ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃচ্ছ্রসাধন

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২০ মে ২০২২

কৃচ্ছ্রসাধন

কোভিড-১৯ অতিমারী সারাবিশ্বকে প্রবল একটা ধাক্কা দিয়েছে সার্বিকভাবে। কি রাজনৈতিক, কি অর্থনৈতিক, কি সামাজিক বা পারিবারিক- প্রায় সর্বত্রই তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি হয়েছে করোনা অতিমারীতে। সত্যি বলতে কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবী এত সমূহ জটিলতা ও ভাঙ্গাগড়ার সম্মুখীন হয়নি। ইতোপূর্বে লকডাউন-শাটডাউনের মতো পরিস্থিতির মোকাবেলাও করতে হয়নি বিশ্বকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে খুব শীঘ্রই ভ্যাকসিন ও ওষুধ আবিষ্কারের ফলে করোনা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এলেও স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী ন্যাটোতে যোগদান নিয়ে বিতর্কের জেরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা এবং সমূহ দুর্যোগ। রাশিয়া এবং ইউক্রেনÑ দুটো দেশই বিশ্বে বিপুল পরিমাণে তেল-গ্যাস-জ্বালানি, গম-ভুট্টা এবং ইস্পাতসহ বিবিধ শিল্পপণ্য জোগান দিয়ে থাকে। বর্তমানে এসব প্রায় বন্ধ অথবা স্থগিত রয়েছে। তদুপরি যুদ্ধটি যদিও রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে সংঘটিত হচ্ছে, মূলত মদদ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো। ফলে, এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী এবং এর বহুমুখী অভিঘাত প্রলম্বিত হবে বলেই ধারণা করা চলে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বেড়েছে আমদানির চাপ। বেড়েছে ডলারের দামও, প্রায় ১৬ শতাংশ। কমেছে টাকার দাম। সর্বশেষ, প্রতি ডলারের দাম ছিল ১০২ টাকা, সেও দুর্লভ। এই অবস্থায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে দেশবাসীকে দৈনন্দিন জীবনসহ সর্বক্ষেত্রে মিতব্যয়ী ও কৃচ্ছ্রসাধনের পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, আমরা সবাই যদি সতর্ক থাকি এবং সম্পদ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হই, তাহলে সমস্যা মোকাবেলা সহজ হবে আগামীতে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর অনেক দিন অতিবাহিত হলেও যুদ্ধ থামার কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান সুইফট রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যাবতীয় আর্থিক লেনদেন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে, সমূহবিপাকে পড়েছে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যরত দেশগুলো, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। ইতোমধ্যে দেশে গম ও রডের দাম বাড়তে শুরু করেছে, যা প্রধানত আমদানি করা হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একটি বড় বাজার রাশিয়া। দেশটি বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সরাসরি সহযোগিতা করছে। সে অবস্থায় আর্থিক লেনদেন স্থগিতসহ যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে দুই দেশের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় আশঙ্কার কারণ রয়েছে নিশ্চয়ই। সর্বোপরি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ব বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পরিণামে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম-ভুট্টার দাম বাড়তে শুরু করেছে, যার প্রভাব পড়ছে অন্যান্য দেশেও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে, যার সম্ভাবনা সমধিক, সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সে অবস্থায় সবাইকে মিতব্যয়ী এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনে কৃচ্ছ্রসাধনের বিকল্প নেই।
×