ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাহিদা সাম্য লীনা

যথাযথ প্রশিক্ষণ জরুরী

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৯ মার্চ ২০১৭

যথাযথ প্রশিক্ষণ জরুরী

যন্ত্রদানবটাকে আমি বিরানব্বই সাল থেকে চিনি। যে যন্ত্রদানব হরণ করেছিল আমার প্রিয় ভাইয়ের প্রাণ। একজন একনিষ্ঠ সাংবাদিকের জীবন। এই যন্ত্রদানবকে আমি ঘৃণা করি কারণ মাত্র দেড় বছরের শিশুর পিতার স্নেহ থেকে বঞ্চিত করার জন্য। আমি ও আমার পরিবার নিজেই এই যন্ত্রদানবের হামলার শিকার। আজ ছাব্বিশটা বছর নিদারুণ এই কষ্টটা আমার পরিবার বয়ে চলেছে। এর মাঝে হাজার পরিবার ওই যন্ত্রদানবের শিকার। প্রতিযোগিতার বিশ্বে যেখানে দরকার প্রতিযোগিতা ও অনুকরণ সেখানে সেসব রাতারাতি আসে না। অথচ মৃত্যুক্ষুধা-দুর্ঘটনা জীবনকে ধ্বংসের হাতে ঠেলে দিতে ট্রাকের পাশাপাশি বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস সড়কে নেমে এক কঠিন খেলায় মেতে উঠেছে। শুধু তাই নয়, সেসব আজ অনুকরণ প্রথার রূপ নিয়েছে। জোর যার মুল্লুক তার যেন; কে কার আগে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যাবে সামনে তারই একটা খেলা আমরা যাত্রীসাধারণ হর-হামেশা দেখতে পাই। কী চরম খেলা! বাসকে ট্রাক, ট্রাককে বাস পেছনে ফেলতে পারার তুমুল লড়াই, ড্রাইভারদের হিংস্র আচরণ আর সামনে এগুনোর সফলতা মুখে যেন বিদ্রƒপের হাসি। কতগুলো মূল্যবান জীবনের সঙ্গে তামাশা! আমরা যারা যন্ত্রদানবদের কবলে একবার গিয়েছি তাই আমরা অর্ধমৃত! কিন্তু তরতাজা অগণিত প্রাণ দেশ, সমাজ ও পরিবারের অমূল্য রতœ। এই চালকদের অধিকার নেই কারও জীবন নিয়ে তামাশা করার। ২০০৩ সালে পারিবারিক রাস্তাকে কেন্দ্র করে এক নারীকে হত্যার দায়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি চালককে তার প্রাপ্য শাস্তি দিয়েছে আদালত। আইন তার আপন গতিতে চলে, চলবে। তাই বলে পরিবহন মালিক শ্রমিক ধর্মঘট ডাক দিয়ে দেশকে আর একটা অরাজকতায় ফেলা কোন যৌক্তিকতায় পড়ে না। যেখানে চালকরা রাস্তায় নামলে নিজেরাই একে অপরের প্রতিদন্দ্বী ভাবে সেখানে ওই ট্রাক চালকের জন্য সম্প্রতি যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি গড়ে তুলেছিল দেশজুড়ে তা ছিল মিথ্যার ছায়ানটে ঘেরা এক প্রহসন। মায়াকান্না উথলে উঠেছিল কয়েকটা দিন। যাত্রীর ওপর হামলা, ভাংচুর, সড়ক ব্যারিকেড হতে শুরু করে সবই করেছে পরিবহন শ্রমিক। এই ভালবাসা তাদের যদি সবসময়ই থাকত একে অপরের প্রতি তাহলে কোন দুর্ঘটনার শিকার হতো না অসহায় জনগণ। তার ওপর, ২০০৩ সালে সড়কে চালক ওই নারীকে হত্যা করেনি বরং বাড়ির সামনে রাস্তার দখলকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল ওই হত্যাযজ্ঞটি। তাহলে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা কিসের ভিত্তিতে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত দেশকে জিন্মি করে রেখেছিল? এদের কাঠগড়ায় আনার যৌক্তিকতা রয়েছে। প্রশ্ন করা হোক এদের আইন মারফত। তাদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান আরোপিত হোক সহসাই। মূল হোতাদের আইনের আওতায় রেখে বোঝানো উচিত তারা কোনটা করেছে, ভুল না সঠিক। না বুঝে চিল কান নিয়েছে, দৌড়েছে অযথা পিছে! যন্ত্রদানব চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখা, চালকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, মানসিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ, প্রতি মাসে বা পনেরো দিনে চালকদের নিয়ে গাড়ির মালিক বা কর্তৃপক্ষ মিটিং ডাকা এবং গাড়ি সড়কে নিরাপদে চলাচলে এবং উপযুক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর নির্দেশ এবং এই সম্পর্কিত কৈফিয়ত নেয়া। এ ধরনের কিছু নীতিমালা তৈরি করা দরকার হয়ে পড়েছে। উদ্যোগটি সরকারকেই নিতে হবে। পশ্চিম উকিলপাড়া, ফেনী থেকে
×