ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার এমন ৭ উপকারিতা—যা জানলে প্রতিদিনই খালি পায়ে হাঁটবেন

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ২৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:৪৫, ২৯ জুন ২০২৫

ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার এমন ৭ উপকারিতা—যা জানলে প্রতিদিনই খালি পায়ে হাঁটবেন

ছবি: সংগৃহীত

সকালের নরম ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার যে অনুভূতি, তা এক ধরনের অদ্ভুত প্রশান্তি দেয়। মনে পড়ে যায় শৈশব, উন্মুক্ত মাঠ, আর একটুখানি সহজ জীবন। কিন্তু কেবল নস্টালজিয়া নয়, ‘আর্থিং’ বা ‘গ্রাউন্ডিং’ নামে পরিচিত এই অভ্যাসটি ধীরে ধীরে স্বীকৃতি পাচ্ছে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক মহলে। কেউ বলেন এটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা, আবার কেউ কেউ এটিকে নিছক কুসংস্কার বলেই মনে করেন। কিন্তু বাস্তবে যখন আমাদের পায়ের তলা সরাসরি মাটিকে স্পর্শ করে, তখন শরীরে আসলে কী ঘটে?

বিজ্ঞানও এখন এই নিয়ে গবেষণায় আগ্রহ দেখাচ্ছে, আর প্রকৃতি তো সবসময়ই নীরব ভাষায় কিছু না কিছু শেখায়। চলুন জেনে নিই, ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার ৭টি মূল উপকারিতা—যা অনেকেই বিশ্বাস করেন এবং যেটি বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত হতে শুরু করেছে:

১. সকালের শিশির প্রদাহ কমাতে সহায়ক

যদিও শিশিরের নিজস্ব কোনো ওষধিগুণ নেই, তবে এটি পায়ের তলায় ঠান্ডা অনুভূতি তৈরি করে যা রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাটি স্পর্শ করার মাধ্যমে শরীর নেতিবাচক ইলেকট্রন শোষণ করে, যা মুক্ত রেডিক্যালকে নিরপেক্ষ করে এবং প্রদাহের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

২. শরীরের জৈবিক ঘড়ি পুনরায় সঠিক করে

এটি নিছক পুরনো বিশ্বাস নয়। সরাসরি মাটির সংস্পর্শ শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম বা দেহঘড়িকে সমর্থন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থিং বা গ্রাউন্ডিং কর্টিসল হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে—যা মানসিক চাপ কমিয়ে রাতে ভালো ঘুম ও দিনে স্থিতিশীল মেজাজ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৩. পায়ের পাতার একুপ্রেশার পয়েন্ট সক্রিয় করে

আধুনিক রিফ্লেক্সোলজি ও একুপ্রেশার থেরাপিও এই বিশ্বাসের সঙ্গে একমত। আমাদের পায়ের পাতায় এমন কিছু নার্ভ পয়েন্ট রয়েছে যেগুলো যকৃত, কিডনি ও হৃদপিণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। অসমতল ঘাসে হাঁটার ফলে এই পয়েন্টগুলোতে হালকা চাপ পড়ে, যা অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।

৪. মেজাজ ভালো করে ও প্রাকৃতিকভাবে উদ্বেগ কমায়

প্রকৃতি কেবল সতেজতাই আনে না, এটি মানসিক চাপও কমায়। নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটলে উদ্বেগের লক্ষণ হ্রাস পায় বলে গবেষণায় জানা গেছে। মাটির ইলেকট্রন আমাদের নার্ভ সিস্টেমে (বিশেষ করে প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু) ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা শরীরকে স্বস্তিতে রাখে। সবুজ ঘাসের দৃশ্যত সৌন্দর্যও মন শান্ত করে।

৫. জুতায় নিষ্ক্রিয় থাকা ক্ষুদ্র পেশিগুলো সক্রিয় করে

জুতা, বিশেষ করে সানন্দ আরামদায়ক জুতা, পায়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া বাধাগ্রস্ত করে। ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার সময় এমন অনেক ছোট পেশি সক্রিয় হয়, যেগুলো সাধারণত নিষ্ক্রিয়ই থেকে যায়। নিয়মিত অনুশীলনে এটি পায়ের খিলান (arch) শক্ত করে, ভঙ্গিমা বা পোস্টার উন্নত করে এবং পা-সংক্রান্ত ছোটখাটো ব্যথা বা আঘাতের ঝুঁকি কমায়।

৬. হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে

এটি শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, গবেষণা বলছে—গ্রাউন্ডিং হার্ট রেট ভ্যারিয়েবিলিটি (HRV) উন্নত করে, যা হৃদস্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। সরাসরি মাটি ছোঁয়ার মাধ্যমে শরীরের বৈদ্যুতিক চার্জ রক্তপ্রবাহ এবং রক্তের ঘনত্বে প্রভাব ফেলে। এটি হৃদস্পন্দনকে আরও স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হতে পারে।

৭. ব্যস্ত ও উদ্বিগ্ন জীবনে মানসিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে

স্ক্রিন ও স্ট্রেসে ভরা এই যুগে গ্রাউন্ডিং একটি নিরব ধ্যানের মতো কাজ করে। ঘাসের প্রতিটি পাতার স্পর্শ, মাটির টেক্সচার, সকালের পাখির গান—সব মিলিয়ে এটি একধরনের সংবেদনশীল সচেতনতা সৃষ্টি করে। কোনো অ্যাপ বা জটিল টেকনিক ছাড়াই এটি মনকে থামায়, গভীরভাবে বর্তমান মুহূর্তে টেনে আনে। প্রকৃতি-ভিত্তিক থেরাপির অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে, এই অভ্যাস ফোকাস বাড়ায়, হতাশা কমায় এবং বয়স্কদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

খালি পায়ে ঘাসে হাঁটা যেন আধুনিক জীবনের মাঝে এক টুকরো সহজ স্বাস্থ্য চর্চা। এটি শুধু শরীর নয়, মনকেও ছুঁয়ে যায়—প্রাকৃতিকভাবে, প্রতিদিন।

আবির

×