ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সালমানের নতুন নায়িকা প্রানূতন

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৮ মার্চ ২০১৯

সালমানের নতুন নায়িকা প্রানূতন

বলিউডে লিগেসি ব্যাপারটা বেশ চোখে পড়ে। অভিনয়ে, ছবি পরিচালনা-প্রযোজনায় বংশ পরম্পরায় জড়িয়ে আছেন অনেকেই। দাদার পর বাবা এরপর সন্তান কিংবা নানির পর মা এরপর কন্যা অভিনয়ে আসছেন। এভাবেই বলিউডে লিগেসি অর্থাৎ বংশ পরম্পরায় সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এ রকম একটি পরিবারের কথা তুলে ধরছি প্রথমে। পঞ্চাশের দশকে হিন্দী চলচ্চিত্রের একজন সুঅভিনেত্রী হিসেবে বেশ ভাল অবস্থানে ছিলেন শোভনা সামর্থ। তার হাত ধরে দুই কন্যা নতুন এবং তনুজাও হিন্দী সিনেমায় আসেন। ষাট এবং সত্তর দশকে নুতন ছিলেন একজন দাপুটে অভিনেত্রী। বন্দিনী, সুজাতা, সীমা, মিলন, ম্যায় তুলসি তেরে অঙ্গন কী প্রভৃতি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। নুতনের বোন তনুজাও হিন্দী সিনেমার জগতে বিচরণ করেছেন দীর্ঘ সময়। ‘হামারি বেটি’ ‘আম্বার’, ‘আজ আউর কাল’, ‘ভূত বাংলা’, ‘জুয়েল থিফ’, ‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ‘স্বপনো কা সওদাগার, ইজ্জত, জুয়াড়ি, প্রভৃতি সিনেমায় দর্শক তাকে দেখেছে অনন্য এক অভিনেত্রী হিসেবে। অভিনেত্রী নুতনের ছেলে মোহনিশ বাহল ১৯৮৩ সালে ‘বেকারার’ ছবির মাধ্যমে হিন্দী চলচ্চিত্র অঙ্গনে পা রেখেছিলেন। তবে সবার নজর কেড়েছিলেন সালমান খান ভাগ্যশ্রী জুটির ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ ছবিতে ভিলেন চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর মোহনিশ বাহলকে দেখা গেছে ‘দিওয়ানা’ ‘হাম আপ কে হ্যায় কৌন’ ‘হাম সাথ সাথ হ্যাম’ তেরি বাঁহো মে, ‘মেরি আদালত’ ‘ইতিহাস’, ‘বাগি’ ‘হেনা’ ‘বোল রাধা বোল’ ‘প্ল্যাটফরম’, ‘আওয়ারা’ ‘ইনা মিনা ডিকা, ‘কয়লা’ ¯্রফি তুম, ‘বাস্তব’, ‘কহো না পেয়ার হ্যা’ প্রভৃতি সিনেমায়। কখনও ভিলেন আবার কখনও পজেটিভ রোল অভিনয়ের মাধ্যমে সবার আলাদা মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন মোহনিশ। একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে আশির দশকে আলোচিত তন্বী অভিনেত্রী একতা মোহিনীর সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। তারপর একতাকে বিয়ে করেন মোহনিশ। একতা বলিউডে পা রেখেছিলেন আরবাজ খানের বিপরীতে ‘সোলা সাতরায়’ নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর ‘নামচিন তাহলকা’ ‘সাজন’, ‘পাপ কি কামাই’ ‘হাম তুম আউর মম’ প্রভৃতি সিনেমায় তাকে নায়িকা কিংবা সহনায়িকা রূপে দেখা গেছে। গত ২৭ বছর ধরে সুখী দাম্পত্য জীবন পার করেছেন মোহনিশ একতা দম্পতি তার বড় সন্তান প্রানূতন বাহলের বয়স এখন ছাব্বিশ। আইন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করে একজন আইনজীবী হিসেবে পেশাদার জীবনও শুরু করেছেন ‘এলএলবি’ এবং ‘এলএলএম’ ডিগ্রীধারী এই মেধাবী সুন্দরী তরুণী। খুব ছোটবেলা থেকে পরিবারের সবাইকে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখে তার মনে অভিনয়ের ইচ্ছা জেগে ছিল। অভিনয়ের স্বপ্ন হৃদয়ে লালন করে বড় হয়েছেন তিনি। তবে তার মধ্যে একটা প্রত্যয় ছিল লেখাপড়া শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার পর অভিনয়ে আসবেন। প্রানূতন পড়াশোনো শেষে বলিউডের সিনেমায় অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে শুরু করেন ২০১৬ সাল থেকে। তারপর এক সময় সালমান খানের চোখে পড়েন এই তরুণী। তার বাবা এবং মায়ের সঙ্গে অভিনয় করেছেন সালমান। দুজনের সঙ্গেই চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সেই সূত্রে বন্ধুকন্যাকে নিজের প্রযোজিত সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে তার বিশেষ উৎসাহ ছিল। বলিউডে নতুন নতুন মুখ উপহার দেয়ার ব্যাপারে সালমান খানের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। তার হাত ধরে ইতোমধ্যে বলিউডে পা রেখেছেন ডেইজিসা, সুরু, দারুমিনি, আতিযা শেঠি, আয়শ শর্মা, ওয়ারিনা হুসেইনের মতো নতুন মুখের নায়ক-নায়িকারা। সালমান প্রায়ই তার প্রযোজিত সিনেমাগুলোতে নতুন মুখের নায়ক-নায়িকাকে ব্রেক দিতে চেষ্টা করেন। যদিও তার পৃষ্ঠপোষকতায় বলিউডে পা রাখা নতুন নায়ক-নায়িকারা পরবর্তীতে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তার পরেও সালমানের নতুন মুখ ব্রেক দেয়ার ব্যাপারে সালমানের উৎসাহে কখন ভাটা পড়েনি। আবারও রুপালি পর্দায় এক জোড়া নতুন মুখের নায়ক নায়িকা নিয়ে আসছেন তিনি নিজের প্রযোজিত নতুন সিনেমা ‘নোটবুক’-এ। যা এ সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে। সালমান খানের নতুন উপহার জাহির ইকবাল এবং প্রানূতন বাহলকে দেখা যাবে রোমান্টিক জুটি হিসেবে। ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত থাইল্যান্ডের সিনেমা টিচারস ডায়েরির হিন্দী রিমেক ‘নোটবুক’ ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে একজোড়া তরুণ-তরুণীর ভিন্ন ধরনের প্রেমকে ঘিরে। কিছুটা বৈচিত্র্যের অন্বেষণে তরুণ প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা কবির কাশ্মীরের প্রত্যন্ত হাওড় এলাকায় একটি স্কুলে চাকরি নিয়ে যায়। শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সেখানে তার আগে কাজ করে যাওয়া এক তরুণী শিক্ষকের ফেলে যাওয়া নোটবুক খুঁজে পায় সে। নোটবুকটি পড়তে পড়তে স্কুলে এর আগে কাজ করা তরুণী শিক্ষক ফিরদাওসের না বলা অনেক কথা জানতে পারে কবির। এভাবেই সে ফিরদাওসের প্রতি প্রচ-ভাবে আকৃষ্ট হযে পড়ে এবং তার প্রেমে পরে যান। এ রকম একটি অসাধারণ ভিন্নধর্মী প্রেমের গল্পে এক তরুণী স্কুলশিক্ষক ফিরদাওসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রানূতন বাহল। বলিউডে ইদানীং পা রাখা অনেক নতুন মুখের নায়িকার ভিড়ে প্রানূতনকে আলাদাভাবে বিবেচনা করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রযোজক সালমান খান। কিছুদিন আগে মিডিয়ায় সালমান খানের নতুন উপহার হিসেবে প্রানূতনের ছবি ছাপা হওয়ার পর অনেকেই চমকে উঠেছেন। তারা এই নবাগতার মধ্যে পুরনো দিনের বিখ্যাত অভিনেত্রী তার দাদি নুতনের আদল খুঁজে পেয়েছেন। নুতনের নাতনি প্রানূতন তার দাদি কিংবা বাবা-মায়ের পরিচিতি নিয়ে আলাদা সুযোগ পেতে রাজি নন। ‘আমি আমার নিজের যোগ্যতায়, মেধা ও দক্ষতায় এগোতে চাই বলিউডে, খুব ছোটবেলা থেকেই আমার অভিনয়ের স্বপ্ন ছিল। তবে তার আগেই পড়াশোনাটা শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। সে অনুযায়ী আইন বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরুর পর আমি সিনেমায় এসেছি। আমি অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হয়েই ‘নোটবুক’ ছবিতে নায়িকা ফিরদাওস চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার কাজে ছবির পরিচালক প্রযোজক সবাই বেশ সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন। আমিও আমার চেষ্টার সর্বোচ্চটা দিতে চেয়েছি। এখন দর্শক ছবি দেখে কী রায় দেন- সেটা দেখার প্রতীক্ষায় রয়েছি। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতকারে প্রানূতন কথাগুলো বলেন। দাদি এবং বাবা-মায়ের পথ ধরে হিন্দী সিনেমার অঙ্গনে পা রাখা নতুন মুখ প্রানূতন বাহল তার পারিবারিক ঐতিহ্য ও সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
×