ছবি:সংগৃহীত
রুপালি জগতের বহু পুরনো একটি ধারণা হলো, বিয়ের পর নায়িকাদের ক্যারিয়ার নাকি ধীরে ধীরে থিতিয়ে আসে। সংসার, সন্তান এবং দায়িত্বের ভারে কেউ কেউ অভিনয় থেকে দূরে সরে যান, কেউ আবার নিজেদের ‘প্রায়োরিটি’ বদলে ফেলেন। তবে সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চলেছেন ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক।
দুই সন্তানের মা হয়েও এখনও অভিনয়ে সক্রিয় কোয়েল। পারিবারিক দায়িত্ব সামলে, দুই সন্তানের মা হয়ে তিনি যেভাবে নিজের অভিনয়জীবন টিকিয়ে রেখেছেন, তা নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক। সম্প্রতি এক দুপুরে পরিবার, মাতৃত্ব এবং ক্যারিয়ার নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি।
প্রায় দুই বছর পর আবারও বড় পর্দায় ফিরছেন কোয়েল। তবে শুটিং নয়, ছবির প্রচারে বেশি চাপে থাকেন বলে জানালেন অভিনেত্রী। তার ভাষায়, “শুটিংয়ের সময় মাঝে বিরতি মেলে, কিন্তু ছবির প্রচার চলাকালীন সেই সুযোগ থাকে না। ছবি মুক্তির দিন পর্যন্ত দর্শকদের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করি।”
গত ডিসেম্বরেই দ্বিতীয়বার মা হয়েছেন কোয়েল। পরিবারে এসেছে এক কন্যাসন্তান। ফলে পেশাগত ক্ষেত্রেও এসেছে কিছু পরিবর্তন। কোয়েল বলেন, “আগে স্ক্রিপ্ট হাতে পেলেই সঙ্গে সঙ্গে পড়ে ফেলতাম, মিটিং করতাম, নিজেকে প্রস্তুত করতাম। এখন কবীরের (ছেলে) সময় অনুযায়ী সব কিছু করতে হয়।”
মাতৃত্বের অভিজ্ঞতা তাঁকে অনেকটা বদলে দিয়েছে বলেও জানান কোয়েল। তিনি বলেন, “আগে ভাবতাম কিছুই পারি না, এখন দেখি মাল্টিটাস্কিং করতে পারি। নিজেই নিজেকে দেখে অবাক হই।”
ছেলেকে একা বাড়িতে রেখে কাজ করতে কষ্ট হয় কোয়েলের। তবে প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট রুটিন বানিয়ে তবেই বের হন। “সিসিটিভিতে দেখি ও একা একা ঘরে বসে আছে—মনটা খুব খারাপ হয়। স্কুল থেকে ঠিকমতো ফিরল কি না, কী খাচ্ছে, সব কিছুই নজরে রাখি,” বলছিলেন তিনি।
কর্মজীবী মা হিসেবে কোয়েলের চ্যালেঞ্জ আরও অনেক। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় প্রেরণা বাবা রঞ্জিত মল্লিক। “আমার ছোটবেলায় বাবা প্রায় সারাবছর কাজ করতেন, কিন্তু কখনও তাঁর অনুপস্থিতি অনুভব করিনি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই হয়তো আজ আমি নিজেও অনেকটা সামলে নিতে পারি,” বলেন কোয়েল।
তবে বাবা-মা দু’জনকেই বাইরে সময় দিতে হয় বলে তাঁর সন্তানরা অন্যরকম অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে—এ কথাও অকপটে স্বীকার করেন অভিনেত্রী। “শৈশবে বাবা না থাকলেও মা তো ছিলেন। এখন তো আমরা দু’জনেই বাইরে থাকি। তবু বলব, সন্তানের জন্য মায়ের স্পর্শটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
বিয়ে, সন্তান আর ক্যারিয়ারের ভারসাম্যে কোয়েলের এমন দৃঢ় অবস্থান প্রমাণ করে, নারীর পেশাগত সাফল্য কোনও ব্যক্তিগত ভূমিকার বাঁধনে থেমে যায় না—শুধু প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস আর সময়জ্ঞান।
আঁখি
