ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

২০২১-২২ অর্থবছর

রফতানি, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানে বেপজার রেকর্ড প্রবৃদ্ধি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:১৩, ১৩ অক্টোবর ২০২২

রফতানি, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানে বেপজার রেকর্ড প্রবৃদ্ধি

বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)

দেশের শীর্ষ বিনিয়োগ উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) তার ৪০ বছরের যাত্রায় সর্বকালের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্থাটি রফতানি, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। আগের বছরের তুলনায় রফতানি ৩০.৪১% এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে ২০% এর বেশি। ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে ৬৪,১৬০ জন বাংলাদেশী নাগরিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে যা একক বছর হিসেবে বেপজার ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বেপজাধীন পরিচালিত দেশের ৮টি ইপিজেডের চালু শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের মোট রফতানি ৮৬৫৫.৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে যা প্রথমবারের মতো ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। কোন একক অর্থবছরে এর আগের সর্বোচ্চ রফতানি ছিল ২০১৮-২০১৯ সালে ৭৫২৪.১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে রফতানি হয়েছিল ৬৬৩৭.০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় রফতানি বেড়েছে ৩০.৪১%।
ইপিজেডের মোট রফতানির মধ্যে পোশাক খাত থেকে আয় মাত্র ৫৪.৬৮% যেখানে দেশের মোট রফতানির ৮৫% আসে পোশাক খাত থেকে। ইপিজেডের অন্যান্য খাত যেমন গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, ফুটওয়্যার ও চামড়াজাত পণ্য, টেক্সটাইল, তাঁবু, ক্যাপ, প্লাস্টিক পণ্য, ইলেকট্রনিক্স রফতানি আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করেছে যা ইপিজেডগুলোকে বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদনের কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
বেপজা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে পূর্বের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৪০৯.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। এটিই বেপজার ইতিহাসে একক কোন অর্থবছরে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ।
বেপজা আশা করছে বেপজার সর্ববৃহৎ উদ্যোগ-বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পোৎপাদন শুরু হলে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ১০টি প্রতিষ্ঠানকে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। এদের মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগ ২১৫.৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা চলতি অর্থবছর থেকে প্রকৃত বিনিয়োগ হিসেবে যুক্ত হবে।

সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে বেপজা ৬৪,১৬০ জন বাংলাদেশী নাগরিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে একটি মাইলফলক তৈরি করেছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর ২০২১-২২ এ কর্তৃপক্ষ ৬৪,১৬০ জন বাংলাদেশী নাগরিকের চাকরির সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। অর্থাৎ, পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৬.৫১%।

বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) নাজমা বিন্তে আলমগীর জানান, করোনা মহামারির ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়েছিল। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে মহামারির প্রভাব অনেকাংশে কাটিয়ে উঠে অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে। করোনা মাহামারির মধ্যেও দেশের রপ্তানি যেন স্থবির না হয়ে যায় সে লক্ষ্যে বেপজা শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ইপিজেডসমূহে শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন চালু রেখেছিল পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতন ভাতাদি নিয়মিত পরিশোধের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেছে।

এছাড়া, বেপজা ইপিজেডের শ্রমিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় এনেছে। বৈশ্বিক বায়ারদের কাছে এটি একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যার ফলে ইপিজেডের কারখানাসমূহ পরবর্তীতে বেশি রপ্তানি আদেশ পেয়েছে এবং যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রেখেছে।
তিনি আরও বলেন,  ২০২২-২৩ অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধির এই ধারা ধরে রাখতে বেপজা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বেপজা নতুন ২৪টি প্রতিষ্ঠানকে বেপজাধীন ৮টি ইপিজেড ও বেপজার সর্ববৃহৎ উদ্যোগ চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে স্থাপিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে। এদের কার্যক্রম শুরু হলে বিনিয়োগ, রপ্তানি, কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আমি আশাবাদী। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক পরিস্থিতির উপরে।

×