
২৯ মে, ২০২৫ তারিখে সুইজারল্যান্ডের ব্লাটেন শহরের ধ্বংসস্তূপ
সুইস হিমবাহ ধসে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ফের আলোচনায়, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে হিমবাহ গলার প্রভাব বাড়ছে, বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারি
সুইজারল্যান্ডের একটি গ্রামের বড় অংশ চাপা পড়েছে পাহাড়ধসে। এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে হিমবাহ ধসের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা ও বাড়তে থাকা ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। আল্পস, আন্দিজ থেকে হিমালয় ও অ্যান্টার্কটিকা—প্রতিটি অঞ্চলে হিমবাহ ধসের প্রক্রিয়া ভিন্ন হলেও, বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় সবক্ষেত্রেই এর নেপথ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
কী ঘটেছিল সুইজারল্যান্ডে?
দক্ষিণাঞ্চলের লোৎশেনটাল উপত্যকার ব্লাটেন গ্রামের কাছে বুধবার পাহাড়ধস ঘটে। আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা অধ্যাপক মার্টিন ট্রুফার (যিনি হিমবাহের গতিবিধি নিয়ে গবেষণা করেন) জানান, পার্মাফ্রস্ট গলে যাওয়ায় বার্চ হিমবাহের উপরিভাগের শিলাস্তর অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এতে গত কয়েক বছর ধরে ধ্বংসাবশেষ জমে হিমবাহটিকে ঢেকে ফেলে।
এই ধ্বংসাবশেষ হিমবাহকে অন্তরক হিসেবে কাজ করে এর গলনকমালেও, এর ওজন বরফকে নিচের দিকে ঠেলে দিতে শুরু করে—যা গত কয়েক সপ্তাহে হঠাৎ তীব্র গতি পায়। ট্রুফার বলেন, "সম্প্রতি যখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে পুরো পাহাড়ধসে পড়তে পারে, তখন গ্রামের প্রায় ৩০০ বাসিন্দা ও গবাদিপশু সরিয়ে নেওয়া হয়।"
হিমবাহ হ্রদের ঝুঁকি
হিমবাহ গলতে থাকলে এর গোড়ায় যে হ্রদ সৃষ্টি হয়, সেগুলো কখনও কখনও বিস্ফোরিত হয়—যার ফলাফল প্রায়ই ধ্বংসাত্মক। ট্রুফার ব্যাখ্যা করেন, পানি কখনও কখনও সম্পূর্ণ হিমবাহকে ভাসিয়ে দিতে পারে, যার ফলে তা দ্রুত গলে যায়। আলাস্কার রাজধানী জুনাউ গত কয়েক বছরে বন্যার শিকার হয়েছে, কারণ দ্রুত সরে যাওয়া একটি হিমবাহে প্রতিবছর হ্রদ সৃষ্টি হয়ে তা ফেটে যায়।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার শঙ্কা
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, হিমবাহ গলার প্রক্রিয়া আগামী কয়েক দশক ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়াতে থাকবে। গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদর সম্পূর্ণ গলে গেলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠ ৭০ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে—যা উপকূলীয় শহর ও দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জন্য অস্তিত্ব সংকট তৈরি করবে।
প্রতিকারের আহ্বান
এই ঘটনাগুলো জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপের ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং অভিযোজন কৌশল জোরদার করা না হলে, ভবিষ্যতে এমন দুর্যোগ আরও বাড়তে থাকবে।
সাব্বির