ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানবপাচার সংক্রান্ত বার্ষিক রিপোর্টে প্রকৃত সত্য গোপন করা হয়েছে

তোপের মুখে ওবামা প্রশাসন

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৫ আগস্ট ২০১৫

তোপের মুখে ওবামা প্রশাসন

যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন রাজনীতিবিদ সোমবার মানব পাচার প্রশ্নে একটি বার্ষিক বৈশ্বিক রিপোর্টের ব্যাপারে ওবামা প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সিনিয়র মার্কিন কূটনীতিকরা কিভাবে ১২টিরও বেশি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশের অবস্থানকে অতিরঞ্জন করে দেখিয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্স তা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরার পর এই সমালোচনা করা হয়। ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর বব মেনেন্ডেজ এই বিবরণকে ‘আশঙ্কাজনক এবং সত্যি হলে অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেছেন। বৃহস্পতিবার ২০১৫-এর ট্রাফিকিং ইন পার্সনস রিপোর্টের পর্যালোচনায় যে সিনেট শুনানি হওয়ার কথা সে ব্যাপারে এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এর গভীরে যেতে হবে।’ খবর ইয়াহু নিউজের। ওয়াশিংটন এবং বৈদেশিক রাজধানীসমূহের ১২টির বেশি সূত্রের সঙ্গে সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে রয়টার্সের একটি অনুসন্ধানে দেখা যায় মানব পাচারের মোকাবেলায় স্বাধীনভাবে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার মান নির্ধারণের জন্য যে সরকারী দফতর গঠন করা হয়েছিল সিনিয়র মার্কিন কূটনীতিকরা সেই দফতরের সিদ্ধান্ত বারংবার বাতিল করে দেন এবং এ বছরের প্রকৃত মানবপাচার রিপোর্টে ১৪টি কৌশলগতভাবে গুরুত্বর্পূ দেশের মূল্যায়ন ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। অফিস টু মনিটর এ্যান্ড কমব্যাট ট্রাফিকিং ইন পার্সনস যা মার্কিন সরকারের ভিতরে জে/টিআইপি বলে পরিচিতÑ ১৭টি দেশের জন্য মান নির্ধারণের বিষয়ে মার্কিন কূটনৈতিক ব্যুরোগুলোর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে। ওই বিশেষজ্ঞরা যারা বাধ্যতামূলক শ্রম অথবা পতিতাবৃত্তি সংক্রান্ত অবৈধ মানব বাণিজ্যের মতো আধুনিক দাসত্বের মোকাবেলার প্রচেষ্টার মূল্যায়নকারীÑ তারা ওইসব মতবিরোধের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জয়ী হয়েছেন। ইউনিটের ১৫ বছরের ইতিহাসে এটি নিকৃষ্ট অনুগাত। সূত্র আরও জানায়, এরফলে শুধু মালয়েশিয়া, কিউবা এবং চীনই নয়, রং ভারত, উজবেকিস্তান ও মেক্সিকোর মতো দেশও পররাষ্ট্র দফতরের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতের বাইরে উন্নত অবস্থানে বসানো হয়েছে। জে/টিআইপি যে তিনটি প্রশ্নে জয়ী হয় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো থাইল্যান্ডÑ যে দেশটি জাহাজে বাধ্যতামূলক শ্রম এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় জঙ্গলের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাচারে যাচাই-বাচাইয়ের সম্মুখীন হয়েছে। কূটনীতিকরা দেশটিকে ‘স্তর ২ নজরদারি তালিকায়’ উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তবে নিকৃষ্ট ধরনের মানবপাচারের রেকর্ডের জন্য দেশটিকে ‘স্তর-৩’ রেখে দেয়া হয়। প্রত্যাখ্যান করা সুপারিশের সংখ্যা থেকে রিপোর্টে কূটনীতিকদের ইতোপূর্বে অজানা হস্তক্ষেপের মাত্রা সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়, যা অবরোধ আরোপ পর্যন্ত গড়াতে পারে এবং তা অনেক দেশের পাচার বিরোধী নীতিমালার ভিত্তি। এ বছর স্থানীয় দূতাবাসসমূহ এবং দফতরের অধীনস্ত অন্যান্য বিভাগ কিছু কঠোরতম শ্রেণীকরণে বাধার সৃষ্টি করে। পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, মান নির্ধারণের বিষয়ে রাজনীতি করা হয়নি। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কিরবি রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বরাবরের মতো টিআইপি দফতর সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ব্যুরোসমূহ এবং পররাষ্ট্র দফতরের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে কঠোর বিশ্লেষণ ও আলোচনা শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেছে।’ তবুও ২৭ জুলাই রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার সময় মালয়েশিা ও কিউবা উভয় দেশকে ‘স্তর ৩‘ কালো তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, যদিও পররাষ্ট্র দফতরের নিজস্ব পাচারসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দু’টি দেশের কোনটাই এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করতে পারেনি। মালয়েশিয়ার মানোন্নয়নÑ যা মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা তীব্র সমালোচিত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওই দেশ ও অন্য ১১টি দেশের সঙ্গে মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রস্তাবিত উচ্চাভিলাষী মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পথ প্রশস্ত করতে পারে।
×