
ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মঙ্গোলিয়ার বিস্তীর্ণ পার্বত্য তৃণভূমি দখলে রেখেছিল যাযাবর জাতি। এদের মধ্য থেকেই উঠে এসেছিল এক মহান নেতা— তেমুজিন, যিনি পরবর্তীতে পরিচিত হন চেঙ্গিস খান নামে।
ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলরা পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তবে আজ সেই মঙ্গোলিয়ার ৯৫ শতাংশ এলাকা জনশূন্য। কেন এমন হলো?
১১৫৫ সালে জন্ম নেওয়া তেমুজিন শৈশব থেকেই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। শত্রুরা তার বাবাকে হত্যা করলে মাত্র ছয় বছর বয়সে তাকে পরিবারহীন জীবন বেছে নিতে হয়। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল ছড়িয়ে থাকা যাযাবর জাতিগুলোকে একত্রিত করা।
দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও অদম্য সাহসের জোরে তিনি সেই স্বপ্ন সফল করেন। "চেঙ্গিস" শব্দের অর্থ 'পৃথিবীর অধিপতি,' আর 'খান' ছিল এক বিশেষ উপাধি। এভাবেই তিনি মঙ্গোল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন।
১২৫৯ সালে চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। উত্তরাধিকার নীতির অভাবে সাম্রাজ্যটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ১২৯৪ সালের মধ্যে এটি চার ভাগে বিভক্ত হয়—ইউয়ান, চাকতাই খানাত, সোনালী, এবং ইলখানি রাজ্য।
এই বিভক্তি ও ক্রমাগত গৃহযুদ্ধ সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে তোলে। ১৩৬৪ সালে মিং রাজবংশের হাতে চীন হারানোর মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়।
আজকের মঙ্গোলিয়া বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশের ৯৫ শতাংশ এলাকা খালি পড়ে রয়েছে। এর কারণ মূলত আবহাওয়া। দেশটির বেশিরভাগ এলাকা বরফ এবং তৃণভূমিতে ঢাকা। আবাদী জমি খুবই সীমিত। উত্তরে পাহাড় ও দক্ষিণে গোবি মরুভূমির কারণে এখানকার জীবনযাত্রা কঠিন।
মঙ্গোলিয়ার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ এখনও যাযাবর জীবনযাপন করে। বাকি ৪৫ শতাংশ রাজধানী উলান বাটরে বাস করে। প্রায় এক মিলিয়ন পশুপালক ৬৫ মিলিয়ন গৃহপালিত প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। তাদের জীবিকা আসে পশুর চামড়া, উল এবং মাংস বিক্রি থেকে।
যে মঙ্গোলরা এককালে বিশ্বজয় করেছিল, তারা আজও কঠোর পরিস্থিতিতে বেঁচে রয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। তবুও তাদের ঐতিহ্য ও যাযাবর জীবনধারা মঙ্গোলিয়ার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়ে গেছে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/OayKM2RwwYo?si=dv6UkvUljVc-26ve
এম.কে.