ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩ সেপ্টেম্বর উত্তম কুমারের ৯০তম জন্মদিন। তার জন্ম, বেড়ে ওঠা ও চলচ্চিত্র জীবনের কিছু অংশ তুলে ধরেছেন দিনেশ মাহাতো

মহানায়ক উত্তম কুমার

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মহানায়ক উত্তম কুমার

উপমহাদেশের বাংলা সিনেমায় একজনই মহানায়ক হিসেবে পরিচিত, তিনি হলেন উত্তমকুমার। মায়াবি হাসির নায়ক, সদা রোমান্টিক আর কিংবদন্তি অভিনয় জাদুকর এই উত্তম কুমারকে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে নায়ক থেকে মহানায়ক হয়েছেন। তিনি একাধারে ছিলেন অভিনেতা, চিত্রপ্রযোজক, পরিচালক ও গায়ক। চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও তিনি সফলভাবে মঞ্চেও অভিনয় করেছিলেন। টালিউডে তার আগে ও পরে তার মতো অভিনেতা আমরা পাইনি। তাইতো উত্তম কুমারের মৃত্যুর এত বছর পরেও বর্তমান তরুণ সমাজও তার ছবি সংগ্রহ করে দেখে থাকে। হয়ত এই কারণেই তিনি মহানায়ক। উত্তম কুমার ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার আহিরীটোলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং মাতার নাম চপলা দেবী। উত্তম কুমারের আসল নাম ছিল অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। প্রথম দিকের কয়েকটি ছবিতে এই নামই ছিল। পরে নাম পরিবর্তন করে হন উত্তম কুমার। মাত্র দশ বছর বয়সে গয়াসুর নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা ও পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৪২ সালে কলকাতার সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন এবং পরে গোয়েঙ্কা কলেজে ভর্তি হন। কলকাতার পোর্টে চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেনি। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পেতে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। উত্তম কুমার প্রথম নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন ১৯৪৯ সালে কামনা ছবিতে। এই ছবিতে তার নায়িকা ছিল ছবি রায়। তবে তার প্রথম অভিনীত ছবি ছিল দৃষ্টিদান (১৯৪৮) এখানে তিনি নায়ক অসিত বরণের কিশোরকালের অভিনয় করেন। বসু পরিবার (১৯৫২) ছবিতে তিনি প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩) মুক্তি পাবার পরে তিনি চলচ্চিত্র জগতে স্থায়ী আসন লাভ করেন। এই ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সফল উত্তম-সুচিত্রা জুটির সূত্রপাত হয়। ১৯৫৪ সালে জনপ্রিয়তার সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিল উত্তম-সুচিত্রার অগ্নিপরীক্ষা। ১৯৫৬ সালে নবজন্ম ছবিতে নিজের কণ্ঠে প্রথম গান গাইলেন। ১৯৫৭ সালে অজয় কর পরিচালিত হারানো সুর ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিলেন সমগ্র ভারতজুড়ে। সেই বছর হারানো সুর পেয়েছিল রাষ্ট্রপতির সার্টিফিকেট অব মেরিট। ১৯৫৭ তে বাংলা ভাষার প্রথম সম্পূর্ণ রঙ্গিন ছবি পথে হলো দেরী’তে অভিনয় করে করেন আরেক রেকর্ড। উত্তম কুমার সমসাময়িক সব নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করলেও সুচিত্রার সঙ্গে অভিনীত ছবিগুলোই ছিল বেশি সফল। যেমন সপ্তপদী চাওয়া পাওয়া বিপাশা জীবন তৃষা এবং সাগরিকা। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় দুটি ছবিতে অভিনয় করেন উত্তমকুমার প্রথমটি নায়ক (১৯৬৬) এবং দ্বিতীয়টি চিড়িয়াখানা (১৯৬৭)। অসংখ্য বাংলা ছবির মাঝেও তিনি কয়েকটি হিন্দী ছবিতে অভিনয় করেন, যার মধ্যে অন্যতম ছোটিসি মুলাকাত (১৯৬৭) দেশপ্রেমী (১৯৮২) ও মেরা করম মেরা ধরম অন্যতম। উত্তম সুচিত্রা জুটির মতো না হলেও উত্তম-সুপ্রিয়া জুটিও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কাল তুমি আলেয়া লাল পাথর, মন নিয়ে, শুধু একটি বছর, সণ্যাসী রাজা ইত্যাদি সিনেমা ব্যবসাসফল হওয়ার পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসাও পায়। বাংলা সিনেমার অনেক গান আজও মানুষের মুখে মুখে। ফেরে যেমন, নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড় কিংবা এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলতো। এরকম বহু গানের কালজয়ী অভিনীত শিল্পীটিই হলেন আমাদের মহানায়ক উত্তম কুমার। উত্তম কুমার সম্পর্কে রাজেশ খান্নার একটি মন্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে তিনি বলেছিলেন- ‘আমার তো মনে হয় যেভাবে গোটা বাঙালী জাতির মুখ দেখা যেত উত্তম কুমারের মধ্যে, সেভাবে আর কেউ পারবে না নিজের জাতকে তুলে ধরতে। এমনকি তার মতো ওভাবে ধুতির কোঁচাও ধরতে পারবে না কেউ।’ আজ হয়ত উত্তম আমাদের মাঝে নেই। তবে তার অভিনীত ছবিগুলো প্রমাণ করে তিনি কত বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন। বগুড়া শহরে একটি লন্ড্রির দোকানের নাম ’সুচিত্রা লন্ড্রি’। এক স্কুল বালক নাকি দোকানদারকে বলেছিলেন আপনার দোকানের নামের সঙ্গে আর দুটি কথা যুক্ত করতে পারলে বেশ ভাল হতো তা হলো ‘সুচিত্রা লন্ড্রি, এখানে উত্তম রূপে কাপড় ধোলাই করা হয়। এই সময়ের তরুণদের মাঝেও যে উত্তম কত প্রবল, তাই প্রমাণিত হয় করে উপরোক্ত বক্তব্যে। ২৪ জুলাই ১৯৮০ সালে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি অভিনেতা।
×