ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রাম্পের জন্মদিনে ট্যাঙ্কের গর্জন! সেনা কুচকাওয়াজ না একনায়কতন্ত্রের মহড়া?

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ১৫ জুন ২০২৫

ট্রাম্পের জন্মদিনে ট্যাঙ্কের গর্জন! সেনা কুচকাওয়াজ না একনায়কতন্ত্রের মহড়া?

ওয়াশিংটনের রাস্তায় গর্জে উঠেছিল ট্যাঙ্ক, আকাশে ঘুরছিল সামরিক হেলিকপ্টার আর যুদ্ধবিমান। সেই সঙ্গে ছিল সুর-আলোয় মোড়া এক জমকালো কুচকাওয়াজ। যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর ২৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আর সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিন দুই উদযাপন একসূত্রে গাঁথা হয়ে উঠেছিল শনিবারের এই মহড়ায়।

অনেকের কাছে এটি ছিল এক গর্বের উপলক্ষ, আবার কারও চোখে এটি ছিল এক ব্যক্তির ক্ষমতার প্রদর্শনী। কারও কাছে এটি ছিল ‘দেশপ্রেম’, আবার কারও কাছে ‘একনায়কোচিত আচরণ’।

ট্রাম্পের ভাষায়, “প্রতিটি দেশ তাদের বিজয় উদযাপন করে। আমেরিকাও এখন তা করুক। আজ রাতের আয়োজন সেই বার্তাই দিচ্ছে।” তবে অনেক সমালোচক বলছেন, এই মহড়ার লক্ষ্য সেনাবাহিনী নয়, বরং ট্রাম্প নিজেই।

কুচকাওয়াজের শেষে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, “১৪ জুন শুধু সেনাবাহিনীর জন্মদিন নয়, এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্মদিনও। শুভ জন্মদিন, মিস্টার প্রেসিডেন্ট।”

এই ‘দুই জন্মদিন’কে ঘিরে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, সেনাবাহিনীর নাম করে ট্রাম্প নিজের জন্মদিনকে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে পরিণত করেছেন।

একনায়কোচিত না গর্বের আয়োজন?
লোগান সার্কেলে শতাধিক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন কুচকাওয়াজের প্রতিবাদ জানাতে। তাদের একজন, প্রাক্তন মেরিন সেনা টেরি মাহোনি বলেন, “একজন প্রেসিডেন্ট যিনি সংবিধানকে পদদলিত করেছেন, তাঁর করা এই মহড়া শুধু দেখানোর আয়োজন নয় এটা ভয়ংকর বার্তা বহন করে।”

অন্যদিকে, কাছাকাছি এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা দক্ষিণ ক্যারোলিনা থেকে আসা তরুণ তরাস ভোরনি বলছিলেন, “আমার কাছে এটি সেনাবাহিনীকে সম্মান জানানোর একটা সুযোগ। আর হ্যাঁ, ট্রাম্পও এখানে থাকবেন।”

২০১৭ সালে প্যারিসে ফরাসিদের বসতিন দিবস উদযাপন দেখে ট্রাম্প বড় একটি সামরিক কুচকাওয়াজ আয়োজনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে প্রথম মেয়াদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আপত্তির মুখে তা হয়নি।

এবার তিনি সেই স্বপ্নকে বাস্তব করেছেন ২৮টি অ্যাব্রামস ট্যাঙ্ক, অসংখ্য সাঁজোয়া যান, হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান নিয়ে আয়োজন করেছেন ১৯৯১ সালের উপসাগর যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সামরিক প্রদর্শনী।

নর্থ ক্যারোলিনা থেকে আসা ৬৩ বছর বয়সী সাবেক সেনা ফ্রেডি ডেলাক্রুজ বলছিলেন, “আমার বিয়েও হয়েছিল ৬ জুন, যেটা ডি-ডে। কাজেই জন্মদিন আর ঐতিহাসিক দিন মিলে যাওয়া নতুন কিছু নয়। আমি এসেছি সেনাবাহিনীকে সম্মান জানাতে, ট্যাঙ্ক আর বিমান দেখতে।”

তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ, বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানো নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

মিয়ামির ৫৭ বছর বয়সী সাবেক সেনা অ্যারন বলেন, “গভর্নররা যদি নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারেন, তাহলে প্রেসিডেন্ট কেন ন্যাশনাল গার্ড পাঠাতে পারবেন না?”

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি নিকারাগুয়ায় জন্মেছি, জানি একনায়ক কাকে বলে। ট্রাম্প একনায়ক না। তিনি শুধু নিজের কাজ করছেন।”

অন্যদিকে, টেক্সাসের তরুণী অনাহি রিভাস-রদ্রিগেজের চোখে এই কুচকাওয়াজ ভয়াবহ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। “আমার চেনা অনেক মানুষ এখন ভয়ে আছে। আমরা এমন আমেরিকা চাই না যেখানে গায়ের রঙ দেখে মানুষকে আলাদা করা হয়।”

তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমি যে আমেরিকায় বিশ্বাস করি, সেখানে মানুষ প্রতিবাদ করতেই পারে। এই কণ্ঠরোধের সংস্কৃতি ভয়ংকর।”

যদিও ট্রাম্প বলেছিলেন, যারা শনিবার প্রতিবাদে আসবেন, তাদের “মুখোমুখি হতে হবে শক্ত প্রতিরোধের”, তবে ডিসি-তে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। “নো কিংস” আন্দোলনের আয়োজকেরা ডিসি-তে কোনও আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি না রেখে অন্যান্য শহরে প্রতিবাদ করেন।

৭৭ বছর বয়সী রোল্যান্ড রোএবাক, একজন কৃষ্ণাঙ্গ ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রবীণ। তিনি বলেন, “ট্রাম্প যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, তখন আমরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। এখন এসে তিনি সামরিক গর্ব দেখাচ্ছেন এটা প্রহসন ছাড়া কিছু না।”

তাঁর মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের নানা পদক্ষেপ, বিশেষ করে সামরিক বাহিনীতে বৈচিত্র্য আর সমতার উদ্যোগে কাটছাঁট, কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘু সেনাদের অবদানকে খাটো করছে।

ট্রাম্পের জন্মদিন আর সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একযোগে উদযাপন একদিকে যেমন উদ্দীপনা ছড়িয়েছে, তেমনি জন্ম দিয়েছে তীব্র বিতর্কের। দেশজুড়ে এই প্রশ্ন এখন গভীরভাবে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এই আয়োজন কি সত্যিই গর্বের উপলক্ষ, নাকি এক নতুন ধরনের রাজনীতির আগমনী সঙ্কেত?


সূত্র:https://tinyurl.com/2zfsk64p

আফরোজা

×