ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঘটনাস্থলে তদন্ত কমিটি ॥ নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

নারীসহ আরও দুজনের লাশ উদ্ধার, এখনও নিখোঁজ ৪

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ২২ মার্চ ২০২২

নারীসহ আরও দুজনের লাশ উদ্ধার, এখনও নিখোঁজ ৪

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জ শহরের শীতলক্ষ্যা নদীর সৈয়দপুর এলাকায় মালবাহী কার্গো জাহাজের ধাক্কায় এমএল আফসার উদ্দিন নামে যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় সোমবার এক নারীসহ দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এ লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনায় ৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। এদের মধ্যে দুই শিশু, ৩ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ রয়েছেন। উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় লঞ্চডুবির ১৫ ঘণ্টা পর সোমবার ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটে ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে টেনে নদীর তীরে তোলে। তবে লঞ্চটি উদ্ধারের পর লঞ্চের ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধাকারীরা কোন লাশের সন্ধান পাননি। ফায়ার সার্ভিসের কাছে লঞ্চডুবির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪ জনের নিখোঁজের তালিকা রয়েছে। সোমবার দুপুরে লঞ্চডুবির ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। লঞ্চডুবির ঘটনায় রবিবার বিকেল থেকে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ রুটে সকল লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। নৌ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি ॥ সোমবার দুপুরে নৌ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম বেপারি সাংবাদিকদের জানান, দুর্ঘটনাকবললিত লঞ্চ ও কার্গো জাহাজ নদীতে প্রতিযোগিতামূলক বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিল। এ কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বাকি বিষয় অতিসত্বর তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন আকারে জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়া হবে। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি ১৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার ॥ রবিবার বেলা ২টায় শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া এম এল আফসার উদ্দিন লঞ্চটি উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’। লঞ্চটি উদ্ধারের সময় প্রাথমিকভাবে ভেতরে কোন লাশ পাওয়া যায়নি। সোমবার ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটের সময় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। লঞ্চডুবির ঘটনায় নিহতের পরিচয় ॥ লঞ্চডুবির ঘটনায় সোমবার বিকেল পর্যন্ত ৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরা হলেন জয়নাল ভুইয়া ওরফে জয়নাল আবেদীন (৫০) আরিফা বেগম (৩৫) ও তার পুত্র সাফায়েত হোসেন (১৫ মাস), স্মৃতি রানী বর্মন (১৯), উম্মে খায়রুন ফাতেমা (৪৫), সালমা (৩৩) ও ফাতেমা (৭)। খালুর বাসায় বেড়াতে এসে লাশ হয়ে ফিরল স্মৃতি রানী বর্মন ॥ বন্দরে একরামপুরের খালু রিপনের বাসায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার ইস্পাহানির চর এলাকা থেকে স্মৃতি রানী বর্মন ও তার ছোট বোন আরোহী (সাড়ে ৩ বছর) বেড়াতে আসে। বেড়ানো শেষে রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে এম এল আফসার উদ্দিন নামের লঞ্চে মুন্সীগঞ্জে যাচ্ছিল দুই বোন। বেলা আড়াইটায় তাদের বহনকারী লঞ্চটি একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় শীতলক্ষ্যায় তলিয়ে যায়। এ সময় দুই বোন স্মৃতি রানী বর্মন ও আরোহী নিখোঁজ হয়। রবিবার বিকেলে স্মৃতি রানী বর্মনের লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান তার খালু রিপন। সোমবার বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে আরোহী। চার বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে এসে এখনও নিখোঁজ আল জাবের ॥ ডেমরা থেকে চার বন্ধু আব্দুল্লাহ আল জাবের, ওমর ফারুক তানভির, মাহফুজুর রহমান ও কায়কোবাদ এম এল আফসার উদ্দিন নামে লঞ্চটি করে রবিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের ঘুরতে যাচ্ছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে সৈয়দপুরের আল-আমিন নগর এলাকায় আসলে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় আফসার উদ্দিন লঞ্চটি ডুবে যায়। ভাগ্যক্রমে তিন বন্ধু ওমর ফারুক তানভির, মাহফুজুর রহমান ও কায়কোবাদ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর একটি ট্রলার তাদের উদ্ধার করেন। নিখোঁজ হয় আব্দুল্লাহ আল জাবের। শীতলক্ষ্যা তীরে নিখোঁজ ও নিহতের স্বজনদের আহাজারি ॥ সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এক নারী ও এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, এখনও ৪ জন নিখোঁজ রয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই নিখোঁজের আত্মীয়-স্বজনরা শীতলক্ষ্যা নদীতে ট্রলার ভাড়া করে তাদের স্বজনদের খোঁজাখুঁজি করছে। নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ॥ শীতলক্ষ্যায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ ॥ একের পর এক নৌ-দুর্ঘটনার কারণে স্থানীয় লোকজন ও নিহতের স্বজনরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, শীতলক্ষ্যা নদীতে একের পর এক নৌ-দুর্ঘটনা ঘটলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। লঞ্চটির মালিক ঘাট ইজারাদার ॥ স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, শীতলক্ষ্যায় ডুবে যাওয়া ‘এমএল আফসার উদ্দিন’ লঞ্চের মালিক দিল মোহাম্মদ কোম্পানি গা ঢাকা দিয়েছেন। নানা কৌশলে পুরনো এই লঞ্চ দিয়েই দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী বহন করছিলেন তিনি। সোনা মিয়া কোম্পানি মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের ইজারাদার। সিন্ডিকেটের কারণেই পুরনো আমলের লক্কর-ঝক্কর মার্কা লঞ্চগুলো পরিবর্তন করা যাচ্ছিল না।
×