
ছবি: জনকণ্ঠ
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দুই দিন ধরে নোয়াখালীতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে টানা বর্ষণের ফলে নোয়াখালী শহর ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা সমূহের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে হাতিয়ার সঙ্গে নৌযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার নৌযান চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিন।
এদিকে সকালে চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ট্রলারটি থেকে ১৮ জন জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
জেলা আবহাওয়া দপ্তরের পর্যবেক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
নোয়াখালী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পৌরসভার মাইজদী লক্ষ্মী নারায়ণপুর, হাউজিং, উকিলপাড়া, মাস্টারপাড়া, ফকিরপুর, শিল্পকলা সড়ক, মাইজদী বাজার, পৌরবাজার, জেলখানা সড়কসহ ৯টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। নিচু এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি জমে যায়। এতে অনেক পরিবার ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে।
শহরের সোনাপুর-চৌমুহনী চার লেন সড়কের দুই পাশে, ফ্ল্যাট রোড, জজকোর্ট সড়ক, আল-ফারুক স্কুল সড়ক, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কসহ বেশিরভাগ সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে রয়েছে। সড়কগুলোতে খানাখন্দ থাকায় ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আসা সেবাপ্রত্যাশীরা চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মে মাসের শেষ থেকে এ পর্যন্ত তিন দফায় শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। যদিও দু-তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয়নি। তবে পৌর শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না থাকা, প্রয়োজনের তুলনায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এবং খাল-বিলগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
ভোরে হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় ঢেউয়ের কবলে পড়ে একটি ট্রলার ডুবে যায়। এ সময় ট্রলারটি ঘাটের কাছাকাছি থাকায় চালক, যাত্রীসহ ১৮ জন সাঁতরে নিরাপদে তীরে উঠে আসতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় কোনো হতাহত বা কেউ নিখোঁজ নেই। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সি-ট্রাক, যাত্রীবাহী ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে দুই পাশে আটকা পড়েছেন কয়েকশ যাত্রী।
শহরের লক্ষ্মী নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা আলী আক্কাছ বলেন, পৌরসভার জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিগত বছরগুলোতে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পানি নিষ্কাশনের জন্য যে ড্রেনগুলো করা হয়েছে, তা পর্যাপ্ত না। একই সঙ্গে যেভাবে নালাগুলো করার কথা, সেভাবে না করে টাকা-পয়সা লুটপাট করা হয়েছে। ফলে একটু বৃষ্টিতে পুরো শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
স্থানীয়রা আরো জানান, অনেক বাসাবাড়িগুলোর নিচতলায় পানি ঢুকেছে। পৌরসভার বেশির ভাগ সড়ক খানাখন্দে ভরা। চালকেরা গর্ত বুঝতে না পারায় সকাল থেকে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া শহরের ছাগলমারা খালের বেশির ভাগ অংশ দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ হলেও সেগুলো অদ্যাবধি উচ্ছেদ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা গাছ উপড়ে পড়েছে। সদর, কবিরহাট উপজেলাসহ কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইনের ওপর পড়ায় ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বেলাল আহম্মেদ খান বলেন, "পৌরসভার জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। অতীতে যারা পৌরসভার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের অপরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেমের কারণে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।"
আবির