ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ভিটামিন সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল প্রাপ্যতার ওপর জোর 

প্রকাশিত: ১৯:২৬, ২৩ অক্টোবর ২০২৩

ভিটামিন সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল প্রাপ্যতার ওপর জোর 

ভোজ্যতেল

  • সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা আইনটি কার্যকর করছে না 

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই। এ সংক্রান্ত একটি আইন রয়েছে দেশে। আইনটি ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ আইন-২০১৩ নামে অভিহিত। 

কিন্তু গুটি কয়েক সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী বিশেষ করে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনীহার কারণে আইনটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। 

জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়ের প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে দুইজন ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। সংকট মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। তবে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ এক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। 

রাজধানীর বিএমএ ভবনে ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায় ডাক্তার এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ এসব বিষয় তুলে ধরেন। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৭ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করে।  

কর্মশালায় জানানো হয়, ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাতরণ দন্ডনীয় অপরাধ এবং একইসাথে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোন উপকরণ দিয়ে তৈরি প্যাকেটে বা পাত্রে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ সম্পূর্নভাবে নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত ২০১৭ সালের গবেষণা অনুযায়ী, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশ ড্রামে বাজারজাত করা হয়, যার ৫৯ শতাংশই ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ নয় এবং ৩৪ শতাংশে সঠিকমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ নেই। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেছে। 

কর্মশালায় আরো জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেডেড উপকরণে তৈরি কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য পণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত ড্রাম ভোজ্যতেল পরিবহণে ব্যবহার করা হয়। তাই ড্রামে বাজারজাতকৃত খোলা ভোজ্যতেল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং ভেজাল মেশানোর সুযোগ থাকে। 

এছাড়া এসব পুরাতন ড্রামে কোনো প্রকার লেবেল এবং উৎস সনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত না করায় তেল সরবরাহের উৎস চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। যা আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও বাধা সৃষ্টি করে। অস্বাস্থ্যকর ভোজ্যতেল মানুষের মধ্যে নানা ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 

কর্মশালায় জানানো হয়, ড্রামে বাজারজাতকৃত ভোজ্যতেলের ক্ষতিকর দিকগুলো চিহ্নিত করে শিল্প মন্ত্রণালয় এক নির্বাহী আদেশে জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধের নির্দেশনা প্রদান করেছে। তবে এই নির্দেশনার কার্যকর বাস্তবায়ন এখনও দেখা যায়নি। 

একইসাথে, দেশে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মোকাবেলায় ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণের বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

ভিটামিন এ-এর অভাবে অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রিকেটস-এর পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মত অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। 

কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)-এর লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন প্রোগ্রাম ও ভ্যালু চেইনের পোর্টফোলিও লিড আশেক মাহফুজ এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। 
 

 

এম শাহজাহান

×