ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবে দর্শক-শ্রোতা ও সংস্কৃতিসেবীদের মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে ॥ গোলাম কুদ্দুছ

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 উৎসবে দর্শক-শ্রোতা ও সংস্কৃতিসেবীদের মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে ॥ গোলাম কুদ্দুছ

বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা বিনিময়ে শিল্পকলা একাডেমি ও মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে চলছে অষ্টমবারের মতো ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৯’। প্রতিদিন চার মঞ্চে চার নাটক এবং উৎসব প্রাঙ্গণে নাচ, গান, আবৃত্তি, পথনাটক আর মূকাভিনয়ে অংশ নিচ্ছে দুই বাংলার শিল্পীরা। বাংলা সংস্কৃতির এ মহাযজ্ঞ নিয়ে উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক সংস্কৃতিজন গোলাম কুদ্দুছের সঙ্গে কথা হয়। এবারের উৎসব নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন? গোলাম কুদ্দুছ : সব উৎসবের একটা বারতা থাকে। ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’-এর উর্ধে নয়। তবে এ উৎসব কিছুটা ভিন্ন এ কারণে, এখানে সকল ধারার সংস্কৃতিকর্মীদের এক বৃহৎ মিলনমেলা। এবারের উৎসবে বিপুল সংখ্যক দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি আমাদের আলোকিত করেছে। উৎসবের সুন্দর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তরুণ সংস্কৃতিকর্মীদের ব্যাপক অংশ ও দায়িত্ব গ্রহণ। সামগ্রিকভাবে উৎসবে নাটক, গান, আবৃত্তি, নৃত্যনাট্য, পথনাটক, শিশু সংগঠনের পরিবেশনা, মূকাভিনয় সব কিছুই দর্শকের মন ছুঁয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে বিশ্বাসী। এ লক্ষ্যে ব্যাপক সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটিয়ে মানুষকে এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে চাই। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তি, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্য সুন্দর ও কল্যাণের আদর্শে মানবিক বোধে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে সংস্কৃতির কোন বিকল্প নেই। ব্যাপক ও অত্যন্ত জমজমাট আনন্দ উচ্ছ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এ উৎসবের মাধ্যমে। দর্শক-শ্রোতা ও সংস্কৃতিসেবীদের মধ্যে যে মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে, সত্যিই কল্পনাতীত এক অভাবনীয় পরিবেশের মধ্যে আছি আমরা। আমি মনেকরি আগামী আরও দুদিনে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের পদচারণায় উৎসব অঙ্গন মুখরিত। এ উৎসব আয়োজনের মধ্যদিয়ে আমাদের সংস্কৃতির গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সকল অপশক্তি ও অনাচারের বিরুদ্ধে সুন্দরের আদর্শ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে জাগিয়ে তুলবে বলে আমি মনেকরি। উৎসবের মাধ্যমে কি মেসেজ দেয়া হলো? গোলাম কুদ্দুছ : সংস্কৃতিকর্মীরা যে ঐক্যবদ্ধ এ উৎসবের মধ্যদিয়ে সেই শক্তির প্রকাশ ঘটল। এই ঐক্যবদ্ধ শক্তির দুটি দিক। একটি হচ্ছে সংস্কৃতির নবনির্মাণে এই শক্তি প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। অন্যটি হচ্ছে এই শক্তি সকল অন্যায় অসত্য অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে নতুন করে শক্তিমান হলো। উৎসবকে আরও জীবনমুখী করতে আর কি দরকার ছিল? গোলাম কুদ্দুছ : এ উৎসবকে শুধু ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। এটাকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া জরুরী। আর তার জন্য আরও ব্যাপক সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। সে ধরনের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা এটাকে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে সক্ষম হব। নারী হত্যা, শিশু ধর্ষণসহ এখন সমাজে যে অনৈতিক কাজ হচ্ছে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এ উৎসব অনেক গুরুত্ববহন করে। এছাড়া মাদকাসক্ত তরুণদের ফিরিয়ে আনতে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং মানবিক বোধে জাগ্রত করার জন্য সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেয়ার কোন বিকল্প নেই। এই উৎসব সেই পথটি আমাদের দেখিয়েছে যে, এটি সম্ভব। সমসাময়িক এ উৎসব কোন ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে? গোলাম কুদ্দুছ : গঙ্গা-যমুনা উৎসবের মধ্যদিয়ে সব ধারার সংস্কৃতিকর্মীদের যে মিলনমেলা এটা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত আদর্শকে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা মনেকরি এটা রাজনৈতিক দলগুলোরও একটা অনুকরণীয় দিক। কিভাবে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়ে তুলতে পারে এ উৎসব তাদের জন্য এতটাই প্রাসঙ্গিক। দেশের সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের মেলবন্ধনে যদি বাংলাদেশকে গড়ে তোলা যায় তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এ উৎসবের মধ্যদিয়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের দেশের জনগণের মৈত্রীর বন্ধন আরও দৃঢ়তর হবে। অপসংস্কৃতি, ক্যাসিনো সংস্কৃতি, লুটপাট, সাম্প্রদায়িকতা পশ্চাৎপদ ধ্যান-ধারণার বিপরীতে সুস্থ ধারার সংস্কৃতির শক্তি যে সব চাইতে বড়, এটা যে মানুষকে বিকশিত করে মানুষের অস্তিত্বের ঠিকানা এই উৎসবের মধ্যদিয়ে আবার প্রমাণিত হলো। শিশু থেকে শুরু করে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মিলনের এই মহোৎসব এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের আসল চরিত্র। এই আসল চরিত্রটাকে আমরা যত বেশি ছড়িয়ে দিতে পারব ততই জাতির মঙ্গল, দেশের মঙ্গল। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এ উৎসব। উৎসবের নামকরণ নিয়ে বলুন- গোলাম কুদ্দুছ : গঙ্গা-যমুনা দুই দেশের মধ্যে প্রবাহমান নদী। উচ্চ হিমালয় থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে গেছে। আমরা মনে করি দুটি নদী যেমনই করে দুই দেশের প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন গড়ে তুলেছে, মানুষের জীবনও একইভাবে প্রবাহমান। আর মানুষই সংস্কৃতি সৃষ্টি করে। সুতরাং দুই দেশের সংস্কৃতিও অভিন্ন, আভিজাত্য। শুধু রাজনীতি আমাদের বিভক্ত করেছে। রাজনীতি আমাদের চেতনাকে শেষ করতে পারেনি। বাংলাদেশে এ উৎসবের শুরুটা কিভাবে? গোলাম কুদ্দুছ : ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অনীক নাট্যদলের আয়োজনে দলপ্রধান নাট্যজন অমলেশ চক্রবর্তী ২২ বছর আগে কলকাতায় ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব’ শুরু করেন। উৎসবে প্রতিবছর আমাদের দেশ থেকেও নাট্যদল অংশগ্রহণ করত। তখন থেকে ভাবনা আসে আমাদের দেশেও এ উৎসব হতে পারে। উৎসবে অংশ নেয়া আমাদের দেশের নাট্যদলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঢাকায় এ উৎসব করার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব’ আয়োজন করি। -গৌতম পান্ডে
×