ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ তানজিনা হোসেন

সন্তান ধারণ ও থাইরয়েড রোগ

প্রকাশিত: ০০:০১, ২৪ মে ২০২২

সন্তান ধারণ ও থাইরয়েড রোগ

আগামীকাল বুধবার ২৫ মে থাইরয়েড দিবস। দিবস পালনে বিভিন্ন কর্মসূচী তো রয়েছেই। তথাপিও সচেতন ও সতর্কতার বিষয়ে কিছু লেখা- নারীর জীবনের ওপর থাইরয়েড হরমোনের প্রভাব বিস্তর ও ব্যাপক। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পরিলক্ষিত হয় সন্তান ধারণ ও প্রসবের সময়। অনেকের ধারণা থাইরয়েডের সমস্যা হলে সন্তান হবেই না, বা সন্তান নেয়া যাবে না। ধারণাটি ভুল। তবে থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সন্তান নেয়া ও প্রেগনেন্সির সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নয়তো গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসব, অকালে সন্তান প্রসব, বৃদ্ধি প্রতিবন্ধী সন্তান প্রসবের ঝুঁকি রয়ে যায়। হাইপোথাইরয়েড যাদের থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম তাদের ডিম্বাণু তৈরি ও পরিপক্ব হতে সমস্যা হয় বলে অনেক সময় সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে। সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করে গর্ভধারণ করলে নানা জটিলতা হতে পারে। তাই যাদের হাইপোথাইরয়েডিজম আছে তারা অবশ্যই টিএসএইচ এর মাত্রা নিরাপদ করার পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পিত সন্তান নেবেন। কেউ অজান্তে ও অপ্রস্তুত অবস্থায় গর্ভধারণ করে ফেললে যতদিন না টেস্ট করতে পারেন ততদিন সপ্তাহে দুদিন ডাবল ডোজ খেতে পারেন। তবে যত দ্রুত সম্ভব টেস্ট করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই ভাল। গোটা প্রেগনেন্সিতে দেড় থেকে দুই মাস পর পর টেস্ট করবেন এবং হরমোনের মাত্রা নিরাপদ রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শে থাইরক্সিনের ডোজ এ্যাডজাস্ট করবেন। সন্তান প্রসব অবশ্যই বিশেষায়িত হাসপাতালে হতে হবে। সন্তান প্রসবের পর আবার টেস্ট করে ডোজ কমানোর প্রয়োজন পড়ে। ভূমিষ্ঠ শিশুরও থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করতে হবে। হাইপারথাইরয়েড যাদের রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেশি মানে যারা হাইপারথাইরয়েড তাদের ডিম্বাণু উৎপাদন ও মাসিক সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে বলে সাধারণত গর্ভধারণ হয় না। কিন্তু চিকিৎসা শুরু করার পর ডিম্বাণু উৎপাদন শুরু হলে হঠাৎ করেই গর্ভধারণ করে ফেলতে পারেন। কিন্তু যারা হাইপারথাইরয়েডিজমের জন্য কার্বিমাজোল বা মেথিমাজোল জাতীয় ওষুধ সেবন করেন তাদের ওষুধ সেবনকালে সন্তান না নিতে পরামর্শ দেয়া হয়। এই কোর্স সম্পন্ন করার সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। তারপরও কেউ দুর্ঘটনাবশত গর্ভধারণ করলে দ্রুত পরীক্ষা করে চিকিৎসককে অবহিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে পিটিইউ জাতীয় ওষুধে পরিবর্তন করতে হবে কিন্তু এরও নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। বিশেষ করে মায়ের যকৃতরে সমস্যার ঝুঁকি থাকে। হাইপারথাইরয়েড রোগীর গর্ভাবস্থায় রেডিও আয়োডিন থেরাপি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। পোস্ট পারটাম থাইরয়েডাইটিস ৫-১০ শতাংশ নারী সন্তান প্রসবের ৬-১২ মাসের মধ্যে থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ রোগে ভুগতে পারেন। এই সমস্যা হলে গলার থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, ব্যথা করা, জ্বর জ্বর ভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। প্রথম দিকে হাইপারথাইরয়েডের মতো উপসর্গ (বুক ধড়ফড়, গরম লাগা, অস্থিরতা, ঘাম, ওজন হ্রাস) আর পরেরদিকে আবার হাইপোথাইরয়েডের মতো উপসর্গ ( শীত লাগা, শুষ্ক ত্বক, চুলপড়া, ওজন বৃদ্ধি, ধীর ও অবসন্নতা, ক্লান্তি) দেখা দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করা হলেও হাইপোথাইরয়েডিজম চলমান থাকলে থাইরক্সিন লাগতে পারে। যাদের এই প্রদাহ হয়েছে তারা পরবর্তীতে ভাল হয়ে গেলেও সন্তান নেয়ার আগে অবশ্যই টেস্ট করে নেবেন। মনে রাখবেন- : যাদের থাইরয়েডের সমস্যা আছে বা ছিল তারা কখনও অপরিকল্পিত গর্ভধারণ করবেন না। সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা থাকলে আগে চিকিৎসককে জানান। : যাদের কখনোই কোন থাইরয়েডের সমস্যা জানা নেই তারাও সন্তান নেয়ার আগে একবার রুটিন টেস্ট হিসেবে থাইরয়েড টেস্ট করে নিতে পারেন। বর্তমানে প্রি-কনসেপশন প্রস্তুতি হিসেবে সকল নারীর থাইরয়েড পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে। : গর্ভকালীন সময়ে টিএসএইচের মাত্রা বার বার টেস্ট করে ওষুধের ডোজ ঠিক করে নিতে হবে এবং টিএসএইচ নিরাপদ মাত্রায় (২.৫ মিলিইউনটি/লিটার) এর নিচে রাখতে হবে। : থাইরয়েডের রোগ থাকলে সন্তান প্রসব অবশ্যই বিশেষায়িত হাসপাতালে হতে হবে এবং প্রসবের পর শিশুকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা করতে হবে। যে কোন রোগেই শুরুতে সচেতন হলে ভাল থাকা যায়। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম, গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, গ্রীন রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা।
×