ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

আল-আজহারে পরীক্ষা শেষে উল্লাস ও বিদায়ের রঙে রাঙা এক দিন

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ২১ জুন ২০২৫

আল-আজহারে পরীক্ষা শেষে উল্লাস ও বিদায়ের রঙে রাঙা এক দিন

ছবিঃ জনকণ্ঠ

আল-আজহার—বিশ্বের প্রাচীনতম ও মর্যাদাবান ইসলামি বিদ্যাপীঠ। এর প্রতিটি ইট যেন ইতিহাসের সাক্ষী, প্রতিটি দেয়াল যেন জ্ঞানের আলোয় স্নাত এক জীবন্ত অধ্যায়। সেই আল-আজহারের ইসলামি থিওলজি বিভাগের প্রাঙ্গণ আজ যেন হয়ে উঠেছে এক অনন্য অনুভবের রঙমাখা ক্যানভাস।

২১শে জুন, শনিবার—দীর্ঘ একাডেমিক সংগ্রামের পর এদিন শেষ হলো বছরের চূড়ান্ত পরীক্ষা। কঠিন পড়াশোনা, নির্ঘুম রাত, অধ্যয়নের চাপ—সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে আজকের দিনটি যেন এক অভ্যন্তরীণ বিজয়ের দিন। পরীক্ষা শেষে যখন ছাত্ররা হল থেকে বেরিয়ে আসছিলেন, তাদের চোখেমুখে ছিল এক স্বস্তির আলো, আর হৃদয়ে বইছিল মাতৃভূমির মাটির টান।

ইসলামি থিওলজি বিভাগের প্রতিটি করিডোর, প্রতিটি সিঁড়ি, প্রতিটি খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালা পর্যন্ত আজ ছাত্রদের আনন্দময় কোলাহলে সাড়া দিচ্ছিল। তিন মাসের ছুটি সামনে—আর সেই ছুটি মানেই পরিবারে ফেরা, দেশের আলো-বাতাসে গা ভাসানো, মায়ের হাতের রান্না, বাবার ডাক, ছোটবেলার মসজিদে ফজরের আজান—সবই যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত ছাত্রদের সাথে আছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও। কায়রোর এই মরুপ্রবণ নগরীর বুকজুড়ে জ্ঞানের যে সাগর, তার অংশ হয়ে তারা আজ এক গর্বিত প্রজন্মের প্রতিনিধি। বহুদিন পর দেশের টিকিট হাতে নিয়ে তাদের চোখে জলজমা উচ্ছ্বাস—এ এক দেখা না-দেয়া আনন্দ, যেন একসাথে বাড়ি ফেরার গান গাইছে প্রবাসী হৃদয়গুলো।

কারও হাতে ট্রলি ব্যাগ, কারও হাতে পাসপোর্টের খাম। কেউ ক্যাম্পাসের ঐতিহাসিক গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে ছবি তুলছে, কেউ আবার লাইব্রেরির সিঁড়িতে বসে পাঠ্যবইয়ের পাশে রেখে স্মৃতিচিহ্ন তৈরি করছে। এসব ছবি কেবল ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়া কিছু মুহূর্ত নয়, বরং এগুলো সময়ের মলাটে বাঁধা একেকটি গল্প—যা হয়তো একদিন বৃদ্ধ বয়সে ফিরে দেখা যাবে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, "মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ অনেকদিন মিস করেছি। এবার হয়তো ঈদটা হবে দেশের উঠোনে, বাবার ডাকে ঘুম ভাঙবে, আর মসজিদের পুরনো মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আবার শোনা যাবে তাকবির।"

একটি ক্যাম্পাস কেবল পঠন-পাঠনের স্থান নয়—এটি হয় আত্মার বিনির্মাণের ঘর, জীবনবোধের জড়িমা। আর আল-আজহার তো আরও বেশি কিছু—এটি অনেকের কাছে এক প্রার্থনার স্থান, আত্মিক দীক্ষার প্রাঙ্গণ। এখানকার প্রতিটি ক্লাস, প্রতিটি আলোচনা, এমনকি কঠিন পরীক্ষাগুলোও হয়ে ওঠে গর্বের এক গোপন দীপ্তি।

আজকের এই দিন তাই শুধু পরীক্ষা-শেষের দিন নয়, এটি এক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি, আরেক নতুন অধ্যায়ের শুভারম্ভ। একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে বুকের কোণে লুকিয়ে থাকা বিদায়ের স্নিগ্ধ ব্যথা—সব মিলিয়ে ইসলামি থিওলজি বিভাগের আঙিনায় আজ যেন এক অনির্বচনীয় আবহ, এক অপূর্ব আবেগের জলছবি।

আলীম

×