
দৈনিক জনকণ্ঠ
কুড়িগ্রামের ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর গরুর হাট ক্রেতা সংকটে ভুগছে। কোরবানি উপলক্ষ্যে প্রায় কয়েক হাজার পশু হাটে উঠলেও মিলছে না ক্রেতা। তাই প্রয়োজনীয় দাম না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন বিক্রেতারা।
আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রাম জেলার ঐতিহ্যবাহী হাট যাত্রাপুরে (৩১ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন চর থেকে শত শত গরু এসেছে। নৌকার, পায়ে হেঁটে, নছিমন, করিমন থেকে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহনে দূর দূরান্ত থেকে কোরবানির জন্য পশু আসছে। তবে ক্রেতা না থাকায় অনেকেই হতাশা প্রকাশ করছেন ।
এ হাটে ছোট,বড়, মাঝারি আকারের দেশি ও বিদেশি জাতের পশু উঠেছে। প্রতিবছর এই হাটে ভারতীয় গরুর একটা আধিক্য থাকলেও এ বছর তা দেখা যায়নি।
এ অঞ্চলের মানুষ কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে একটি দুইটি করে গরু পালন করে থাকে। আর এসব গরু বিক্রি করে তারা জীবনের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে।গরু পালন করতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে এবং পরিশ্রম হয়েছে, সেই অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। দুই একজন ক্রেতা আসলেও কোনো দাম বলছেন না। আসছেন দেখছেন এবং চলে যাচ্ছেন।
আইরমারি থেকে গরু বিক্রি করতে এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, অনেক কষ্ট করে একটি গরু পালন করেছি। কোরবানিকে কেন্দ্র করে আমরা সাধারণত এই পশু লালনপালন করে থাকি।আজ গরুটি বিক্রি করার জন্য হাটে তুলেছি।তবে কেউ দাম বলছে না। ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার গরু, এখন পর্যন্ত দেড় লক্ষ টাকার উপরে কেউ বলেনি।
হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছেন শাহজান আলী। তিনি বলেন, তিনটি গরু নিয়ে এসেছি। একজনও দাম করেনি। দাম করবে কীভাবে? কারণ এখানে বাইরে থেকে কোনো পাইকার আসেনি। বাইরে থেকে পাইকার না আসলে দাম পাওয়ার তো কথা না।
নরসিংদী থেকে সাতজনের একটি দল এসেছেন যাত্রাপুর হাটে গরু কেনার জন্য। কথা হয় বয়োজ্যেষ্ঠ রহমান আলির সাথে। তিনি বলেন, 'আমরা কয়েকজন গরু কিনতে এসেছি। হাটে গরুর আমদানি অনেক ভালো। সেই তুলনায় দাম অনেক কম মনে হচ্ছে।
এই এখন যে গরুটা আমি কিনলাম সেটি ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকায় কিনেছি।এটি মিনিমাম আমি ১ লক্ষ ৩০ থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত বিক্রি করব। সব মিলিয়ে এই হাটটি অনেক ভালো। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো, অনেক আগেও এখানে গরু কিনতে এসেছিলাম।
কুড়িগ্রাম সদর থেকে গরু কিনতে এসেছেন আজম মালিক। তিনি বলেন, 'গরু কিনতে এসেছি। অনেক দেখাদেখি করলাম। তবে দামটা মোটামুটি ভালো। বাজারে অন্য কোন ঝামেলা নেই, আশা করছি সাধ্যের মধ্যে গরু কিনতে পারবো। '
হাটের ইজারাদার মো রহিমুদ্দিন হায়দার রিপন বলেন , উত্তরবঙ্গের একটি শ্রেষ্ঠ হাট এই যাত্রাপুর।প্রতিবছরে এই হাট জমজমাট হয়, এবারও হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য এখানে পুলিশ আছে, সেনাবাহিনী আছে,।অন্যান্য ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যাংকের লোকজন আছে প্রাণিসম্পদের লোকজন আছে।
আমরা একটি চমৎকার ব্যবস্থাপনা চেষ্টা করেছি। তবে কে যে পরিমাণে গরু উঠেছে সেই অনুযায়ী পাইকারেরা বাইরে থেকে আসেনি। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যাতে করে বাইরে থেকে পাই কেড়ে না এখানে আসে। বাইরের পাইকারদের জন্য থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য যে ব্যবস্থাগুলি আছে সেগুলি সুন্দর করেছি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, ডা. মো. হাবিবুর রহমান দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ' কোরবানিকে কেন্দ্র করে জেলায় ৩ লক্ষ পশু প্রস্তুত আছে। আমাদের জেলায় কোরবানির জন্য পরশু চাহিদা রয়েছে ২ লক্ষ ৫০ হাজার। সেক্ষেত্রে আমাদের জেলায় কোরবানি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে ৫০ হাজার। জেলায় কোন সংকট নেই, দাম তাই অনেকটা স্বাভাবিক থাকবে।
হ্যাপী