ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী সেলিম

বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতি

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতি

(শেষাংশ) ’৭৫-এর প্রথম দিকের দেশের তখনকার বিরাজমান পরিস্থিতি ওপর বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে আমি একটি চিঠি লিখে ছিলাম। চিঠিতে উল্লেখ করেছিলাম- কঠোর সাহসিকতার সঙ্গে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করার জন্য। আমার ক্ষুদ্র চিন্তা-ভাবনা, মতামত ও পরামর্শ আকারে চার পৃষ্ঠার এই চিঠি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঠিকানায় ১৪ আগস্ট ১৯৭৫ সালে রেজিস্টার্ড ডাকযোগে কালকিনীর গোপালপুর গ্রামের ডাকঘর থেকে পাঠিয়ে ছিলাম। ওই রেজিস্টার্ড বিধির রশিদ এখনও আমি পরম শ্রদ্ধা ও সযতেœ সংরক্ষণ করে রেখেছি। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যার পর আমি দারুণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যথিত এবং অনুশোচনীয় হয়ে পড়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুকে চিঠিটা যদি আরও কয়েক সপ্তাহ বা মাস আগে পাঠাতাম, তাহলে হয়ত...। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কয়েক মাস পর, খুনী ঘাতকদের এক সমর্থক বিষয়টি জেনে আমাকে রক্তচক্ষু প্রদর্শন করে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে চিঠিটি লেখার জন্য কৈফিয়ত চাচ্ছিল। সেদিন অপরাধীর মতো মাথা নামিয়ে রেখেছিলাম। ’৭৫-এর খুনী ঘাতকদের কোন ষড়যন্ত্রই বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার প্রদান করেছেন। তার দীর্ঘদিনের সংগ্রামী অবদান জেল-জুলুম-অত্যাচারের চূড়ান্ত বিজয়ের সুফল হিসেবে। তেমনি ষড়যন্ত্রকারীর ঘাতকদের কোন ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে, বঙ্গবন্ধুর কন্যার গতিশীল নেতৃত্ব, যোগ্যতা, দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা জ্ঞান অভিজ্ঞতা ও নিষ্ঠা-সততার প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের ফসল। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব মানচিত্রে শুধু স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ এবং রাষ্ট্রই নয়, আজ বাংলাদেশ একটি আত্মমর্যাদাশীল, স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে স্বীকৃত ও প্রশংসনীয়। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি, সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব সভায় যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। দেশ আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে শুধু উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে অবিরাম অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার দিকে বাধিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত করে তার ধারক-বাহক হিসেবে গোটা জাতির এক নিরাপদ বটবৃক্ষ হিসেবে দেশ ও জাতির কল্যাণে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশ ও জাতির উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং একটি নিরাপদ সন্ত্রাসমুক্ত জাতির কা-ারী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আজীবন স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতি হিসেবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ’৭১-এর ঘাতক দালাল জামায়াত শিবির পাকিস্তানপন্থী ঘাতক ভদ্রবেশী এজেন্টরা যেমনই আজও পরিবার ও জেলখানার হত্যাকারী খুনী পলাতক ঘাতক ও তাদের পরিবার এবং সমর্থকরা। দেশ ও জাতিকে সদাসজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে, এদের চলাফেরা গতিবিধির ওপর। বিদেশে ও বাংলাদেশীদের সজাগ ও তৎপর থাকতে হবে বিদেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরুদ্ধে ও তার সরকার রাষ্ট্র পরিপন্থী প্রচারনীতির বিরুদ্ধে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাদের তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে ’৭১ ও ’৭৫-এর ঘাতক মোনাফেক ষড়যন্ত্রকারীদের সন্তান পরিবার ও তাদের সমর্থকদের ওপর। নতুন করে সরকারের সব গোয়েন্দা বিভাগকে যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়ন করা উচিত ’৭১ ও ’৭৫-এর খুনী ঘাতকদের পরিবারের সদস্যদের ওপর। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ষড়যন্ত্রের অন্যতম হোতা, ’৭৫-এর সরকারের এনএসআই-এর তৎকালীন মহাপরিচালক, সাফদর আলী ভুইয়া এবং স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের পাকিপন্থী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যাদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ও ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে অবৈধ ও অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল কুলাঙ্গার ঘাতক দল। ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যা ও ’৭৫-এর ৩ নবেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যাকা-ের ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় শ্বেতপত্র সরকারের তরফ থেকে দেশ ও জাতির অবগতির জন্য পেশ বা প্রকাশ করা উচিত। বিদেশে অবস্থানকারী, আত্মগোপনকারী খুনী ঘাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করে চূড়ান্তভাবে ওই সব দেশের সরকারগুলোর সঙ্গে ফয়সালা করা উচিত। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত খুনীদের সর্বশেষ খুনী ঘাতককে বাংলার মাটিতে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদন্ড- কার্যকরী না করা পর্যন্ত গোটা দেশ ও জাতিকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থেকে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ও সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। লেখক : মুক্তিযোদ্ধা
×