ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্চে আসছে নাট্যালোকের ‘রূপসুন্দরী’

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মঞ্চে আসছে নাট্যালোকের ‘রূপসুন্দরী’

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ নাট্যালোক সিরাজগঞ্জের নতুন প্রযোজনা ‘রূপসুন্দরী’ নাটকটি অচিরেই মঞ্চে আসছে। তরুণ নাট্যকার মাহবুব আলম রচিত নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন অনিক কুমার সাহা। ‘রূপসুন্দরী’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন ত্বসিন, লাহিম, মমিন বাবু, জহুরুল রতন, রেজাউল, শাহানা, চিন্ময় সূত্রধর, টুটুল, আকাশ, বিপ্লব, ইমরান, আপন, তিতাস, রাফি, পাপ্পু, হাসেম, আবিদ এবং প্রান্ত। নির্দেশনার পাশাপাশি ‘রূপসুন্দরী’ নাটকের মঞ্চ ও পোশাক পরিকল্পনাও করেছেন অনিক কুমার সাহা। আলোক পরিকল্পনায় বিশিষ্ট আলোক নির্দেশক ঠান্ডু রায়হান। আবহ সঙ্গীত পরিকল্পনায় শিশির রহমান। কোরিওগ্রাফি ফারহানা কাঙ্খিতা, বাদ্যযন্ত্র এবং কণ্ঠ বিন্তি ও বাপন। দলসূত্রে জানা গেছে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের ভাসানী মিলনায়তনে ‘রূপসুন্দরী’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন এবং পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার একই মঞ্চে নাটকটির দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হবে। নাটক প্রসঙ্গে নাট্যালোক প্রধান মমিন বাবু বলেন, নাট্যকার মাহবুব আলম ‘রূপসুন্দরী’ নাটকে নারীর চিরায়ত একটি নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছেন। যুগে যুগে নারীরা কিভাবে ভোগবাদী পুরুষের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে আসছে তারই গল্প শৈল্পিকভাবে চিত্রিত করেছেন নাটকে। আর নির্দেশক অনিক কুমার সাহার নির্দেশনার গুণে সেই চিত্র আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। নির্দেশক অনিক কুমার সাহা নাট্যলোকের অভিনেতা ও কর্মীদের নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। চলছে নাটকের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। টানা মহড়ার মধ্যে দিয়ে অভিনেতা ও গানের দলের সবাই নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন। এখন শুধু উদ্বোধনী মঞ্চায়নের অপেক্ষায় নাটক ‘রূপসুন্দরী’। আমরা আশা করছি কাজটি দর্শক নন্দিত হবে। নাটকের গল্প প্রসঙ্গে নির্দেশক অনিক কুমার সাহা বলেন, সামাজিক স্বীকৃতি না থাকলে নারীর ঠিকানা আসলে কোথায়? জমিদারের ঔরসজাত সন্তান সুন্দরী কিন্তু সামাজিক স্বীকৃতি না থাকায় তাকেও পড়তে হয় জমিদারের লালসার নজরে। সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চত করতে সুন্দরীর মা সুন্দরীকে পরামর্শ দেয় বাড়ি ছেড়ে পালাতে। সুন্দরী তার মায়ের পরামর্শে বাড়ি ছেড়ে নিজের রূপ লুকিয়ে ছদ্মবেশে ঘুরতে থাকে নানা জায়গায়। বান্নির মেলায় ছলিমের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়। ঘটনাক্রমে সে আশ্রয় পায় ছলিমের বাড়িতে। আবার সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে তাদের বিয়েও হয়। বিয়ের পরে উন্মোচিত হয় তার আসল পরিচয়। শঙ্কা কেটে যায় সুন্দরীর আর রূপ উন্মুক্ত হয়। কিন্তু যে শঙ্কায় সে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় পায় ছলিমের সেই শঙ্কায় সে আষ্টেপৃষ্ঠে পতিত হয় এবার। তালুকদারের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সুন্দরীর রূপে। তালুকদারের রোষানলে পুড়ে প্রাণ যায় ছলিমের; প্রাণ যায় সুন্দরীর! পুন্ড্র নগরীর এক লোকগাথা করতোয়া নদীতে শীলাদেবীর আত্মাহুতি আর তার লাশ ভেসে ওঠার স্থানে গড়ে ওঠা বান্নির মেলা। নাট্যকার মাহবুব আলম ভিন্ন পেক্ষাপট রচনার মধ্য দিয়ে শীলাদেবীর এক পরিবর্তিত রূপ নির্মাণের চেষ্টা করেছেন । ‘রূপসুন্দরী’ নাট্যকথন প্রসঙ্গে নাট্যকার মাহবুব আলম বলেন, পুন্ড্র নগরীতে প্রায় হাজার বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কেন্দ্রীয় চরিত্র শীলাদেবী। সতিত্ব রক্ষার জন্য খরস্রোতা করতোয়া নদীর জলে আপন প্রাণের আত্মাহুতি এবং তার লাশ ভেসে ওঠার স্থানে পুণ্যস্থান ও বান্নির মেলার আয়োজন- সবই জনশ্রুতি ও কিংবদন্তির আশ্রয়ঘটন। আবার এ ঘটনের ঐতিহাসিক ভিত্তি ক্ষীণ স্পষ্ট। ঘটনা যাই হোক, লেখক মনের পীড়ার নাম ছিল শীলাদেবীর আত্মাহুতি; তাও আবার সতীত্ব রক্ষার জন্য! সেই পীড়া দমনের নিমিত্তে আরও প্রায় নয় শ’ বছর এগিয়ে এসে ব্রিটিশ শাসনের ক্রান্তিলগ্নের সময়কে আশ্রয় করে একটি গল্পের রূপায়ণ- তার নাম রূপসুন্দরী। কাল পরিক্রমায় সব ঘটনারই পরিবর্তন হয়। উন্নয়নের ছোঁয়ায় আধুনিকতা সৃষ্টির স্তরে স্তরে পরিলক্ষিত হয় কিন্তু নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি হাজার বছর পূর্বে ও পরেও অপরিবর্তিত থাকে। ‘রূপসুন্দরী’ নাটক সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিকায়ন মাত্র। আশা করছি নাট্যালোকের শৈল্পিক উপস্থাপনায় আমার লেখনী প্রাণ পাবে।
×