
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলার আগে ইরান পারমাণবিক উপাদান সরিয়ে ফেলেছে প্রশাসনের প্রাথমিক মূল্যায়নে এমন ইঙ্গিত থাকলেও তা সরাসরি অস্বীকার করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার ন্যাটো সম্মেলনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান এত দ্রুত হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল না এবং তারা উপাদান সরানোর সুযোগই পায়নি।
ট্রাম্প বলেন, “আমাদের বিশ্বাস ঠিক তার উল্টো। আমরা ওদের এত দ্রুত আর শক্তিশালীভাবে আঘাত করেছি যে, তারা কিছু সরাতে পারেনি।” তিনি আরও বলেন, “আপনারা যদি সেই উপাদানের কথা জানতেন, তাহলে বুঝতেন সেটা সরানো খুবই কঠিন ও বিপজ্জনক। অনেকে এটিকে ধুলা বলেন, কিন্তু এটি খুব ভারী এবং সরানো অত্যন্ত কষ্টকর। এই উপাদানগুলো মাটির ৩০ থেকে ৩৫ তলা নিচে ছিল। গভীর ভূগর্ভে।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়ে, যখন তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা প্রশাসনের প্রাথমিক মূল্যায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। ওই মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কেবল কয়েক মাসের জন্য থামিয়ে দিতে পেরেছে। তবে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, এই হামলা ইরানকে “দশকের পর দশক” পিছিয়ে দিয়েছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়ে তার বার্তা কী, জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, “ওরা অসমাপ্ত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে। এটা এমন একটি ঘটনা যা মাত্র তিন দিন আগে ঘটেছে।” তিনি আরও বলেন, “তারা নিজেরা দেখেনি, ওদের সবকিছুই আন্দাজের ওপর নির্ভর করে।”
ট্রাম্প বলেন, “আপনি যদি ছবিগুলো দেখেন, দেখবেন চারপাশে সব পুড়ে গেছে। আগুন ও ধ্বংসাবশেষ ছিল মাটির গভীরে, কারণ এলাকাটি গ্রানাইটে পূর্ণ। আর এসব পুড়ে যাওয়া জায়গা দেখা না গেলেও, যেখানে বোমা আঘাত করেছে তার আশপাশের ৭৫ গজজুড়ে আগুনে পুড়ে কালো হয়ে গেছে।”
তবে ইরান আদৌ পারমাণবিক উপাদান সরিয়েছে কি না, তা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি জানিয়েছেন, সংস্থাটি ৯০০ পাউন্ড সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নয়।
গ্রোসি ‘ফক্স নিউজ’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই উপাদান কোথায় আছে, তা সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। ইরান আমাকে জানায়, তারা সুরক্ষামূলক কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে, যার মধ্যে উপাদান স্থানান্তর থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। তাই এই প্রশ্নটা থেকেই যায় এই উপাদান কোথায় গেল?”
তিনি বলেন, “তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত পুনরায় শুরু করলেই কেবল আমরা নিশ্চিত হতে পারি, আর সেটিই সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।”
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স রোববার, অর্থাৎ হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই জানান, ইরানের পারমাণবিক উপাদান নিয়ে কী করা হবে, সে বিষয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এবিসি চ্যানেলের ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে ভ্যান্স বলেন, “আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইরানের ইউরেনিয়াম নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করব।”
একই দিন বুধবার, ট্রাম্প এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ প্রশাসনের মূল্যায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বলেন, “সাইটটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।”
ট্রাম্প তার সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ইসরায়েল পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি বিবৃতি পড়ে শোনান, যেখানে বলা হয়েছিল, “এই হামলা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতাকে বহু বছর পিছিয়ে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “এটি একটি অফিসিয়াল চিঠি, এবং আপনারা জানেন, ওরা অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও গুরুত্ববহ মানুষ।”
এই বিতর্কে একদিকে যেমন প্রশ্ন উঠেছে মার্কিন প্রশাসনের গোয়েন্দা মূল্যায়ন নিয়ে, তেমনি ইরানের গোপন পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা নির্ভর করছে ভবিষ্যতের তদন্ত ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের ওপর।
সূত্র:The Hill
আফরোজা