
রোকেয়া প্রাচী
মুক্তিযুদ্ধ মানেই বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। এভাবেই বাঙালী জাতিসত্তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে আছে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু। দেশের চলচ্চিত্রশিল্প সেই বিশালতাকে ধারণ করার চেষ্টা করেছে। সেই সুবাদে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কিছু ছবি নির্মিত হয়েছে। তবে সেগুলোর অধিকাংশতেই সামগ্রিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিস্তৃত প্রেক্ষাপটকে তুলে আনা যায়নি। একইভাবেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি নির্মাণে বেলায়ও তাকে যথার্থভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।
কারণ সেসব ছবির নির্মাতারা যথার্থ গবেষণা এবং উপযুক্ত পূর্ব-প্রস্তুতি ছাড়াই এসব ছবি নির্মাণ করেছেন। অথচ এ ধরনের ছবি নির্মাণ খুব সহজ নয়। মেধার সঙ্গে জ্ঞানের পরিধির সম্মিলন ঘটাতে হয়। তাই যথার্থ গবেষণার মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুবিষয়ক ছবি নির্মাণ করা উচিত। নইলে সেই চলচ্চিত্র খুব ভাল কিছু হয় না। উল্টোদিকে উপযুক্ত প্রস্তুতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু নিয়ে আরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন নির্মাতাদের।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরুলেও ৫০টি ভাল ছবি নির্মিত হয়নি। চলচ্চিত্র, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কাঁটাবনের পাঠক সমাবেশে এই আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। চলচ্চিত্রবিষয়ক নিয়মিত অনুষ্ঠানের অংশ এ আলোচনাসভার আয়োজন করে ওয়ার্ল্ড ইকোলজি এ্যান্ড অটিজম ফিল্ম ফোরাম বাংলাদেশ।
আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, ছড়াকার আনজীর লিটন, চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজা ঘটক, সবুজ বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মাসুদ পথিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আয়োজনের সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুনা চৌধুরী।
রোকেয়া প্রাচী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। আর এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বেই দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের কল্যাণে এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি ছিলেন শিল্পের অনুরাগী এক মানুষ। সে কারণেই চলচ্চিত্রশিল্পী থেকে নির্মাতাদের শ্রদ্ধা করতেন। অসময়ে তাকে না হারালে দেশের চলচ্চিত্রশিল্প অনেক বেশি অগ্রসর হতো। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়ন ঘটছে।
সরকারী অনুদানের ছবির বাজেট বৃদ্ধিসহ চলচ্চিত্রের কল্যাণে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা নিজেরা খুব বেশি কিছু করতে পারছি না। এ কারণেই স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও ৫০টি ভাল চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কয়টি ছবি নির্মিত হয়েছে। পাশাপাশি ছবি নির্মাণের জন্য ভাল কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে না। সে কারণে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গন্ধুকে নিয়ে ছবি হলেও সেগুলোর ভেতর গভীরতা খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ সেসব ছবিতে গবেষণার ছাপ নেই। নেই কোন পূর্ব প্রস্তুতি। তাই যথার্থ গবেষণা এবং পূর্ব-প্রস্তুতি নিয়েই মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি নির্মাণ করা উচিত।
রেজা ঘটক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ছবি নির্মিত হলেও এ পর্যন্ত কাক্সিক্ষত ছবিটি আমরা পাইনি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ছবি হলেও সেগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতগুলোকে তুলে ধরা হয়নি। একইভাবে বঙ্গবন্ধুকে ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত গবেষণা হয়নি।