ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় আজ প্রাচ্যনাটের নাটক ‘বন মানুষ’

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৫ জুন ২০১৮

শিল্পকলায় আজ প্রাচ্যনাটের নাটক ‘বন মানুষ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাচ্যনাটের অন্যতম জনপ্রিয় প্রযোজনা ‘বন মানুষ’ নাটকটি আবারও মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। দলসূত্রে জানা গেছে আজ সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ হলে নাটকটির মঞ্চায়ন হবে। ‘বন মানুষ’ নাটকটি প্রাচ্যনাটের ২৭তম প্রযোজনা। নাটকটি সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ মার্চ মঞ্চস্থ হয়। ইউজিন ও নীল রচিত ‘বন মানুষ’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন তরুণ নির্দেশক বাকার বকুল। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন শশাঙ্ক সাহা, তৌফিকুল ইসলাম ইমন, সাদিকা স্বর্ণা, নায়মী নাফসীন, সোহেল ম ল, এবিএস জেম, মোঃ আব্দুর রহীম খান, চেতনা রহমান ভাষা, সোহেল রানা, ফুয়াদ প্রমুখ। ধ্বনি-রিফাত আহমেদ নোবেল কোরিওগ্রাফি- পারভিন সুলতানা কলি, মঞ্চ ও আলো এবিএস জেম, পোশাক-পারভিন পারু। ‘বন মানুষ’ নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় জাহাজের খোলের ভেতর দাঁড়িয়ে ইঞ্জিনের চুল্লিতে কয়লা ভরে কয়েক শ্রমিক। তাদেরই অন্যতম হচ্ছে ইয়াংক। দেখতে প্রায় বন মানুষের মতো কালিকুলি মাখা অবস্থায় তাকে আরও বন্য মনে হয়। মিলড্রেড ডগলাস, পুঁজিপতির আদুরের কন্যা, যে পুঁজিপতি আবার এ জাহাজের পরিচালকম-লীর অন্যতম। ডগলাস এ জাহাজের যাত্রী। সে একবার জাহাজের খোলো নেমে ইয়াংককে দেখে ভয়ে চিৎকার দেয়। ইয়াংক যখন বুঝতে পারে যে তাকে উপলক্ষ করেই এই চিৎকার, তখন তীব্র একটা ঘৃণাবোধ জন্ম নেয় তার মধ্যে। ডগলাসকে কেন্দ্র করেই সারা দুনিয়ায় পুঁজিপতিদের ঘৃণা করতে থাকে সে। ভাঙতে চায় পুঁজিপতিদের ‘স্বর্গ’তুল্য প্রাসাদ। জাহাজ বন্দরে ভিড়লে সে শহরে ঘুরতে বের হয় তার এক সঙ্গীকে নিয়ে। শহরের জৌলুস ও উচ্চবিত্তের জাঁকজমক তাকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। নানা রকম পাগলামি প্রকাশ পায় তার মধ্যে। শেষে সে জেলে প্রেরিত হয়। জেল থেকে পালিয়ে সে সরাসরি চিড়িয়াখানায় বন মানুষের খাঁচার কাছে গিয়ে জন্তুটাকে ডাক দেয়। তার নিজের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য। শেষে বন মানুষের আক্রমণে নিহত হয় সে। নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক-বাকার বকুল বলেন ইউজিন ও নীল জন্মগ্রহণ করেছিলেন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে এবং দি হ্যারি এ্যাপ নাটকের মধ্য দিয়ে আঘাতও করেছিলেন পুঁজিবাদকে। নিউইয়র্ক থেকে যাত্রা করা একটি জাহাজকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী। জাহাজের খোলের ভেতর দাঁড়িয়ে ইঞ্জিনের চুল্লিতে কয়লা ভরতে থাকা কয়েকজন মানুষের গল্প। নাটকটির নির্দেশনার কাজ করতে গিয়ে সব সময় আমার কাছে মনে হয়েছে এ জাহাজটা যেন জাহাজ নয় একটি পৃথিবী। যে পৃথিবীতে শ্রেণী বৈষম্য বেড়েই চলেছে এবং এমন সিমাহীনতায় পৌঁছেছে যেখানে দিনমজুর মানুষগুলোকে উপরতলার মানুষেরা অসভ্য জানোয়ার বলে মনে করছে। প্রশ্ন আসে মহাকালের পথে ধাবমান পৃথিবী চলছে কোন শক্তিতে। জাহাজের ইঞ্জিনটাকে সচল রাখছে কারা চুল্লিতে কয়লা দিয়ে। এই নাটকের মূল চরিত্র ইয়াংকের তীব্র বেদনা বোধ ও ক্ষোভের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর লাঞ্ছিত নিপীড়ত মানুষের আর্ত হাহাকার ও ক্ষোভ ফুসে উঠেছে। জাতিগত পর্যায় থেকে পরিবার কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায় পর্যন্ত পুঁজিবাদের চর্চাটা সিঁধ কেটে ঢুকে পড়েছে চোরের মতো। যদিও সেই গোপন চর্চা বিশ্বায়নের নামে প্রকাশ্য দানবরূপে গ্রাস করছে পৃথিবীকে। বিশ্বায়ন এক ধাপ্পাবাজি। সাম্রাজ্যবাদীদের নয়া ঔপনিবেশিকতার এক সূক্ষ্ম কৌশল। নাটকের মধ্যে দিয়ে বিশ্বায়নের অপকৌশলটাকে আমরা অনুধাবন করতে চাই রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে ব্যক্তিগত পর্যায় পর্যন্ত।
×