ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন রাজাকারের ফাঁসি

প্রকাশিত: ২০:৪০, ২২ মে ২০২২

তিন রাজাকারের ফাঁসি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলভীবাজারের বড়লেখার আবদুল আজিজ ওরফে হাবুলসহ তিন রাজাকারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের রায় প্রদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অন্য দুজন রাজাকার হলো- মোঃ আবদুল মতিন ও আবদুল মান্নান ওরফে মনাই। আবদুল আজিজ ও আবদুল মতিন আপন দুই ভাই। আবদুল মতিন পলাতক। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর ৪৫তম রায়। জাতির ঋণ শোধের প্রক্রিয়ায় এই রায় আরেকটি মাইলফলক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবিদার। এদেশে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি হলো চিহ্নিত বিষধর সাপ। একাত্তরে প্রথম তাদের হন্তারক স্বভাব জানা যায়। এরপর তাদের চারিত্রবৈশিষ্ট্যের পরিচয় আমরা নতুন করে পেয়ে আসছি পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে। ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানপন্থীরা, যারা এদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, তারাই হয়ে বসে দ-মু-ের অধিকর্তা। দেশটাকে তারা উল্টোদিকে চালানো শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস মুছে ফেলার পাঁয়তারা চালায়। একুশ বছর পর আবারও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সরকার গঠনের সুযোগ পেলে বিষধর সাপেরা কিছুদিন গর্তে লুকোয়। পরে গণতন্তের খোলা হাওয়ার ভেতর সুযোগ বুঝে ফের স্বরূপে আবির্ভূত হয়। আমরা যদি আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে চাই, দেশকে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় রেখে বিশ্বে সম্মানজনক অবস্থান অর্জন করতে চাই, তাহলে অন্ধকারের শক্তিকে পরাস্ত করতেই হবে। মুক্তিযুদ্ধে মৌলভীবাজারের বড়লেখার মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনার সময় ধর্ষণের শিকার নারীদের ‘ওয়ার হিরোইন’ উপাধির পাশাপাশি স্যালুট জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি জনকণ্ঠ প্রতিনিধিকে বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, তারা (ধর্ষণের শিকার নারীরা) যুদ্ধের হিরোইন। ‘ওয়ার হিরোইন’ হিসেবে তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছে। উল্লেখ করা দরকার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে আপত্তিকর অভিমত প্রকাশের দায়ে বাংলাদেশে বসবাসরত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে সাজা দেয়া হয়েছে। এর পরপরই ‘দি নিউইয়র্ক টাইমস’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কড়া সমালোচনা করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এ সবই ছিল একাত্তরের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারী তথা রাজাকার আলবদরদের বিচারের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা। তা সত্ত্বেও প্রতিবছর বহুল আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার ধারাবাহিকতার বিষয়টি স্বাধীনতার পক্ষশক্তি তথা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছে। বিলম্বে হলেও মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের একে একে বিচারের সম্মুখীন করা এবং রায় কার্যকর করার ভেতর দিয়ে জাতি তার ঋণ শোধ করছে। এটা গভীর স্বস্তির জায়গা অবশ্যই। আরও আগে এই বিচারকার্য সম্পন্ন করা সম্ভব হলে দেশে আইনের শাসন আরও সুদৃঢ় হতো।
×