ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লস অ্যাঞ্জেলেসের সঙ্গে এই সংঘাতই চাইছে হোয়াইটহাউস

প্রকাশিত: ১২:২৫, ১২ জুন ২০২৫

লস অ্যাঞ্জেলেসের সঙ্গে এই সংঘাতই চাইছে হোয়াইটহাউস

ছবি: সংগৃহীত

লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসন ইস্যুতে চলমান সংঘাত শুধু নীতিগত দ্বন্দ্ব নয়, এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশলেরও প্রতিচ্ছবি। একজন দায়িত্বশীল প্রেসিডেন্টের উচিত উত্তেজনা কমানো; কিন্তু ট্রাম্প বরাবরই উল্টো পথে হেঁটেছেন—বিশেষ করে নীল (ডেমোক্র্যাট) রাজ্য ও শহরগুলোর বিরুদ্ধে। তাঁর নজরে, এগুলো শাসনের অংশীদার নয়, বরং "শত্রুভূমি" যাকে দমন করতে হবে।

এই দৃষ্টিভঙ্গিই লস অ্যাঞ্জেলেসের ঘটনাপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রথমে, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন রেইড চালায় এমনভাবে যাতে বিক্ষোভ সৃষ্টি নিশ্চিত ছিল—কর্মস্থল ও অভিবাসীপ্রধান এলাকায় জোরালো উপস্থিতি দেখিয়ে। এরপর, বিক্ষোভ শুরু হতেই ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসামের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে ন্যাশনাল গার্ড ফেডারেলাইজ করেন ট্রাম্প। এখন নিউসাম আদালতে এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করছেন।

পরিস্থিতি যখন আরও উত্তপ্ত হলো, ট্রাম্প প্রশাসন সক্রিয় সামরিক বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি গভর্নর নিউসাম ও মেয়র কারেন বাসকে গ্রেফতারের ইঙ্গিত দিয়েছে। প্রতিটি ধাপে হোয়াইট হাউস এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা অস্থিরতা বাড়ায়, আর সেই অস্থিরতাকে তারা আরও কঠোর পদক্ষেপের জাস্টিফিকেশন হিসেবে ব্যবহার করেছে। একজন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা হওয়া উচিত শান্তি রক্ষা, কিন্তু ট্রাম্প বরং উত্তেজনাকে ইন্ধন দিচ্ছেন।

দ্বৈত নীতির রাজনীতি
সরকারের যেকোনো স্তরের দায়িত্ব জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু ট্রাম্পের কর্মপদ্ধতিতে আঞ্চলিক সমন্বয়ের বালাই নেই। মিয়ামি বা হিউস্টনে একই পরিস্থিতি হলে, তিনি কি রিপাবলিকান গভর্নর রন ডিস্যান্টিস বা গ্রেগ অ্যাবটের সঙ্গে আলোচনা না করেই সেনা মোতায়েন করতেন? নিশ্চয়ই না। লস অ্যাঞ্জেলেসে তাঁর দ্রুত সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে, তিনি নীল রাজ্যগুলোতে ফেডারেল শক্তি প্রয়োগে আগ্রহী।

২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর মিনিয়াপলিসে ন্যাশনাল গার্ড পাঠাতে দেরি করায় ট্রাম্প আফসোস করেছেন। পরবর্তীতে তিনি পোর্টল্যান্ড ও ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেডারেল বাহিনী মোতায়েন করেছিলেন বিক্ষোভ দমনে। ২০২৪-এর প্রচারে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বড় শহরগুলোতে সেনা পাঠাবেন—গৃহহীনদের উচ্ছেদ, গণবহিষ্কার অপরাধ দমনের নামে।

সেনা মোতায়েনের 'অসীমিত অধিকার'?
গত শনিবার ট্রাম্প যে প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন, তা আইনিভাবে বিপজ্জনক। এতে লস অ্যাঞ্জেলেস বা ক্যালিফোর্নিয়ার নাম নেই—বরং বলা হয়েছে, ন্যাশনাল গার্ড (এবং প্রয়োজনে সক্রিয় সেনা) মোতায়েন করা যাবে যেকোনো স্থানে যেখানে অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ "হতে পারে"। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ব্রেনান সেন্টারের এলিজাবেথ গোইটিনের মতে, "এমন কোনো আইন নেই যা প্রেসিডেন্টকে দেশের ভেতর প্রাক-এমপেটিভ ভাবে সেনা মোতায়েনের অনুমতি দেয়।"

নীল রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ট্রাম্পের হুমকি শুধু সেনা মোতায়েনেই সীমিত নয়। নিউ জার্সির একজন মেয়র ও কংগ্রেসম্যান, মিলওয়াকির একজন বিচারক লস অ্যাঞ্জেলেসের একজন ইউনিয়ন নেতাকে অভিবাসন নীতি বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। নীল রাজ্য ও শহরগুলোকে ফেডারেল তহবিন বন্ধের হুমকি দেওয়া হচ্ছে—যদি তারা অভিবাসন, ট্রান্সজেন্ডার অধিকার বা বৈচিত্র্যের নীতিতে কন্সট্রাক্টিভ  অবস্থান না নেয়। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভের ঠিক আগে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুদান বাতিলের পরিকল্পনার খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা
ট্রাম্প যেন যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট—তবে শত্রু কোনো বিদেশি শক্তি নয়, বরং নীল আমেরিকা। তিনি ফেডারেল শক্তি ব্যবহার করে রেড (রিপাবলিকান) আমেরিকার এজেন্ডা জোর করে চাপিয়ে দিতে চান নীল রাজ্যগুলোতে। লস অ্যাঞ্জেলেসের আকাশে ওঠা ধোঁয়া বিশেষ সতর্ক সংকেত—এই পথের শেষে অপেক্ষা করছে বিভাজন ও বিপদ।

শেষ কথা ট্রাম্পের জন্য এই সংঘাত কোনো গভর্ন্যান্স ইস্যু নয়, বরং ২০২৪-এর নির্বাচনী কৌশল। তিনি চান তাঁর ভোটাররা দেখুক—"শুধু আমিই দৃঢ় হাতে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারি"। কিন্তু এর মূল্য কী? গণতন্ত্রের ভিতই যখন প্রশ্নের মুখে, তখন এই অগ্নি খেলার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।

তথ্যসূত্র: https://www.bloomberg.com/opinion/articles/2025-06-10/trump-immigration-standoff-with-los-angeles-is-a-fight-he-wants

সাব্বির

×