাই বাচ্চু (ফুটবলার)সহ কাছারিপাড়ার কামাল সাধুপাড়ার তবিবর, আর ঘোষপাড়ার সুমন ঘোষ, স্বপন ঘোষ জিজ্ঞেস করল, কানে খুব ব্যথা পেয়েছিস নাকি? স্বপনের কথার উত্তর না দিয়ে ওপর সঙ্গে কথা বলিনি, বলিনি বাচ্চুর সঙ্গে, কথা বলিনি তবিবরের সঙ্গে, কারণ আজকে আমি ওই গফুর সাপুড়ের সাপের খেলা দেখতে যেতে চাইনি, কিন্তু ওদের উৎসাহে যদি না যেতাম তাহলে আমাকে হেড মৌলানা স্যারের হাতে কানমলা খেতে হতো না, খেতে হতো না বাড়ি এসে রশিদ ভাইয়ে হাতের পিটুনি। ঠিক সেই রকমের চেয়েও বেশি পিটুনি দিয়েছিলেন বেশ বছরখানেক পরেই, আমার আব্বা ডুগডুগি বাজানো, গফুর সাপুড়ের একমাত্র পুত্র সেই আব্দুল বারেককে। ভোররাতে আব্দুল বারেক আমাদের দোতলা বাড়িতে চুরি করতে এসেই ধরা পড়ে গেল আব্বার হাতে, প্রাথমিকভাবে দুটি চারটে কিল-ঘুষি দেয়ার পরেই, খবর দেয়া হলো বারেকের বাবা গফুর সাপুড়েকে, তিনি এবং তার কয়েক আত্মীয় সেই ভোর বেলাতে এসেই আব্বার হাত-পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে যা বললেন, তার অর্থ, খুবই সহজ-সরল, বারেককে যেন পুলিশের হাতে তুলে দেয়া না হয় নেহায়েত অপরাধ জানি, তাও চুরির মতো অপরাধ যখন করতে এসে ধরা পড়ে, সে কিল-ঘুষি-লাথি খেয়েছে, তারপরে যদি বারেককে থানায় দিয়ে দেন, তাহলে তো থানা হাজতে দুই চার মাস জেল তো হবেই, আর তখনই সাপ খেলা দেখানো, সাপের তাবিজ, ভয় পাওয়ার তাবিজ বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চালাই, তার পরে যদি ওই হারামজাদাকে থানা পুলিশে দেন। গফুর সাপুড়ে নিজের কথাকে আর সামনের দিকে এগুতে দেয়নি, তার আগেই আমার আব্বার পা দু’খানা এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছিল, যেন গফুর সাপুড়ের পোষা সাপই আব্বার পা দু’খানা পেঁচিয়ে ধরেছিল, আব্বা বোধহয় অনেক চিন্তুভাবনা করেই বারেককে থানা পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে, সে যাত্রায় পাড়ার বয়স্ক-প্রতিবেশীদের কথা রেখেছিলেন। আমার মেজ চাচার মেজ ছেলে বাদশা ভাই, তখন আমাদের জিলাপাড়ার বাড়িতে থেকে গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে পড়তেন, ওই স্কুলে রশিদ ভাই এবং আমার মামার একমাত্র ছেলে মোগল ভাইও পড়তেন, যদিও সেই সময়ে আমাদের বাড়িতে একজন জায়গির মাস্টার ছিলেন, তার নাম ছিল মোহাম্মদ শাজাহান। শাজাহান ভাইয়ের বাড়ি ছিল পাবনা শহরের ১২ মাইল পূর্বের দিকে আতাইকুলা নামক যে হাটটি আছে তারই উত্তরে লক্ষ্মীপুর গ্রামে। তখনকার দিনে বিশ্বাস কোম্পানির খাঁচাওয়ালা একখানা বাস সারাদিনে পাবনা শহর থেকে কাঁচা-পাকা রাস্তা দিয়ে পুষ্পপাড়া, জালালপুর, আতাইকুলা হয়ে চিনেখরা পর্যন্ত ছিল তার গন্তব্যস্থল। যেত সকালের দিকে, সারাদিনে ওই একখানা বাসই ফিরে আসত সন্ধ্যার দিকে। (চলবে)
×