ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট তৈরি করে পড়া

চাকরি বাজার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:২৭, ২৭ জুন ২০২৫

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট তৈরি করে পড়া

৪১তম বিসিএস থেকে টানা ৫টি বিসিএস এ প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সাবিনা ইয়াছমিন স্বর্ণা। বর্তমানে তিনি শেরপুর সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ৪৩তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে গেজেটভুক্ত হয়েছেন তিনি।
স্বপ্নকে ছুঁতে হলে ধৈর্য ধরে তার পিছনে ছুটতে হয়, স্বর্ণাও ছুটেছেন। তার জন্য প্রথমেই তিনি পিএসসির বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস বিশ্লেষণ করে বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন। এরপর সাবজেক্ট ভাগ করে পড়েছেন। সব বিষয় কখনই তিনি একসঙ্গে পড়তেন না, প্রতিদিন দুই/তিনটি সাবজেক্ট করে পড়েছেন। আবার কিছুদিন পরপর রিভিশন দিয়েছেন যাতে ভুলে না যান। স্বর্ণা বলেন, ‘আমার মুখস্থ করার ক্ষমতা কম, তাই একই বিষয় বারবার পড়েছি, যাতে মনে থাকে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা নোট খাতা বানিয়েছিলাম। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে পড়তাম।’
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলায় আমি বরাবরই ভালো ছিলাম। তাই বাংলা সবকিছু পড়েছি। কিছু বিষয় পিএসসির সিলেবাসে নেই, কিন্তু প্রশ্ন হয়। তাই সেগুলোও পড়েছি।’ ছোটবেলা থেকে গল্প-উপন্যাস পড়ার সুবাদে সাহিত্যে বরাবরই ভালো ছিলেন স্বর্ণা। তাই বাংলায় বাড়তি সময় দেওয়ার দরকার হয়নি। তবে ইংরেজি ব্যাকরণে কিছুটা দুর্বলতা থাকায়, আর মুখস্থ করার ক্ষমতা কম থাকায় তিনি ভোকাবুলারি নিয়ে সময় নষ্ট করেননি। শুধু বিগত পরীক্ষার কিছু ভোকাবুলারি পড়তেন। ইংরেজি সাহিত্যেও ভালো থাকায় ইংরেজিতে উৎরে যান। স্বর্ণা বলেন, আমি আমার বিসিএসের প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি শুরু করি ইংরেজি সাহিত্য দিয়ে।
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পর্কে স্বর্ণা বলেন, ‘উদ্ভট সাধারণ জ্ঞান কখনো পড়িনি। আর পরীক্ষার তারিখ দেওয়ার পর কখনো সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পড়তাম না। পরীক্ষার দেড়/দুই মাস আগের কোনো সাম্প্রতিক পরীক্ষায় আসে না, তাই ওগুলো পড়তাম না। বিশেষ কোন সাম্প্রতিক ঘটনা ছাড়া এই বিষয়ে বেশি সময় নষ্ট করতাম না। কারণ আমার মুখস্থ করার ক্ষমতা কম। তাই নিজেকে প্রেশার দিতাম না। এছাড়া ভূগোল, নৈতিকতা ও সুশাসন এই ছোট ছোট বিষয়গুলো আমি মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। তাই বরাবরই আমি এগুলোতে ভালো নাম্বার পেতাম।’ 
তিনি বলেন, ‘মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ায় আইসিটি আর বিজ্ঞানে দুর্বল ছিলাম। তাই কখনো এই দুই বিষয়ের গভীরে গিয়ে পড়াশোনা করিনি। এই দুই বিষয়ের প্রশ্ন রিপিট হয় প্রচুর। যখন বুঝে যেতাম এই টপিকটা অনেক পড়লেও আমি পারব না, তখন টোটালি বাদ দিয়ে দিতাম। এতে স্ট্রেস কমে যেত।’ 
গণিত ও মানসিক দক্ষতা বিষয়ে স্বর্ণা সবশেষে উত্তর করতেন। মানসিক দক্ষতা মোটামুটি সহজ হয়, তাই সহজেই ১২/১৩ নম্বর পাওয়া যায়। আর গণিত অংশ সহজ হলে মধ্যমানের যারা, তারাও ৮/১০ পেয়ে যায়। মানবিকের শিক্ষার্থী হওয়ায় কঠিন বিষয়গুলো আগেই বাদ দিতেন স্বর্ণা। আর গণিতে যা পারতেন তাই করতেন।
স্বর্ণার মতে প্রস্তুতি যত ভালোই নেওয়া হোক না কেন, পরীক্ষার হলে মাথা ঠান্ডা রেখে উত্তর করতে না পারলে অতি ভালো প্রস্তুতি নিয়েও লাভ নেই। প্রশ্ন পাবার পর স্বর্ণা কখনো আগেই প্রশ্ন পড়তেন না। শুরুতেই সেট নম্বর আর পর পর কোন বিষয়গুলো সাজানো হয়েছে তা দেখে নিতেন। শুরুতেই গণিত থাকলে তা বাদ দিয়ে টানা উত্তর করে যেতেন।
স্বর্ণা বলেন, ‘যে প্রশ্ন দেখলে মনে হতো কোনোদিন দেখিনি এবং পারবও না আর যেগুলো নিয়ে কনফিউশান থাকতো সেগুলোতে আলাদা করে চিহ্ন দিয়ে রাখতাম। যাতে আবার এর জন্য সময় নষ্ট করতে না হয়। প্রথম বার মার্ক করার পর একবার উত্তরপত্রে গুণে দেখতাম মোট কতটি প্রশ্ন শিওর উত্তর করতে পেরেছি। এরপর কনফিউশানগুলো আবার পড়তাম। সেখান থেকে রিস্ক নিয়ে আরও কিছু মার্ক করতাম। পরীক্ষার হলে আমি খুব ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিতাম। পাঁচ-ছয় মাসের প্রস্তুতি নিয়ে আমি ৪১ বিসিএস দিতে বসি। ওই সময় এমনভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম যে পরবর্তীতে ৪৬ পর্যন্ত টানা শুধু ৪১ এর প্রিপারেশন দিয়েই পাস করে যাই।’ 
সবাইকে সিরিয়াসলি পড়াশোনা করতে দেখলে সাফোকেশন লাগতো, তাই স্বর্ণা কখনো লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনা করেননি। পড়ার মাঝখানে তিনি ছোট ব্রেক নিতেন। তখন তিনি রিলাক্সের জন্য গান শুনতেন। বিসিএস এর বাইরে তিনি অন্যকিছু নিয়ে চিন্তা করেননি। তাই শুধু বিসিএসের প্রিপারেশনই নিয়েছেন, যার জন্য ডিস্ট্র্যাক্ট কম হয়েছেন। তার মতে- ‘একই সাথে বিভিন্ন রকম চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া আমার জন্য সম্ভব না। এতে কোনটার প্রিপারেশনই ভালোভাবে নিতে পারবো না। আলহামদুলিল্লাহ, আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।’
চাকরি বাজার ডেস্ক

প্যানেল

×