ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

নির্মাণশিল্পে স্থবিরতা

স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হ্রাস, রডের দাম আকাশচুম্বী

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ৮ মার্চ ২০২৩

স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হ্রাস, রডের দাম আকাশচুম্বী

.

একদিকে বৈশ্বিক সংকট, অপরদিকে ডলার ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়িতে দেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে কাঁচামাল সংকটে উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হওয়ায় রডের বাজার হয়েছে আকাশচুম্বী, স্থবিরতা নেমে এসেছে নির্মাণ শিল্পে। বিশেষ করে বেসরকারি নির্মাণ শিল্পের কর্মকান্ড একেবারেই থমকে গেছে। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট থেকে সীতাকুন্ড উপকূল জুড়ে গড়ে ওঠা স্ক্র্যাপ জাহাজ শিল্প গুটিয়ে গেছে। দেশে রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল পুরনো জাহাজের ন্ডি লোহা থেকে দেশের রি-রোলিং মিলগুলোতে উৎপাদন হয় বিভিন্ন গ্রেডের রড। লোহার যোগান একেবারেই থমকে গেছে। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন রি রোলিং মিলে উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হয়ে রডের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আর কারণে বাজারে রডের দাম বর্তমানে টনপ্রতি ৯৫ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে রডের দাম এক লাখে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় নেবে না।

পুরনো জাহাজ আমদানির সঙ্গে জড়িত বিএসবিআরএ (বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন) সূত্রে জানানো হয়েছে, দেশের ডলার সংকটের এখনো অবসান ঘটেনি। কারণে বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে সরকার যে শর্তারোপ করেছে তারমধ্যে পুরনো জাহাজও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কারণে বর্তমানে বড় কোনো স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হচ্ছে না। ছোটখাট যেসব জাহাজ বিক্ষিপ্তভাবে আসলেও এতে চাহিদা মেটানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বাজারে রডের মূল্য আকাশচুম্বী হয়েছে। এর পাশাপাশি নির্মাণ শিল্পে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। যেভাবে পরিস্থিতি এগিয়ে যাচ্ছে তাতে জাহাজ ব্রেকিং কার্যক্রম শূন্যের কোঠায়ও চলে যেতে পারে। বিএসবিআরএ সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব চলছে এর আঘাত শিল্পেও লেগেছে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ডলারের বিনিময়ে আমদানি প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পুরনো জাহাজ আমদানিতে যে কড়াকড়ি আরোপ করেছে তাতে ৩০ লাখ ডলারের বেশি পুরনো জাহাজ আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত রয়েছে।

ইতোপূর্বে ৬০টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড চালু থাকলেও বর্তমানে তা ১০টিতে নেমে এসেছে। অর্থাৎ একের পর এক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সূত্র মতে, শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৬০ হাজার শ্রমিক কর্মচারী। পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় দেড় লাখ। বর্তমানে শ্রমিক কর্মচারীদের কর্মকান্ড একেবারেই থমকে গেছে। মাত্র ১০টি ইয়ার্ডে ছোট ছোট জাহাজ ভাঙার কাজ চললেও তা থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।  অপরদিকে, বিদেশ থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে মূল্যও বেড়ে গেছে। আগে যেখানে জাহাজের টনপ্রতি মূল্য ছিল ৫০০ ডলার, বর্তমানে তা সাড়ে ৬শ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া আমদানির জাহাজও মিলছে কম। যা পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশ রপ্তানি হচ্ছে প্রতিবেশ দেশ ভারতে। উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাঁচামাল হিসেবে স্ক্র্যাপ লোহার যোগান হয়ে থাকে। যোগান প্রক্রিয়া এখন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

পুরাতন জাহাজ আমদানিকারকদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, এমনিতেই নতুন করারোপ ভ্যাট আইনের কারণে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তার ওপর বর্তমানে ডলার সংকট আমদানি প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ির কারণে স্ক্র্যাপ জাহাজ আনা সম্ভব হয়েছে। ফলশ্রুতিতে কাঁচামাল সংকটে দেশের বিভিন্ন রি-রোলিং মিলেও উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। বিএসবিআরএ সূত্র জানিয়েছে, মূলত ২০২২ সাল থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হ্রাস পেতে থাকে। বর্তমানে তা চরম আকার ধারণ করেছে। বিএসবিআরএ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা ডলারের সাশ্রয় এবং সুদের কম হারের জন্য তাদের অধিকাংশ ইউপাস এলসি ডেফার্ট পেমেন্টে এলসি খোলেন। তখন ডলারের দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। এলসির অর্থ পরিশোধের পর ডলারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে প্রতি ডলারে লোকসান গুণতে হয়েছে। অনেকে তাদের ইয়ার্ড বন্ধ করেছে। আবার অনেকে ব্যাংক ঋণের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরনো জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে ৩০ লাখ ডলারের মধ্যে এলসি খোলার নির্দেশনা প্রদান করেছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে ডলার সরবরাহ করতে পারছে না।

ফলে বর্তমানে সর্বোচ্চ হাজার টনের জাহাজ আমদানি করছে কোনো কোনো আমদানিকারক। এতে করে বড় জাহাজের তুলনায় এসব জাহাজের কাঁচামাল চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

×