ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

শরীরে ভিটামিন ডি কম? এই ৫টি উপসর্গ দেখলেই সতর্ক হোন!

প্রকাশিত: ০৮:০৭, ১৫ জুন ২০২৫

শরীরে ভিটামিন ডি কম? এই ৫টি উপসর্গ দেখলেই সতর্ক হোন!

ভিটামিন ডি, যাকে বলা হয় "সূর্যালোকের ভিটামিন", মানবদেহের হাড়কে মজবুত, পেশিকে কর্মক্ষম এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অথচ ভারতের মতো উষ্ণ ও রৌদ্রপ্রচুর দেশে প্রতি চারজনের একজন ভিটামিন ডি ঘাটতির সমস্যায় ভুগছেন। পর্যাপ্ত রোদে না যাওয়া, অতিরিক্ত এসি ব্যবহার এবং অপুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস এই ঘাটতির অন্যতম কারণ।

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হলেও, শরীর নিজেই কিছু সতর্কবার্তা দিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিতে পারে। নিচে এমন ৫টি সমস্যার কথা তুলে ধরা হলো, যা উপেক্ষা করা বিপজ্জনক হতে পারে।

১. দুর্বল ও ব্যথাযুক্ত হাড়

ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণে সহায়তা করে, যা হাড় গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যথেষ্ট ভিটামিন ডি না থাকলে, এই খনিজগুলো যথাযথভাবে শোষিত হয় না। ফলে হাড় নরম, দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।

শিশুদের ক্ষেত্রে এর চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় রিকেটস নামে এক রোগে, যেখানে হাড় মোচড়ানো বা বাঁকা হয়ে যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই অবস্থাকে বলা হয় অস্টিওম্যালেশিয়া, যার ফলে হাড়ে ব্যথা ও পেশিতে দুর্বলতা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি অস্টিওপোরোসিস নামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যেখানে হাড় এতটাই ভঙ্গুর হয়ে পড়ে যে হালকা আঘাতেও ভেঙে যেতে পারে।

২. পেশির দুর্বলতা ও ব্যথা

ভিটামিন ডি পেশির সঠিক কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। এর ঘাটতির কারণে পেশিতে দুর্বলতা, খিঁচুনি বা ব্যথা দেখা দিতে পারে। শরীর ভারসাম্য রাখতে বা দৈনন্দিন কাজ করতে ক্লান্তি বা অসুবিধা অনুভব হয়।

বয়স্কদের ক্ষেত্রে পাঁজর ও উরুর আশপাশের পেশিতে দুর্বলতা দেখা যায়, যার ফলে হাঁটাচলায় সমস্যা হতে পারে এবং পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক সময় হাতে-পায়ে ঝিকঝিক বা খিঁচুনি অনুভূত হতে পারে।

৩. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা

সারা দিন ধরে ক্লান্ত লাগা কিংবা বিশ্রাম নিয়েও না ঘুচা অবসাদ ভিটামিন ডি ঘাটতির অন্যতম লক্ষণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম, তাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তির প্রবণতা বেশি।

ভিটামিন ডি শরীরের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন এর মাত্রা কমে যায়, তখন শক্তি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে দৈনন্দিন কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায় এবং মানসিক উদ্যম হারিয়ে যায়।

৪. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা

ভিটামিন ডি রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করে। এটি ঠান্ডা, ফ্লু এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে।

যাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে, তাদের বারবার সর্দি-কাশি, ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এমনকি কোভিড-১৯ সহ কিছু ভাইরাস সংক্রমণের তীব্রতা কমাতেও ভিটামিন ডি ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।

৫. মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ও বিষণ্নতা

ভিটামিন ডি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং মনের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এর ঘাটতির সঙ্গে বিষণ্নতা, উদ্বেগ, মন খারাপ বা অনিদ্রার মতো মানসিক সমস্যার যোগ রয়েছে।

বিশেষত বয়স্কদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মানসিক স্বাস্থ্যে স্পষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত, প্রয়োজন অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে মনোভাব কিছুটা উন্নত হতে পারে এবং বিষণ্নতার লক্ষণও হ্রাস পায়।


ভিটামিন ডি-এর অভাব নিছক একটি পুষ্টিগত সমস্যা নয়, এটি শরীর ও মনের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার রাখা, নিয়মিত রোদে থাকা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা প্রয়োজন। অবহেলা করলে, এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই স্বাস্থ্য সচেতনতা শুরু হোক সূর্যের আলো থেকে।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/2s4f8wbv

আফরোজা

×