ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

‘বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের মাইলফলক ‘মুজিব’

গৌতম পাণ্ডে

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ১৬ অক্টোবর ২০২৩

‘বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের মাইলফলক ‘মুজিব’

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রের শুরুটা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দীশালা থেকে ইংল্যান্ড ও ভারত হয়ে (যদিও ছবিতে নেই!) বঙ্গবন্ধু পা রাখেন বাংলাদেশে। বিমান থেকে নেমে বাংলার মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে শুরু হয় মহামানবের যাত্রা। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে তিনি ঘোষণা করেন বাংলাকে পুনর্গঠনের বার্তা। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা (রেনু) মুজিবের বয়ান বা স্মৃতিচারণে ক্রমশ উঠে আসে তার স্কুল জীবন, নেতাদের সামনে স্কুলের ছাদ থেকে পানি পড়ার ঘটনা, কলকাতার বেকার হোস্টেলের জীবন, তাদের বিয়ে, শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য সন্তানের জন্ম, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, বারবার গ্রেপ্তার হওয়া, ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়ি, ছয় দফা ঘোষণা ও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি হায়েনাদের আত্মসমর্পণ এবং  স্বাধীন বাংলাদেশে তার ফিরে আসার ঘটনা।

স্বাধীন দেশে সংবিধান প্রণয়ন, নির্বাচন, বাকশাল গঠন, শেখ কামাল ও শেখ জামালের বিয়ে, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বিদেশ গমন এবং শেষমেশ ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হবার ঘটনা দিয়ে শেষ হয় ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ ছবিটি।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ১৩ অক্টোবর দেশব্যাপী প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। এতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। ছবিটি পরিচালনা করেছেন ভারতের প্রখ্যাত নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ সিনেমাটিতে দুই দেশের দুই শতাধিক শিল্পী অভিনয় করেছেন। শুক্রবার থেকে সিনেপ্লেক্সসহ দেশের ১৫০ টি প্রেক্ষাগৃহের ১৮০টি পর্দায় দেখানো হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর এ সিনেমা। সাম্প্রতিক এটা একটা রেকর্ড সৃষ্টি হলো। মুক্তির পর থেকে চারদিন সমানতালে দর্শকের ভিড় লেগে আছে সিনেমা হলগুলোতে।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনানির্ভর ছবি ‘মুজিবÑএকটি জাতির রূপকার’। বড় বাজেট এবং তারকাবহুল ছবি। বাঙালির সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি নিয়ে নির্মিত বহুদিন মনে রাখার মতো এক ছবি। ছবিটি ভারতে মুক্তি পাবে ২৭ অক্টোবর।
এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন শ্যামা জায়েদি ও অতুল তিওয়ারি। এতে বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিব্যজ্যোতি আর বড়বেলার চরিত্রে আরিফিন শুভ। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনজন। একবারে শিশু বয়সে একজন শিশুশিল্পী, ১২ থেকে ১৭ পর্যন্ত প্রার্থনা ফারদীন দীঘি এবং পরের জীবনে নুশরাত ইমরোজ তিশা।

শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া এবং শেখ রেহানার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাবিলা নূর। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের চরিত্রে শহীদুল ইসলাম সাচ্চু, খন্দকার মোশতাকের চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু, আবদুল হামিদ খান ভাসানীর চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, তাজউদ্দীন আহমেদের চরিত্রে রিয়াজ, বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, মাতা সায়েরা খাতুনের চরিত্রে দিলারা জামান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্রে তৌকীর আহমেদ, তোফায়েল আহমেদের চরিত্রে সাব্বির আহমেদ, টিক্কা খান চরিত্রে জায়েদ খান, মানিক মিঞার চরিত্রে তুষার খান অভিনয় করেছেন। এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের শতাধিক মানুষ এই ছবিতে অভিনয় করেছেন। সবাই কমবেশি ভালো অভিনয় করেছেন।
এই ছবিতে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত, রণসংগীত ছাড়াও একাধিক গান ব্যবহৃত হয়েছে। ‘কী কী জিনিস এনেছো দুলাল’ গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন শান্তনু মৈত্র এবং গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ঊর্মি চৌধুরী। ‘অচিন মাঝি কোন সে পাড়ের বন্ধু’ শিরোনামের গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন রথীজিৎ। গানটি লিখেছেন জাহিদ আকবর, সুরে শান্তনু  মৈত্র। এছাড়া ছবির শেষে আরেকটি বিয়োগান্তক গান ব্যবহৃত হয়েছে। ছবিটির পরিবেশক জাজ মাল্টিমিডিয়া।

এই ছবির ট্রেলার নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ এবং কলরেডি (মাইক সার্ভিস) অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ঘটনা প্রবাহ তেমন দেখানো হয়নি ছবিতে। কয়েকটি পত্রিকা বন্ধ করার ইঙ্গিতবহ একটিমাত্র দৃশ্য আছে এবং সেই দৃশ্যে শেখ ফজলুল হক মনিকে খানিক রাগান্বিত মনে হয়েছে। সেরনিয়াবাত পরিবারের হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত আছে, শেখ মনিরটা নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিশ্বাসঘাতক হিসেবে ক্রমশ আলোচনায় আসেন খন্দকার মোশতাক। একাধিক মানুষের লেখা থেকে পরবর্তীকালে জানা যায় যে, মোশতাকের সঙ্গে ফারুক রশীদদের একটা যোগাযোগ ছিল। এই ছবিতে একটা মাত্র দৃশ্যে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে মোশতাকের মিটিংয়ের ইঙ্গিত আছে। চলচ্চিত্রে সব কিছু ফুটিয়ে তোলা খুব কঠিন কাজ। তার পরও অসাধারণ এক ছবি ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’।

×