ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

চার হাজার কোটি টাকার জুতার বাজার

​​​​​​​ইয়াহইয়া নকিব

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২ এপ্রিল ২০২৩

চার হাজার কোটি  টাকার জুতার  বাজার

ঢাকার গুলিস্তানে জমে উঠেছে জুতার পাইকারি মার্কেট। রমজানের শুরু থেকেই বর্ণিল সাজের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা

করোনার পর এবারের ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন দেশের পাইকারি জুতার ব্যবসায়ীরা। সারাবছরের মোট বিক্রির প্রায় অর্ধেকের বেশি বিক্রি হয়ে থাকে রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে। শবে বরাতের পর থেকেই মূলত খুচরা ব্যবসায়ীরা জুতার মজুত বাড়াতে থাকেন। এবারের ঈদে হাজার কোটি টাকার জুতা বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এরইমধ্যে রাজধানীর পাইকারি বাজার ঘুরে অর্ধেকের বেশি বিক্রির খবর মিলেছে।

এবারের দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ে লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মনজুর বলেন, দেশে বর্তমানে থেকে হাজার কোটি টাকার জুতার বাজার রয়েছে। তবে এবারের ঈদেই হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হওয়ার আশা করা হচ্ছে। তবে মূল্যস্ফীতি বেশি থাকায় এবার প্রত্যাশা পূরণে বেগ পেতে হতে পারে মনে করছেন তিনি। তাছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি করা জুতার দাম বেশি পড়ছে। কিন্তু এটা স্থানীয় ছোট জুতা উৎপাদনকারীদের সামনে একটি সুযোগ বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ জুতার ব্যবসায়ী।

এদিকে দেশর সবচেয়ে বড় পাইকারি জুতার মার্কেটগুলো ঘুরেও মোটামুটি পর্যায়ের বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে। দোকানে দোকানে জুতার অর্ডার কাটছেন মহাজনরা। আর গোডাউন থেকে এসব জুতা প্যাকিং করতে ব্যস্ত রয়েছেন কর্মচারীরা। বাংলাদেশে জুতার বৃহত্তম বাজার ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। মার্কেটের বড় ব্যবসা রয়েছে লোটাস সুজের। ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা অন্তু জানান, শবে বরাতের পর থেকেই ২০ রোজা পর্যন্ত অনেক চাপ থাকে। তবে এবার সে তুলনায় চাপ কিছুটা কম। প্রত্যাশার ৭০ শতাংশ পূরণ হওয়ার আশা করছেন তারা। এলসি জটিলতায় আমদানি করা মালের অর্ধেক আনতে পেরছেন তারা। তবে ১০ রোজার পর বিক্রি আরও বাড়তে পারে। সামনের মাসে মানুষ বেতন পেলে খুচরা বিক্রি বাড়বে। তখন পাইকারিতে অবার একটা ভালো বিক্রির আশা করছেন তিনি। তাদের মোট ৫০ জন কর্মচারী ঈদের বাজারকে কেন্দ্র করে ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছে।

একই মার্কেটের আরকে বড় পাইকারি প্রতিষ্ঠান ইয়োর চয়েস। হিসাবের দায়িত্বে থাকা আজিজুল হক জানালেন, অন্য ঈদের তুলনায় এবার ব্যস্ততা কিছুটা কম। আগে সময় ইফতারির সুযোগও পেতেন না তারা। তবে বিক্রি চলছে। প্রথম পর্যায়ের বিক্রি শেষ। এখন ১০ রোজর পর থেকে কুচরা বিক্রি শেষ হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের বিক্রি শুরুর প্রত্যাশা করছেন। এলসি সমস্যায় জুতা কম আমদানির কথা জানিয়েছেন তিনিও। ২০ বছর ধরে উত্তরা ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করলেও এবার তা করতে পারেননি। তবে ব্যাংকে তাদের ঋণ না থাকলেও যাদের ঋণ ছিল তাদেরকে এলসি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীর। আর ডলারের দাম ৮৬ থেকে ১০৬ টাকা হওয়া এবার আমদানি করা জুতার দাম বেশি বলেও জানান তিনি।

আরেক পাইকারি প্রতিষ্ঠান চৌরঙ্গী বাজার। তাদের এবারের টার্গেটের ৭০ শতাংশ বিক্রি হবে বলে আশা করছেন ম্যানেজার আবু কাউসার। মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে বলে জানান তিনি। এবার আমদানি জুতা কম থাকায় বাচ্চাদের জুতার দাম বেশি বলে জানান ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা ব্যবসায়ী। তবুও ঈদের আগে একটা বড় ধরনের চাপের প্রত্যাশায় আছেন তিনি।

দেশীয় বাজার ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে জুতা রপ্তানিও বাড়ছে। বিশ্বে ২৪১ বিলিয়ন ডলারের জুতার বাজার রয়েছে। যেখানে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আড়াই বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিশ্বে জুতার বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। তবে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের খাতে অবদান মাত্র দশমিক শতাংশ। লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে জুতার মোট বাজারের ৫৫ শতাংশ চীনের দখলে। ভারত ভিয়েতনামেরও ভালো অবস্থান আছে।

উল্লেখ্য, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে চামড়া চামড়াজাত পণ্য বা জুতার রপ্তানি থেকে ৯৪ কোটি ১৭ লাখ ডলারের বিদেশী মুদ্রা দেশে এনেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। টাকার হিসাবে এই অর্থের পরিমাণ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলার।

×