ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

বইয়ের সঙ্গে বিকেল

মামুন মিসবাহ 

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ১১ জুন ২০২৩

বইয়ের সঙ্গে বিকেল

বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব অনেক আগ থেকে। অনেকটা পথ একসঙ্গে চলেছি

বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব অনেক আগ থেকে। অনেকটা পথ একসঙ্গে চলেছি। এখনো সুযোগ হলে বইয়ের সঙ্গে ছুটে চলি দূর থেকে দুরান্তর। দিন হোক কিবা রাত; শত ব্যস্ততার মাঝেও বই হলো আপন সঙ্গী। না ঘুমিয়ে বইয়ের সাথে রাতজাগার গল্পগুলো আজও স্মৃতির দেয়ালে আঁকা। ক্লাসের ফাঁকে অথবা ক্লাসেই চুপিসারে পছন্দের বই পড়ার অনূভুতিগুলো কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়; যা কখনোই ভোলার নয়। বন্ধু আসে, বন্ধু যায়। কিন্তু, বই যে এসেছিলো বন্ধু হয়ে; ছেড়ে চলে যায়নি আজোবধি। পরম বন্ধু হয়ে রয়েছে সারাজীবনের জন্য। 
হঠাৎ করে দুপুরবেলা একটা মেসেজ আসে হোয়াটসঅ্যাপে। বিকালবেলা ক্যাম্পাসে ‘তারুণ্য’ এর একটি ছোট্ট আয়োজন রয়েছে। ক্যাম্পাসের আশপাশে যারা থাকেন তাদের উপস্থিতি একান্ত কাম্য। আয়োজনটি হবে বই নিয়ে। কেউ একজন বই নিয়ে এসেছেন সুদূর ঢাকা থেকে; যা দিতে যাচ্ছেন তারুণ্য লাইব্রেরিকে। এমন মেসেজ দেখে আয়োজনে অংশগ্রহণ করার দৃঢ় ইচ্ছা জাগে মনে; আয়োজনটি যে বই নিয়ে। সময়ের আগে পৌঁছেও গেলাম ক্যাম্পাসে। ধীরে ধীরে সকলেই উপস্থিত হলো। ভ্যানে করে বই নিয়ে হাজির হলো একজন।

এত বই দেখে যারপরনাই আশ্চর্য! ভাবিনি, এতগুলো বই পেতে যাচ্ছে তারুণ্য লাইব্রেরি। মনন ফাউন্ডেশন তাদের ইড়র ইড়ফড়ষ-বই বদল কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইৎরঃরংয ঈড়ঁহপরষ ইধহমষধফবংয থেকে পাওয়া বেস্ট কালেকশন প্রায় ১৫০টি বই তারুণ্য লাইব্রেরিকে উপহার পাঠিয়েছে। যার মধ্যে ইংরেজি ক্লাসিক নোভেল, ড্রামা এবং অডিও সিডি বুক উল্লেখযোগ্য। সবগুলো বই প্রতিনিধি হিসেবে নিয়ে এসেছেন প্রিয় আমীমুল ইহসান ভাই ও কামরুল ইসলাম রিপন ভাই। 
তারুণ্য লাইব্রেরির কার্যক্রম সম্পর্কে ক্যাম্পাসের সকলেরই জানা। প্রতি বুধবার বটতলায় বই নিয়ে বসে থাকেন তারুণ্যের সদস্যরা। যে কেউ, চাই সে তারুণ্যের সদস্য হোক অথবা তারুণ্য লাইব্রেরির সদস্য হোক; সেখান থেকে বই নিয়ে গিয়ে পড়তে পারবে। পনেরো দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার শর্তে। ২০১৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আলহামদুলিল্লাহ, এখনোবধি ধারাবাহিকভাবে কাজ চলছে পাঠকদের মন জয় করে। তারুণ্য লাইব্রেরির এই কার্যক্রমকে সামনে রেখে মনন ফাউন্ডেশন থেকে বইগুলো উপহার দেওয়া। সেক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা আমীমুল ইহসান ভাই ও রিপন ভাইয়ের প্রতি। 
অনুষ্ঠান শেষে বইগুলো মাঠে সাজিয়ে রাখা হলো ফটো তোলার জন্য। এক এক করে অনেকেই বইয়ের সঙ্গে ফটো তুলল। সকলের মুখে আনন্দঢেউ বয়ে যাচ্ছিল। বইগুলো একসঙ্গে সাজানো দেখে ভালো লাগছিল আমারও। মনে হচ্ছিল, এখনই সব বই পড়ে ফেলি। তবে, অধিকাংশ বই ছিলো ইংরেজি ভাষায়। আমি আবার ইংরেজিতে একটু দুর্বল। তবুও মন বলছিল, ইনশাআল্লাহ পড়তে পারব। বইয়ের সঙ্গে সময় কাটিয়ে বিকালটা দারুণ কাটল। স্মৃতি হয়ে থাকবে বইয়ের সঙ্গে কাটানো সেই সময়টা। 
উল্লেখ্য, তারুণ্য একটি অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও জনকল্যাণমূলক সংগঠন। যা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত। ‘অবারিত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত তারুণ্য’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ২০০৯ সালের ২৯ জলাই যাত্রা শুরু করে। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগানো, তরুণদের স্বেচ্ছাসেবী মনোভাবসম্পন্ন করে গড়ে তোলা, নেতৃত্বে দক্ষতা তৈরি, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় অংশগ্রহণ, বনায়ন, রক্তদান, শীতবস্ত্র বিতরণ, তারুণ্য লাইব্রেরি ও অসহায় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় কাজ করে তারুণ্য।

×