
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সোমবার দিলনাওয়াজ শীর্ষক নৃত্যনাট্যের কারিগরি মঞ্চায়ন হয়
চলতি বছরের ভালোবাসা দিবসে ঢাকার নাট্যমঞ্চে পরিবেশিত হয় নৃত্যনাট্য ‘দিলনাওয়াজ’। চিরন্তন প্রেমের গল্পে নৃত্যের ঝংকারে মঞ্চ মাতিয়েছিল নৃত্য সংগঠন সাধনা প্রযোজিত প্রযোজনাটি। নৃত্যনাট্যটির প্রথম ও দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হয়েছে। এবার হবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রদর্শনী। আগামী দুই দিন নাটকটির আরো দুটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
আজ মঙ্গল ও কাল বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে নৃত্যনাট্যটির তৃতীয় ও চতুর্থ মঞ্চায়ন হবে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় নাটকটির কারিগরি মঞ্চায়ন হয়। প্রায় অর্ধশত বছর আগে ‘দিলনাওয়াজ’ নামের এই ভালোবাসার উর্দু গল্পটি লিখেছিলেন বাংলাদেশি লেখক রাহাত আরা বেগম। উর্দু থেকে বাংলায় গল্পটি অনুবাদ করেন লেখক ও অনুবাদক সালেহ ফুয়াদ।
নৃত্যনাট্যটির গল্পে দেখা যায়, রাজপ্রাসাদে শাহজাদা শমসেরের সঙ্গে বেড়ে ওঠা এক বাঁদি দিলনাওয়াজ। কৈশোর থেকে তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। সেই সুবাদে একে অপরকে পছন্দ করে। পরবর্তীতে তারুণ্যে দুজনার মনের গহিনে প্রেমের অনুভূতি তৈরি হয়। তবে মুখ ফুটে কেউ সেটা প্রকাশ করতে পারে না। বাঁদি হয়ে শাহজাদাকে কীভাবে প্রেমের কথা বলবে দিলনাওয়াজ? শেষ পর্যন্ত দুজনের প্রেম পরিণতি পায়নি। উল্টো বিয়োগান্তক পরিণতির ধাবিত হয় শাহজাদা শমসের ও বাঁদি দিলনেওয়াজের প্রেমাখ্যান। সেই আখ্যানে শাহজাদি রাজিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় শাহজাদার।
এদিকে বাগানের মালিনীর দায়িত্ব পায় দিলনাওয়াজ। সেই সূত্রে দিলনাওয়াজকে দুটি ফুলের মালা গাঁথতে হয়। একটি শাহজাদাহ শমশেরের জন্য; আরেকটি শাহজাদি রাজিয়ার জন্য। মালা গেঁথে দিলনাওয়াজ সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষায় থাকে। স্বামী-স্ত্রী দুজনে সময় কাটাতে বাগানে এলে মুখে হাসি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মালা দুটি দুজনের গলায় পরিয়ে দিয়ে নতজানু হয়ে সসম্মানে সেলাম ঠোকে। এটাই হয়ে ওঠে তার প্রতিদিনকার রুটিনকাজ। অন্তরের বেদনায় দিলনাওয়াজ দিনদিন শুকিয়ে যায়। ভেতরে ভেতরে প্রেমের অনল শরীরের সৌন্দর্য শেষ করে তাকে হাড্ডিসার কঙ্কালে পরিণত করে।
প্রেমের আগুন তাকে ধীরে ধীরে পুড়িয়ে অঙ্গার বানিয়ে ছাড়ে। শরীরে এখন আর কোনো বল নেই। মালা পরাতে গেলে হাত কাঁপে। একদিন শাহজাদা ও শাহজাদিকে ফুলের মালার পরিয়ে দেয়ার পরমুহূর্তেই মাটিতে ঢলে পরেন দিলনাওয়াজ। তার চোখ হয়ে যায় পাথরের মতো নিষ্পলক। শাহজাদাহ নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। শেষ মুহূর্তে তিনি দিলনাওয়াজের ওপর ঝুঁকে এলেন। আলতো করে কপালে চুমু এঁকে দিলেন। মাটি থেকে তোলার চেষ্টা করলেন। কিন্তু শরীর ছুঁতেই ভয়ে দু কদম পিছিয়ে এলেন। কাকে স্পর্শ করবেন! দিলনাওয়াজ তো আর ওখানে নেই, পড়ে আছে শুধু তার প্রাণহীন নিথর দেহ!
‘দিলনাওয়াজ’-এ নাম ভূমিকায় নৃত্যাভিনয় করেছেন মুবাশশীরা কামাল ইরা। তিনি মূলত ভরতনাট্যম শিল্পী হলেও দিলনাওয়াজে কত্থক ও সুফি নৃত্য পরিবেশন করেছেন। শাহজাদা শমসেরের ভূমিকায় নৃত্যাভিনয় করেছেন আবু নাঈম ও রাজবধূর ভূমিকায় উম্মে হাবিবা। তারা ছাড়াও এ নৃত্যনাট্যে অংশ নেবেন একঝাঁক নৃত্যশিল্পী।
‘দিলনাওয়াজ’-এর নৃত্য পরিচালনা করেছেন সাব্বির আহমেদ খান। সংগীত পরিচালনা করেছেন রাতুলশংকর ঘোষ। শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন লুবনা মারিয়াম।