
ইসরায়েল ও ইরানের টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিন গড়াচ্ছে ষষ্ঠ দিনে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের চিন্তা করছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, “আমি এটা করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করব।”
ইসরায়েল বলছে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে এগোচ্ছে যা তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই উদ্বেগে ছিল এবং সম্প্রতি পর্যন্ত তেহরানের সঙ্গে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার আলোচনাও চলছিল।
ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনা ‘ফর্ডো’ পাহাড়ের গভীরে নির্মিত। এই স্থাপনায় সরাসরি আঘাত হানতে যে অস্ত্র দরকার, তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই হাতে আছে। ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘জিবিইউ-৫৭ এমওপি’ নামের এই বোমাটি সাধারণত ‘বাঙ্কার বাস্টার’ নামে পরিচিত এবং একে বহন করতে হয় বি-২ স্টিলথ বোম্বারে। এই সমন্বয় কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই আছে, ইসরায়েলের নয়।
কী এই ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা?
‘বাঙ্কার বাস্টার’ বলতে বোঝায় এমন বোমা যা মাটির গভীরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকেই এই ধারণার অস্তিত্ব থাকলেও আধুনিক রূপে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় গালফ যুদ্ধে।
জিবিইউ-৫৭ এমওপি একটি অতি ভারী, অতি শক্তিশালী নন-নিউক্লিয়ার বোমা। এর আসল বৈশিষ্ট্য হলো এর স্টিল কেসিং, যা ড্রিলের মতো মাটির নিচে প্রবেশ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এই বোমায় সাধারণত কম পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়, কারণ এর মূল শক্তি ভর ও প্রবেশক্ষমতা।
কেবল যুক্তরাষ্ট্র কেন ব্যবহার করতে পারে?
এই বোমা বহনের জন্য প্রয়োজন বি-২ স্টিলথ বোম্বার, যা কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই আছে। ইসরায়েলের কাছে এমন ভারী বোম্বার নেই, তাই তারা চাইলেও এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র চাইলে এই অস্ত্র দিতে পারত, তবে কৌশলগত কারণে এটি সম্ভব নয়।
এই অস্ত্র কি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি থামাতে পারবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফর্ডোর মতো একটি গভীর পাহাড়ঘেরা স্থাপনাকে পুরোপুরি ধ্বংস করার জন্য এমওপি যথেষ্ট হতে পারে। তবে প্রশ্ন হলো, সেটি কি পরমাণু কর্মসূচি থামানোর জন্য যথেষ্ট?
বিষয়টি এখানেই থেমে যায় না। এমন একটি স্থাপনা ধ্বংস করলেও, ইরান যে প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে, তা থেকে তারা কয়েক বছরের মধ্যে আবারও কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে পারবে। অর্থাৎ, বড়জোর এক বা দুই বছর সময় পাওয়া যাবে, চিরতরে সমাধান নয়।
বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ঝুঁকি কতটা?
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) নিশ্চিত করেছে, ফর্ডোতে উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম উৎপাদন চলছে। এমন একটি স্থাপনায় হামলা হলে পারমাণবিক বিকিরণ আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও এই বিকিরণ অনেক দূর ছড়াবে না বলেই মনে করা হচ্ছে, তবুও স্থানীয় জনগণের জন্য এটি মারাত্মক হুমকি হতে পারে।
আইএইএ মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, “যেকোনো পরিস্থিতিতেই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর প্রভাব শুধু একটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্র যদি ফোর্ডোর মতো একটি লক্ষ্যে জিবিইউ-৫৭ ব্যবহার করে, তাহলে তা হবে কেবল প্রযুক্তিগত নয়, কৌশলগত দিক থেকেও বড় এক ঘটনা। তবে প্রশ্ন থেকেই যায় এমন এক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র দিয়ে আঘাত হানলেও, ইরানের পরমাণু স্বপ্ন থেমে থাকবে তো? একদিকে যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়ছে, অন্যদিকে বেসামরিক জীবনের জন্য ভয়ঙ্কর ঝুঁকির আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয়। যুদ্ধ, শান্তি নাকি কৌশলগত সমঝোতা তা সময়ই বলে দেবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/3vedt8pa
আফরোজা