
ছবিঃ সংগৃহীত
মার্কিন কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর-ছাড় ও সরকারি ব্যয়বিল নিয়ে বিতর্কের মধ্যে পড়েই মঙ্গলবার কঠোর সমালোচনা করেছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। তিনি এই বিলকে ‘এক জঘন্য অপবিত্রতা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি আরও বাড়াবে।
মাস্কের এই মন্তব্য কিছু রক্ষণশীল রিপাবলিকান সিনেটরের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে, যারা তার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত মতের সঙ্গে একমত। এতে বিলটির সিনেট পাসে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী মাস্ক এক্স-এ (আগের টুইটার) লিখেছেন,
“আমি দুঃখিত, কিন্তু আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এই বিশাল, কুৎসিত, কংগ্রেসীয় ব্যয়ের বিল এক জঘন্য অপবিত্রতা।”
তিনি আরও বলেন, “যারা এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তোমরা জানো—তোমরা ভুল করেছো। লজ্জা হওয়া উচিত।”
বিলটি ২০১৭ সালের কর ছাড় অব্যাহত রাখার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত নিরাপত্তায় ব্যয় বাড়াবে। সংসদের বাজেট অফিস জানিয়েছে, এতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬.২ ট্রিলিয়ন ডলারের জাতীয় ঋণে আরও ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ হবে।
সিনেটের লক্ষ্য আগামী মাসেই বিলটি পাস করানো, যদিও হাউস সংস্করণে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। সিনেট ফাইন্যান্স কমিটির রিপাবলিকান সদস্যরা ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসবেন—যেখানে কর ছাড় স্থায়ী করার বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন সিনেটর স্টিভ ডেইন্স। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এতে খরচ আরও বেড়ে যাবে।
মাস্ক বনাম ট্রাম্পপন্থী রিপাবলিকানরা
সিনেটর জন থুন বলেছেন, তিনি মাস্কের মতের সঙ্গে একমত নন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিলটি পাস করাতে বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। জনগণ আমাদের নির্বাচিত করেছে এবং আমরা সেই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করব।”
রিপাবলিকান হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেন, “আমার বন্ধু ইলন মারাত্মক ভুল করছেন।”
রাজনৈতিক প্রভাবের পরীক্ষা
ট্রাম্প-সমর্থিত বিলের বিরুদ্ধে মাস্কের উচ্চকণ্ঠে বিরোধিতা রাজনৈতিক মহলে তার প্রভাবের একটি নতুন পরীক্ষা। সম্প্রতি তিনি প্রশাসনের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’র (DOGE) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব শেষ করেন। ওই ভূমিকায় বিভিন্ন দপ্তরে সংস্কার আনলেও কাঙ্ক্ষিত অর্থ সাশ্রয় করতে পারেননি।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ক গত নির্বাচনে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের পক্ষে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, এবার তিনি রাজনৈতিক ব্যয় অনেক কমাবেন এবং আবারও টেসলায় পূর্ণ মনোযোগ দেবেন।
হোয়াইট হাউস মাস্কের সমালোচনার জবাবে জানায়,
“প্রেসিডেন্ট জানেন মাস্ক এই বিল সম্পর্কে কী ভাবেন। এটা তার অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আনবে না,” বলেন মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট।
“এই বিল একটা দারুণ সুন্দর উদ্যোগ এবং প্রেসিডেন্ট তাতে অটল।”
বিল পাসের আগেই সিনেট রিপাবলিকানদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ আরও ব্যয় ছাঁটাই চান, আবার কেউ চাইছেন দরিদ্রদের জন্য মেডিকেইড ও পরিবেশবান্ধব খাতে বিনিয়োগের রক্ষা।
সিনেটর মাইক লি বলেন, “এই বিলের মাধ্যমে আমাদের ঘাটতি কমাতে হবে। এটাই ভোটারদের প্রত্যাশা এবং অধিকার।” তিনি মাস্কের পোস্ট শেয়ার করেও সমর্থন জানান।
৫৩-৪৭ আসনে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট মাত্র তিনটি ভোট হারালেই বিপদে পড়বে। তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভোটে সমতা ভাঙতে হবে।
আরেক কট্টরপন্থী সিনেটর রন জনসন মনে করেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত ছাঁটাই সম্ভব নাও হতে পারে।
কানসাসের সিনেটর জেরি মোরান বলেন, “প্রতিবন্ধীদের যেন ক্ষতি না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালের অর্থ পরিশোধেও এর প্রভাব আছে।”
অন্যান্য সিনেটররা বিকল্প অর্থ সাশ্রয়ের পথ খুঁজছেন। এর মধ্যে রয়েছে—ট্রাম্প ঘোষিত বকশিশ, ওভারটাইম, সোশ্যাল সিকিউরিটি কর ছাড়ের প্রস্তাব ভবিষ্যতের আইন প্রণয়নে রাখা।
সিনেটর থম টিলিস বলেন, “এই প্রস্তাবগুলো ডেমোক্র্যাটদের অগ্রাধিকার। তাই তা পরবর্তী দ্বিদলীয় আলোচনায় করাই ভালো হবে।”
মুমু