
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার টিকফা চুক্তির বেশকিছু অগ্রগতি হয়েছে
চুক্তি হওয়ার দীর্ঘ ১০ বছর পর এবার বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার টিকফা চুক্তির বেশকিছু অগ্রগতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আসবে বাংলাদেশে, আর সেই তুলায় উৎপাদিত পোশাক রপ্তানি হবে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটি থেকে আমদানিকৃত তুলা থেকে তৈরি হবে উন্নতমানের সুতা ও কাপড়। বাংলাদেশের এসব উদ্যোগের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। একইসঙ্গে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি হলে টিকফা থেকে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ অর্জন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুধু তাই নয়, যুক্তরােেষ্ট্রর তুলায় উৎপাদিত পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একইসঙ্গে জিএসপির সংবেদনশীল তালিকায় নেই এমন ধরনের পণ্য রপ্তানিতেও শুল্ক সুবিধা দেওয়া হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে এ মুহূর্তে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ বিশেষ করে তুলা ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানি বাড়াতে চায়।
বুধবার ঢাকায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সংক্রান্ত পরিষদের সপ্তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। অন্যদিকে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী ব্রেন্ডান লিঞ্চ যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, তারা (মার্কিন প্রতিনিধিরা) আমাদের বলেছেন, যেসব পণ্য জিএসপির সেন্সেটিভ লিস্টে নেই ওই সব পণ্য এবং তাদের কাছ থেকে আমদানিকৃত তুলায় তৈরি পোশাক সেখানে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা কী উপায়ে দেওয়া যায়, সেটি নিয়ে তারা কাজ করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলাপ করবেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের চাহিদার প্রায় ১৪ শতাংশ তুলা আমদানি হয়। এই তুলায় তৈরি পোশাক যাতে ডিউটি ফ্রি সুবিধা পায় বৈঠকে সেকথা বলেছি। তারা নোট নিয়েছে এবং বলেছেন, উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করবেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে ১৫ শতাংশের ওপরে শুল্ক দিতে হয়। এ ছাড়া ভবিষ্যতে দেশটি থেকে আরও বেশি তুলা আমদানি করা হতে পারে। এ ছাড়া টিকফা পরিষদের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে শ্রম সংস্কার নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশ ও ডিজিটাল বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে এমন নীতি, মেধা সম্পদের সুরক্ষা ও আইনের প্রয়োগ এবং কৃষি খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানিয়েছে যে, শ্রমিকদের সংগঠন করার স্বাধীনতা ও যৌথ দর-কষাকষি করতে পারাসহ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দল শ্রমিক ও ইউনিয়ন সংগঠকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলায় ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি ইউনিয়ন-বিরোধী বৈষম্য ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অন্যান্য অন্যায্য চর্চা প্রতিরোধের ওপর জোর দিয়েছে।
এ ছাড়া কারখানায় শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধান আরও সহজ করার তাগিদ রয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে। বর্তমানে যে কোনো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করতে হলে অন্তত ২০ শতাংশ শ্রমিকের লিখিত সম্মতির প্রয়োজন হয়। এটি কমানোর জন্য দেশটি অনুরোধ জানিয়েছে বলে জানান সচিব। এ ছাড়া বৈঠক নিয়ে আশাবাদী পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।
তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি হবে আর সেই তুলায় উৎপাদিত পোশাকে যদি শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া যায় সেটি হবে বড় অর্জন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক দেশ। প্রতিবছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানিও করে। অন্যদিকে, বৃহত্তম তুলা রপ্তানিকারক হলো যুক্তরাষ্ট্র।
পোশাক রপ্তানির জন্য বাংলাদেশের তুলার চাহিদা বার্ষিক ৯০ লাখ বেল। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় মাত্র দেড় লাখ বেল, যা মোট চাহিদার মাত্র ১.৬ শতাংশ। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলার ফিউমিগেশন বা বিষবাষ্পীকরণের মাধ্যমে পতঙ্গমুক্ত করার বাধ্যবাধকতা বাতিলের সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ কৃষি ক্ষেত্রে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ক সংলাপে পরস্পরকে সহযোগিতা করেছে এবং এ বছরে এ খাতে আরও গভীরভাবে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে উভয় দেশ কাজ করছে। টিকফা পরিষদের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে শ্রম সংস্কার নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশ ও ডিজিটাল বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে এমন নীতি, মেধা সম্পদের সুরক্ষা ও আইনের প্রয়োগ এবং কৃষি খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।
উল্লেখ্য, টিকফা স্বাক্ষর হয় ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। এর আগে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তি (টিফা) নামে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশকে চুক্তি স্বাক্ষরের তাগিদ দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। টিফাই পরে টিকফা হয়। চুক্তিতে বলা হয়, বছরে কমপক্ষে একবার এ ফোরামের বৈঠক হবে। সে অনুযায়ী ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকায় প্রথম ও ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় বৈঠক হয়।
গত দশ বছরে ৬টি বৈঠক হলেও দৃশ্যমান কোনো ফল দেখা যায়নি। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরই টিকফা কার্যকর করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারের বৈঠকটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।