ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রাম্পের জন্মদিনের সামরিক প্রদর্শনীর চেয়ে বড় হয়ে উঠল গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই, দেশজুড়ে ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ রাস্তায়

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:১৮, ১৯ জুন ২০২৫

ট্রাম্পের জন্মদিনের সামরিক প্রদর্শনীর চেয়ে বড় হয়ে উঠল গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই, দেশজুড়ে ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ রাস্তায়

ছবি: সংগৃহীত

ওয়াশিংটনের সংবিধান অ্যাভিনিউয়ে যখন ট্রাম্পের স্বপ্নের ৪৫ মিলিয়ন ডলারের সামরিক কুচকাওয়াজে ট্যাঙ্কের গর্জন ধ্বনিত হচ্ছিল, ঠিক তখনই দেশজুড়ে ২ হাজারেরও বেশি স্থানে 'নো কিংস' (রাজাদের বিরোধিতা) আন্দোলনে স্লোগান উঠছিল - "গণতন্ত্রের উপর ট্রাম্পের হুমকি চলবে না!" আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (ACLU) হিসাবে, শনিবার সারা দেশে ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন, যা ট্রাম্পের সামরিক কুচকাওয়াজে উপস্থিতির দাবিকৃত সংখ্যার চেয়ে ২০ গুণ বেশি।

ট্রাম্প প্রশাসন যেখানে দাবি করছে তাদের কুচকাওয়াজে ২.৫ লক্ষ "দেশপ্রেমিক" অংশ নিয়েছেন, সেখানে বাস্তব চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। রোলিং স্টোনের প্রতিবেদকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ওয়াশিংটন মনুমেন্টের আশেপাশের বিশাল এলাকা ফাঁকাই পড়ে ছিল, যদিও ট্রাম্প সমর্থকদের ভিড়ের আশায় সেখানে হাজার হাজার সিট ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্যাঙ্কের চাকায় জ্যাম লাগা, সৈন্যদের অস্ত্র হাতে কুচকাওয়াজে পা মেলাতে না পারার মতো হাস্যকর দৃশ্য।

অন্যদিকে, 'নো কিংস' আন্দোলনের বিশালতা দেখে বিস্মিত রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নিউ ইয়র্কে ৫০ হাজার, লস অ্যাঞ্জেলেসে ২ লক্ষ এবং বোস্টনে প্রাইড মান্থের সমর্থকদের সঙ্গে মিলে ১০ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নামেন। এমনকি অ্যাঙ্কোরেজ, লুইভিলের মতো ছোট শহরগুলোতেও হাজার হাজার মানুষ এই আন্দোলনে শামিল হন। স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের হিসাবে, মোট বিক্ষোভকারীর সংখ্যা ৪০ থেকে ৬০ লাখের মধ্যে।

এই বিক্ষোভের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হার্ভার্ডের রাজনৈতিক বিজ্ঞানী প্রফেসর লরা ফিল্ডস বলেন, "এটি শুধু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়, বরং আমেরিকান গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির পুনরুত্থান।" তিনি ইঙ্গিত দেন, ট্রাম্প কর্তৃক লস অ্যাঞ্জেলেসে সক্রিয় সামরিক বাহিনী মোতায়েন এবং অভিবাসী সম্প্রদায়ের উপর ICE-এর অভিযান অনেক আমেরিকানকে আতঙ্কিত করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন ভিড়ের সংখ্যা গোপন করতে পারলেও লুকোতে পারছে না কিছু কঠিন বাস্তবতা। সামরিক বিশ্লেষক রিচার্ড হ্যামিল্টন তার টুইটারে লিখেছেন, "এই কুচকাওয়াজ ছিল ট্রাম্পের ব্যক্তিগত 'শক্তি প্রদর্শনের' খেলনা, যা মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০ বছর পূর্তির মর্যাদাকে ঢেকে দিয়েছে।" অন্যদিকে, 'নো কিংস' আন্দোলনের সংগঠকরা জানান, এটি কোনো এককালীন ঘটনা নয় - ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী নীতির বিরুদ্ধে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনের শুরু।

শেষ পর্যন্ত, এই দিনটি ইতিহাসে লেখা থাকবে দুইটি বিপরীত ছবি নিয়ে - একদিকে একজন নেতার ব্যক্তিগত ক্ষমতার প্রদর্শন, অন্যদিকে লাখো সাধারণ মানুষের গণতন্ত্র রক্ষার সংকল্প। প্রশ্ন হলো, ২০২৪ সালের নির্বাচনে এই জনরোষ কি ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ করবে? উত্তর হয়তো আসছে নভেম্বরে।

সাব্বির

×