ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাস

মধুমাসের মিষ্টি ফল

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৬ জুন ২০১৬

মধুমাসের মিষ্টি ফল

চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস, এ মাসের নাম, রূপ ও বৈশিষ্ট্যে রয়েছে আলাদা বৈচিত্র্য। গ্রীষ্মের উষ্ণ ও শুষ্কের মাস এটি, যেমনি তাপ তেমনি তার প্রভাব, সবুজ প্রকৃতি প্রাণিকুল জ্যৈষ্ঠর তাপে কখনও লাল কখনও বিবর্ণ হয়ে যায়। প্রকৃতির রঙ বদলানোর জন্যও এই মাস বিশেষভাবে পরিচিত। বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে বিচিত্র নামও রয়েছে জৈষ্ঠ্যের। মধুমাস, গ্রামীণ জনপদে আম, কাঁঠাল, পাকার মাস আবার কোথাও কোথাও ফলের মাস নামেও পরিচিত। গাছের অপরিপক্ব সবুজ কাঁচা আম বা বৃহৎ আকৃতির কাঁচা কাঁঠাল কিংবা লিচু জামের মতো সব কাঁচাকে পাকতে জৈষ্ঠ্যের প্রভাব বেশ প্রবল। মধু মাসের শুরুতে পাকতে শুরু করে বিভিন্ন মৌসুমী ফল। আর এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে মৌসুমী ফলে ছেঁয়ে যায় বাজার। এখন জৈষ্ঠ্যের পরন্তকাল। বছরের অন্য যে কোন মাস বা সময়ের তুলনায় পাকা ফল খাওয়ার উত্তম সময় এখন। এ মাসের আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতি গ্রীষ্মম-লীয় হওয়ায় ফল পাকার জন্য বেশি সহায়ক। বাহারি ফলে বাজার এখন সয়লাব, উৎপাদন, যোগান সরবরাহ বা ভোগ যাই বলুন সব মিলে মৌসুমী ফল এখন সুলভ ও সহজলভ্য। আম কাঁঠাল, লিচু, জাম, জামরুল, তরমুজ, বাঙ্গি, আতা, বিলাতিগাব, ডেউয়া আরও কত ফল যে, এখন বাজারে সচরাচর, কিনতে গেলে চোখে পড়ে, বাজারে না গেলে বিশ্বাসই হবে না। বাজারের দৃশ্যপটও গেছে বদলে, সারা বছর যেসংখ্যক ফলের দোকান রাজধানীতে দেখা যেত মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দোকানের সংখ্যাও এখন বেড়ে কয়েকগুণ অবশ্য বেশিরভাগই অস্থায়ী। সময়টা এখন ফল উৎসবের! ফল খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ নেই বললেই চলে! বেশি দাম বা কম সবরাহের কারণে বছরের অন্য সময় যারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফল কিনতে বা খেতে পারে না, তারা কিন্তু জ্যৈষ্ঠের এই সময়য়ে কিনতে মোটেও কম কিনছেন না। অনেকে অফিস শেষে কৌতূহল নিয়ে বাজারে যাচ্ছে আর তিন চার রকমের ফল নিয়ে বাড়ি ফিরছেÑ কেবল রাজধানী নয় দেশের সর্বত্র মৌসুমী ফলের ক্রয়-বিক্রয় এখন ব্যাপক। আম, কাঁঠাল আর লিচুই বলেন, মৌসুমের সব ফলই দেশের সব অঞ্চলে বেশ ভাল ফলে তবে অঞ্চল ভেদে ফলন ও জাতের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে, বাজারের বেশিরভাগ আম ও লিচুর জন্য উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি জেলা প্রসিদ্ধ বিশেষ করে রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর দিনাজপুর। এ অঞ্চলের আম ও লিচুর ফলন এবং জাত অন্য অঞ্চলের থেকে আলাদা স্বাদ ও ভিন্ন। এছাড়া যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ জেলাগুলোতেও এসব মৌসুমে ফলের বেশ ভাল ফলন দেখা যায়। ফলের এই মহাসমারহ অল্প সময়ই বাজারে লক্ষ্য করা যায়, যে কারণে দামও তুলনামূলক কম। আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, জামরুল ইত্যাদি প্রায় সব মৌসুমী ফলের এখন সমারহ। আম স্বাদে ও গুণে ফলের রাজা, খেতেও মজা তাই অন্যান্য ফলের তুলনায় বিক্রয়ও বেশি, রাস্তা-ঘাট গোলির মুখ এমনকি পাড়া-মহল্লায় ও ফেরি করে অস্থায়ী বিক্রি হচ্ছে আম। আমের একাধিক জাত ও স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় অনেক দোকানে কেবল আম-ই বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে কোন কোন দোকানে ৬-৭ জাতের বা তাঁর বেশি আম রয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী সুরমা ফজলি, লেংড়া (লেংড়ার অবশ্য ছোট বড় দুই জাতের আম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে দামও আলাদা) এছাড়া আম্রপালি, গোপালভোগ, হিমসাগর, মোহনভোগ সচরাচর ভিন্ন ভিন্ন দামে বাজারে বিক্রয় হচ্ছে। ফুটপাথ থেকে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি লিচু, কাঁঠাল, জাম সঙ্গে অন্যান্য ফলও বেশ বিক্রয় হচ্ছে। লিচু ২০টা (এক কুড়ি) ৫০টা এবং ১০০টা পিস হিসেবে বিক্রয় হচ্ছে, বাজারে এখন দুই জাতের লিচু পাওয়া যাচ্ছে দেশী ও বোম্বাই লিচু প্রতি ১০০ দেশী ৩০০ টাকা বোম্বাই ৪৫০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। কাঁঠাল সাইজের ওপর নির্ভর করে ১২০-২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন জাতীয় ফল এবং জাম আঙ্গুরা ও বোম্বাই জাতের বিক্রয় হচ্ছে- ৮০-১১০ টাকার মধ্যে। অনেকে অবশ্য রাজধানীতে বিক্রি করা ফল এ কেমিক্যালের ভয়ে না কিনে সরাসরি রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগান থেকে কিনে নিয়ে আসছে, তবে রাজধানীর অনেক জায়গায় অস্থায়ী কেমিক্যালমুক্ত ফল বিক্রয় করতে দেখা যাচ্ছে। বেড়াতে যাওয়া কিংবা অতিথি আসা সামাজিকতার প্রায় সব ক্ষেত্রেই এখন ফলের কদর অগ্রগণ্য। এমন কি বিভিন্ন উৎসব যেমন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জামাই ষষ্ঠিসহ অন্যান্য আয়োজন এই মৌসুমী ফলকে কেন্দ্র করে উদ্যাপন করা হচ্ছে। গ্রীষ্মের অস্বাভাবিক বাজে ওয়েদারে শরীর সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে অন্য যে কোন খাবারের তুলনায় মৌসুমী ফলের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। জ্যৈষ্ঠ যেমন উষ্ণতা ছড়ায় তেমনি মিষ্টি মধুর রসাল স্বাদও ছড়ায়। ছবি : পলাশ বিশ্বাস মডেল : ডলার ও সুমি
×