ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রায় ৮শ’ শ্রমিকের হাসপাতালে ভর্তি, তদন্ত শুরু

ঈশ্বরদী ইপিজেডে ডায়রিয়ায় দুই নারীর মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী, পাবনা

প্রকাশিত: ২১:৩০, ৪ জুন ২০২৫

ঈশ্বরদী ইপিজেডে ডায়রিয়ায় দুই নারীর মৃত্যু

বিষাক্ত পানি পান করে অসুস্থ হওয়া শ্রমিকরা চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালে

ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) বিভিন্ন কারখানায় বিষাক্ত পানি পান করে অসুস্থ হওয়া প্রায় সাড়ে ছয়শ’ শ্রমিকের মধ্যে দুইজন মহিলা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে নাকানো কারখানার স্যুইং মাহফজা খাতুনের (২৫) মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তার ঈশ^রদীর জামতলাস্থ বাসায়। এর আগের দিন রবিবার মধ্যরাতে আইএইচএম নামক কারখানার অপারেটর সুস্মিতা খাতুন কনার (২৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের খমিন ইসলামের স্ত্রী এবং ১ সন্তানের জননী।

এদিকে দুই নারী শ্রমিকের মৃত্যু এবং প্রত্যেকটি কারখানার  শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে অসুস্থ শ্রমিক ও এলাকার সচেতন মহলের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ব্যাপক অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক ও মৃত্যু হওয়া শ্রমিক পরিবারের দেওয়া তথ্যসূত্রে এই মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত হওয়াগেছে। ওই নারী শ্রমিক কনার স্বামী খমিন ইসলাম একই কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন। খমিন ইসলাম জানান, শনিবার দুপুরে কোম্পানিতে খাবার ও পানি খাওয়ার পর থেকে কণার বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়।

এর পরও অসুস্থ শরীর নিয়ে রবিবার সে কর্মস্থলে যায়। সেখানে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে ইপিজেডের মেডিক্যাল সেন্টারে তাকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। কণা কিছুটা সুস্থ হলে সন্ধ্যায় তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। রাতে তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে, হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্ততি নিতে নিতেই বাড়িতেই কণার মৃত্যু হয়। 
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইপিজেডের রেনেসা বারিন্ড, অস্কার, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিওসহ প্রায় ২৪টি কারখানায় পর্যায়ক্রমে দুপুরের খাবারের পর কারখানার পানি খাওয়ার পর থেকে পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর, বমি ও মাথা ব্যথায় শ্রমিকরা অসুস্থ হতে শুরু করে। পরে মধ্যরাত থেকে শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবারও শত শত শ্রমিক পেটের সমস্যা ও ডায়রিয়া নিয়ে চিকিৎসা নিতে ইপিজেডের মেডিক্যাল সেন্টার, ঈশ্বরদী হাসপাতাল, লালপুর হাসপাতাল, পাবনা সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে আসেন। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি চলে গেলেও তারা সুস্থ হতে পারেননি।

ইপিজেডের পানি পান করে রেনেসাঁ, নাকানো, এ্যাবা ও রহিম আফরোজ, আইএইচএম, স্টিল হেয়ার, অস্কার বাংলাসহ কয়েকটি কোম্পানির শত শত শ্রমিক প্রথমে অসুস্থতার শিকার হয়েছেন। পরে সকল কারখানার শ্রমিকরা পর্যায়ক্রমে অসুস্থ হয়ে শ্রমিকরা ইপিজেডের মেডিক্যাল সেন্টার ও ঈশ্বরদী হাসপাতাল, লালপুর হাসপাতাল, পাবনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এসব হাসপাতালে বর্তমানে তিল ধারণের জায়গা নেই। স্যালাইন লাগিয়ে রোগীরা বেড সংকুলান না হওয়ায় বারান্দা, করিডোর ও সিঁড়িতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মে থেকে ৩রা জুন দুপুর পর্যন্ত পয়জনিং ও ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত ইপিজেডের ৫৩৮ জন কর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ইপিজেডের মেডিক্যাল সেন্টারে গত ২৯ মে ২৩১ জন, ৩১ মে ৩৫৫ জন এবং ১ জুন দুপুর পর্যন্ত ৬৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম কর্মীদের মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক উল্লেখ করে সাংবাদিকদের  বলেন, ওই কোম্পানি এবং আমাদের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। কোম্পানি তাদের আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে।তিনি আরও জানান ঈশ^রদী ইপিজেডের মোট চলমান ২৪টি কারখানায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। হঠাৎ করে পানি জনিত কারণে শ্রমিকদের অসুস্থ হয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার কারণে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইইসিডিআর থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত টিম করে পাঠানো হয়েছে। ওই টিমের প্রধান ডাক্তার মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে ইপিজেডের কারখানাগুলোতে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। 
একইভাবে পানি পরীক্ষার জন্য ইপিজেডের পক্ষ থেকে সিম্পল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তদন্ত টিমের ফলাফল ও পানি পরীক্ষার রেজাল্ট পাওয়া গেলেই শ্রমিকদের অসুস্থ হওয়ার প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

×