ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ রোহিঙ্গা সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধান

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ১৯ এপ্রিল ২০২২

সিডনির মেলব্যাগ ॥ রোহিঙ্গা সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধান

সিডনির বাঙালী এলাকার নাম লেকেম্বা। সেখানে যে পরিমাণ বাংলাদেশী থাকে তার চেয়ে বেশি বসবাস করে অন্য এলাকায়। কিন্তু শুরু থেকে এখানেই গড়ে উঠেছে দোকানপাট। সে কারণেই হয়ত এর বাঙালিয়ানা ষোলো আনা। সঙ্গে আছে দেশের ছাত্র-ছাত্রী তথা তারুণ্যের বসবাস। এই এলকায় একটি শহীদ মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভও নির্মিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই রমজানের নানা পসরা আর ইফতারির বাজারও জমজমাট এখানে। সেদিন গিয়েছিলাম ইফতারি কিনতে আর সরেজমিনে দেখে আসতে। বাঙালী বাংলাদেশীদের সঙ্গে মিলেমিশে একাত্ম রোহিঙ্গাদের আলাদা করে বোঝার উপায় নেই। বিশেষত যারা চট্টগ্রামের মানুষ বা যারা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে তাদের জন্য ভাষা বোঝা সহজ। ভৌগোলিকভাবে যেমন কাছাকাছি ভাষাগত ভাবেও তাই কথা বলতে বলতে বুঝলাম ও জানলাম তারা রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জায়গা না দিলে তারা যাবে কোথায়? নিজ দেশে পরবাসী তাদের কষ্ট দুঃখ আমরা বুঝি। কিন্তু সঙ্গে এটাও মানতে হবে যে, তাদের না আছে লেখাপড়া, না শিষ্টাচার। এই সংস্কৃতিবিমুখ পরিচয়হীন জাতিটি দলে দলে ঢুকেছে বাংলাদেশে। সেখানকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করার পাশাপাশি তারা প্রায়ই ঝামেলা করছে। এই আগুনের আঁচ বিশ্বের নানা দেশে এসে লেগেছে। অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাসে তাদের পাসপোর্ট আর ভিসা দেয়া নিয়েও ঝামেলা হয়েছে। সে কেলেঙ্কারির সুরাহা হয়নি এখনও। তদন্তের অগ্রগতিও জানা যায়নি। কোনভাবে ধামাচাপা দিয়ে দূতাবাস চোখ বন্ধ করে আছে। এই চোখ বন্ধ করে থাকার কারণেই বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলতে হচ্ছে তারা দেশের দূতাবাসকে তলব করবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব রোহিঙ্গা আর কতকাল আমাদের দেশে এভাবে থাকবে? দেশে-বিদেশে তারা আমাদের দেশের সুযোগ-সুবিধা নেবে? সরকারও যেন আপাতত এ বিষয়ে নীরব। অথচ দেশের অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে। ঝামেলা হচ্ছে বাজার নিয়ে। বাজারদর যে চড়া সেটা বলে বোঝানোর দরকার পড়ে না। সারা দুনিয়ায় বাজারের মূল্য চড়া। কিন্তু মানুষের কাছে তা সুলভ করার কৌশল জানে তারা। আমরাও জানি। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ী আর সিন্ডিকেটের জন্য সরকার তা পারছে না। আর এই ভূত তাদের ভেতরেই বসবাস করছে। রোহিঙ্গা সমস্যার ভূতও রাজনীতির সৃষ্টি। এত ডামাডোলের ভেতর জানলাম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এটা কি সুখবর আসলে? মনে আছে, আমরা যখন একাত্তরে শরণার্থী হিসেবে বাংলার নানা এলাকায় মানবেতর কঠিন জীবনযাপন করছিলাম তখনও এ ধরনের প্রস্তাব পাস হয়েছিল। আর পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও আমেরিকান মুরব্বিরা রাতে ডাইনিং টেবিলে সুরা আর উচ্ছিষ্টের সঙ্গে সেসব কাগজপত্র কুটি কুটি করে ছিঁড়ে হাসিতে ফেটে পড়ত। জাতিসংঘ সবকিছু মিলিয়ে এখন একটি সাইনবোর্ড সংস্থা। তারা কোন্ প্রস্তাব পাস করল আর করল না তাতে মিয়ানমারের কিছু আসে যায় বলে মনে হয় না। কাজের কাজ করতে হবে সরকারকেই। মনে রাখা প্রয়োজন শুরুতে এই সমস্যা আমরা ওয়েলকাম করেছিলাম। শুরুতে যে সহানুভূতি আর উন্মাদনা তা এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে পানি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এমনিতেই জনসংখ্যার ভিড়ে ভারাক্রান্ত বাংলাদেশ। এবার ঢাকায় গিয়ে বুঝেছি বসবাসযোগ্য নগরী নয় এটি। সারাদেশে যখন জনসংখ্যার এমন চাপ তখন নতুন করে উটকো উদ্বাস্তু তাও লাখে লাখে ঢুকিয়েছি আমরা। সে সময়কার মিডিয়ায় চোখ রাখলে দেখবেন কেমন উপচেপড়া অযাচিত ভালবাসা! রাখাইনের মানুষরা কি কি করতে পারে তা এখন আর কারও অজানা না। যখন এ লেখা লিখছি খবরে দেখলাম টেকনাফে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে ইয়াবাসংশ্লিষ্ট এক রোহিঙ্গা। এ কাজে ওরাই এখন সর্বেসর্বা। মাদক ব্যবসা, চুরি ডাকাতি আর মারামারি ছাড়া আর কি করতে জানে তারা? মূলত বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো এক জাতি। মিয়ানমারের সেনা সরকার তাদের মেরুদ-ও ভেঙ্গে দিয়েছে। খেয়াল করবেন তাদের ভেতর একজনকেও আমরা পাইনি যিনি কবিতা লিখতে জানেন। গান জানেন বা স্কলার টাইপের কেউ। মনে আছে আমরা যখন একাত্তরে ভারতে পালিয়ে ছিলাম তখন আমরা নিছক শরণার্থী। অবহেলিত বঞ্চিত। তারপরও আমাদের ছিল নামকরা উজ্জ্বল কত তারকা, কবি ও সঙ্গীতশিল্পী। যারা শরণার্থীদের কথা তুলে ধরতেন। সেসব কোন কিছুই নেই রোহিঙ্গাদের মধ্যে। তাদের ক্যাম্পে কাজ করেন আমার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া, বলছিলেন কতটা গোঁয়াড় আর যৌনতাপ্রিয় তারা। স্বামীর সঙ্গে দেখা নেই, স্বামী কোথায় জানে না। অথচ সমানে বাচ্চা হচ্ছে। তাদের এই বংশবৃদ্ধি সহজভাবে নিলে চলবে না। এভাবে তারা বংশবিস্তার করতে থাকলে আমরাই সংখ্যালঘু হয়ে পড়ব একদিন, যা চট্টগ্রামের কোন কোন এলাকায় ঘটেছে। যে কারণে তারা আমাদের মানুষদের ওপর হাত তুলতে সাহস পেয়েছে। মনে রাখতে হবে তারা আমাদের মাটির সন্তান নয়। তাদের কোন আত্মিক বা মানসিক যোগাযোগ নেই আমাদের সঙ্গে। তারা চাইলে যে কোন কিছু করতে পারে। ঈদের পর সরকারের উচিত হবে আন্তর্জাতিকভাবে এর সমাধানে উদ্যোগী হওয়া। কারণ, এরা বংশ বিস্তারসহ নানা প্রক্রিয়ায় আমাদের ঘাড়ে একের পর এক বোঝা চাপিয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই এর দ্রুত সমাধান দরকার। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতাদের কাজ তারা করছে। কিন্তু তারা এর সমাধান করবে না। সেটা তাদের কাজও নয়। এই কাজের দায় নিতে হবে দেশের সরকার এবং যাদের দায়িত্ব তাদের। বোঝার ওপর শাকের আঁটি রোহিঙ্গারা মানবিক দৃষ্টিকোণে যা পেয়েছে তা অনেক। এবার তাদের সমস্যার সমাধান করে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। মাদক চোরাচালান, অনভিপ্রেত বংশ বিস্তারসহ গ্যাং অপরাধের মতো কাজে দায়ী রোহিঙ্গারা বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে। তাই দ্রুত সমস্যার সমাধান জরুরী। [email protected]
×