
ছবিঃ সংগৃহীত
কানাডাভিত্তিক 'খালিস্তানি চরমপন্থীরা' দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা (Canadian Security Intelligence Service – CSIS)। সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্টে জমা দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারত, চীন, রাশিয়া, ইরান এবং পাকিস্তানকে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও গোয়েন্দাগিরির প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা এবং তাদের নিয়োজিত স্থানীয় প্রোক্সি এজেন্টরা কানাডার রাজনীতিবিদ ও কমিউনিটিগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এই কর্মকাণ্ড গোপন, প্রতারণামূলক বা হুমকিমূলক হলে, তা বিদেশি হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি, তবে আগের অনুরূপ অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিল ভারত।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, “এই ধরনের হস্তক্ষেপমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কানাডার অবস্থানকে ভারতের স্বার্থে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়—বিশেষ করে খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থকদের বিষয়ে। ভারত মনে করে, এসব সমর্থন তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
এই প্রতিবেদন এমন এক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে, যখন ভারত ও কানাডা কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পার্লামেন্টে বলেন, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী হারদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার “বিশ্বস্ত অভিযোগ” নিয়ে তদন্ত চলছে। ভারত সেসময় এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে।
এদিকে চলতি সপ্তাহে ইতালিতে জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বৈঠক করেছেন এবং দুই দেশের রাজধানীতে পুনরায় হাই কমিশনার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারত জানায়, “বাকি কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলো সময়মতো নেওয়া হবে।”
এটাই প্রথম নয়, এর আগেও কানাডা ভারতের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কানাডার এক তদন্ত কমিশন অভিযোগ তোলে যে, ভারত গোপনে রাজনৈতিক নেতাদের অর্থ দিয়ে নির্বাচন প্রভাবিত করতে চেয়েছে এবং মিথ্যা প্রচার চালিয়েছে। ভারত অবশ্য সে অভিযোগকেও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয় এবং পাল্টা অভিযোগ তোলে যে, কানাডাই বরং ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারবার হস্তক্ষেপ করছে।
‘খালিস্তানি চরমপন্থীরা’ জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কানাডায় সক্রিয় খালিস্তানি চরমপন্থীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। ১৯৮০’র দশক থেকেই তারা সহিংস উপায়ে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে খালিস্তান নামক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে।
গোয়েন্দা সংস্থার মতে, “যদিও অনেক কানাডিয়ান খালিস্তানের পক্ষে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যুক্ত, তবে কিছু সংখ্যক চরমপন্থী ব্যক্তি কানাডাকে সহিংসতা প্রচার, অর্থ সংগ্রহ এবং পরিকল্পনার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে।”
প্রতিবেদন শেষে বলা হয়, “কানাডা থেকে উঠে আসা প্রকৃত ও ধারণাগত খালিস্তানি চরমপন্থা ভারতের হস্তক্ষেপমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
মুমু