
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে যখন ইসরায়েল-ইরানের সরাসরি সংঘাতে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা। ট্রাম্প নীরব নন। বরং তিনি নিয়মিত ইরানকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তবু প্রশ্ন উঠছে, এত সব কথার পরেও তিনি কি আসলে হামলার ব্যাপারে নিজেই দ্বিধায় ভুগছেন?
মাত্র দুই মাস আগেই ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইরানকে ৬০ দিনের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরতে হবে, নাহলে ‘ভয়াবহ পরিণতি’ অপেক্ষা করছে। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার দিনই ইসরায়েল চালায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান। কিন্তু ট্রাম্প তখন সরাসরি কোনো সামরিক পদক্ষেপের কথা বলেননি, বরং হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমি কী করব, সেটা কেউ জানে না।”
এই বক্তব্য থেকেই বিশ্লেষকদের প্রশ্ন— ট্রাম্প কি কেবল হুমকির রাজনীতি করছেন, নাকি তিনি ইরানে সরাসরি হামলার বিষয়ে সত্যিই দ্বিধাগ্রস্ত?
ওভাল অফিসে আরও এক মন্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যা ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনাটি ধ্বংস করতে পারে। তবে তার মানে এই নয়, আমি সেটা করতে যাচ্ছি।” এমন ভাষ্য থেকে বোঝা যায়, তিনি যেন যুদ্ধের সব প্রস্তুতি নিতে চান, কিন্তু চূড়ান্ত পদক্ষেপ থেকে পিছিয়ে থাকছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প এই দ্ব্যর্থতা নিয়েই রাজনৈতিক কৌশল সাজাচ্ছেন। তিনি ইসরায়েলকে আগ্রাসনের মাঠে রেখে পেছন থেকে সমর্থন দিচ্ছেন, কিন্তু নিজে সামনের লাইনে যেতে চাইছেন না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে এখন যুদ্ধবিরোধী মনোভাব জোরালো। অর্থনৈতিক চাপে থাকা দেশ এখন নতুন কোনো যুদ্ধকে সহজে মেনে নেবে না।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ আগ্রাসী ভঙ্গিতে অবস্থান করছেন। তিনি সরাসরি বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনিকেও হামলার লক্ষ্য বানানো যেতে পারে। এতে বোঝা যাচ্ছে, নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি ও আন্তর্জাতিক অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যুদ্ধকেই বেছে নিয়েছেন।
সব মিলিয়ে চিত্রটা এমন— নেতানিয়াহু হামলা চালাচ্ছেন নিজের ব্যর্থতার লজ্জা ঢাকতে, আর ট্রাম্প হুমকি দিয়েই যাচ্ছেন, কিন্তু হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছেন না। প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প কি সত্যিই দ্বিধাগ্রস্ত, নাকি এটাই তার কৌশল— যাতে দায় না নিয়েও আগ্রাসনের সুবিধা নেওয়া যায়?
মধ্যপ্রাচ্য এখন বারুদের স্তূপ। আর সেই আগুনের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছেন ট্রাম্প। এখন দেখার বিষয়, এই দ্বিধা তিনি কাটিয়ে উঠবেন, নাকি যুদ্ধকে আরেকবার ঠেলে দেবেন কূটনৈতিক ছলনায়।
এম.কে.