ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের চার দফা

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২৩ মে ২০২২

বাংলাদেশের চার দফা

রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ এবং গত দুই বছরে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে সমূহ বৈশ্বিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে- যার তীব্র অভিঘাত অনুভূত হচ্ছে খাদ্য, বিদ্যুত, জ্বালানিসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধিতে। সর্বাধিক যা আশঙ্কার তা হলো, কবে নাগাদ এই সমস্যা-সঙ্কটের অবসান হবে তা বলতে পারে না কেউ। অতঃপর এই বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিয়ে চার দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সঙ্কট উত্তরণে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলায় গঠন করেছেন এই গ্রুপ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দফা প্রস্তাব হলো- প্রথমত, বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করতে একটি সুসমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জি-৭, জি-২০, ওইসিডি এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে বিশ্ব¦ব্যাপী লজিস্টিক সহায়তা এবং বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করতে হবে। যা পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এর জন্য বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকারসহ অর্থায়ন সহজলভ্য করতে হবে। তৃতীয়ত, বিশ্বব্যাপী কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষিখাতে প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করতে হবে। চতুর্থত, ৪৮ সদস্যের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামের সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশসহ নিম্নাঞ্চলীয় জলবায়ু ঝঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার সঙ্কট উত্তরণের জন্য যথাযথ সহায়তা প্রদান করতে হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সর্বদা বিশ্বশান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য সাড়া দিয়েছে জাতিসংঘের আহ্বানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান বৈশ্বিক সঙ্কট উত্তরণে চার দফা প্রস্তাব বস্তুত সেই প্রত্যয় থেকে উদ্ভূত। উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা অতিমারী পরবর্তী বৈশ্বিক চেহারা ও পুনর্বিন্যাস কখনই আর আগের মতো হবে না। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবেও উঠে এসেছে বিষয়টি। সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি বলেছে, দুই বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী এমন সমূহ সঙ্কট খুব কম দেখা গেছে। বরং কোভিড-১৯ এর থেকেও অনেক বেশি এবং সার্বিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে বিশ্বকে, যা গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে দেখা যায়নি। পৃথিবীজুড়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সমাজ, অর্থনীতি, বাণিজ্য, পর্যটন, উৎপাদন ব্যবস্থা প্রায় সবই বিপর্যস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন হয়েছে করোনা অতিমারীতে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অগণিত মানুষের মৃত্যুসহ স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতার বাইরে সমূহ ক্ষতির তালিকায় রয়েছে সর্বস্তরের মানুষের জীবন-জীবিকা, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও শিক্ষা সর্বোপরি উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান। ফলে, প্রায় সর্বত্র দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি ও পরিবেশ। বহুধা বিস্তৃত এই ক্ষয়ক্ষতির মোকাবেলা করে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ এবং ভয়াবহ যুদ্ধের ক্ষতিসমূহ কাটিয়ে উঠতে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ঐক্য, সংহতি, সম্প্রীতি জরুরী ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
×