
বৃষ্টির জলে ধোয়া অপরূপ রেইন লিলি
দিন মাসের হিসাবে বর্ষা শেষ হয়েছে। শেষ হয়েছে বটে। আকাশে এখনো কালো মেঘ। ঢের বৃষ্টি হচ্ছে। অকাল বৃষ্টিতে ভিজে একাকার গাছপালা প্রাণ প্রকৃতি। ফুলের পাপড়িতেও ছিটেফোঁটা জল। জলের কণা। আর যে ফুলের নামই রেইন লিলি সেটি তো বৃষ্টিতেই সবচেয়ে ভালো থাকবে। হ্যাঁ, রেইন লিলির কথাই হোক আজ। আকারের দিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হলেও অনিন্দ্য সুন্দর এই ফুল। বৃষ্টির সময়টাতে আলাদা দৃষ্টি কাড়ে।
সৌন্দর্যের সবটুকু নিয়ে দৃশ্যমান হয়। এখন ঢাকার বিভিন্ন সড়ক বিভাজকে, বাসার সামনে করা শখের বাগানে, বারান্দায় রাখা মাটির টবে রেইন লিলি ফোটে আছে। আর নার্সারিতে তো আছেই। ফুলটি দেখে মুগ্ধ কবি লিখেছেন, আমরা ঘাসের ছোট ছোট ফুল/হাওয়াতে দোলাই মাথা/তুলো না মোদের দলো না পায়ে/ছিঁড় না নরম পাতা...।
রেইন লিলি ফুল রেইন ফ্লাওয়ার, ফেয়ারি লিলি, জেফাইর লিলি, ম্যাজিক লিলি, আটামাসকো লিলি নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল নাম জেফাইরান্থেসিস রোজ। রেইন লিলি আমারিলিডাসি পরিবারের সদস্য। আদিনিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। বাংলাদেশেও আছে বহু বছর ধরে। মজার ব্যাপার হলো ফুলটি সন্ধ্যায় নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নেয়। দিনের আলোয় দেখা দেয় স্বরূপে। এ ফুলের রং হয় তিনটি। সাদা, হলুদ ও গোলাপি। সাদা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম জেফাইরান্থেসিস ক্যানাডিডা। হলুদ ফুলটি জেফাইরান্থেসিস সিট্রিনা। আমাদের দেশে বেশি দেখা যায় গোলাপি ঘাসফুল বা রোজি রেইন লিলি।
অবশ্য দেশে ফুলটি ঘাসফুল নামে বেশি পরিচিত। তাই বলে গ্রামের মাঠে দেখা ঘাসের মতো এটি নয়। প্রতিনিয়ত যে ঘাস আমরা পায়ে মাড়িয়ে যাই তার থেকে একটু আলাদা। এই ঘাস লম্বাটে এবং পুরো হয়। ভূমিভাগ থেকে কয়েক ইঞ্চি পর্যন্ত ওপরে ওঠে। সবুজ এই ঘাসের কোলেই ঘন হয়ে ফোটে রঙিন ফুল।
বিভিন্ন জায়গায় রেইন লিলি হয়তো দেখে থাকবেন আপনিও। তবে অন্যরকম এক অনুভূতি হবে রাজধানীর কিছু কবরস্থান থেকে ঘুরে আসতে পারলে। হ্যাঁ, প্রিয়জনের কবরের উপরে অনেকেই ঘাসফুল লাগিয়ে দেন। শ্বেতপাথরে বাঁধানো কবরের মাঝখানে বিশেষ এই ঘাস জন্মাতেই বিবর্ণ মাটি সবুজ হয়ে যায়। আর সবুজ কার্পেটের ওপর ফোটে থাকে দারুণ রঙিন ঘাসফুল। বনানী কবরস্থান বা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের অনেক কবরেই এখন ফুটে আছে ঘাসফুল। সদ্য ফোটা টাটকা নতুন ফুল যেন মৃতদের জন্য জীবিতদের দেয়া ভালোবাসার অর্ঘ্য!