ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ পাচার

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ২৯ জানুয়ারি ২০২২

অর্থ পাচার

বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত ৬৯ বাংলাদেশীর নাম উচ্চ আদালতে ফিন্যান্সিয়াল ইউনিটের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এক বছরেরও বেশি সময় আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে চমক লাগানো একটি সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে দেখা যায় টাকা পাচারে সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে দেশের সরকারী কর্মচারীরা। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার হিসাবেও বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় ভারত, ভুটান ও মালদ্বীপের চেয়ে কম। এশীয় পরিসরে এ স্থান অনেক অনেক নিচে। বিশ্বপরিসরেও তাই। তবে দেশ থেকে অর্থ পাচার এবং অন্য দেশে সহায়-সম্পত্তি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশীরা আশ পাশের সব দেশের চেয়ে এগিয়ে। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ থেকে বৈধ উপায়ে কেউ কি টাকা নিয়ে যান। এজন্য যে টাকা লেগে থাকে তার পুরোটাই পাচার হয় বলে ধারণা করা যায়। মানিলন্ডারিং বা বিদেশে অর্থ পাচার যে কোন দেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। দেশের আইন অনুযায়ী বৈধ অনুমোদন ছাড়া দেশের বাইরে অর্থ-সম্পত্তি প্রেরণ বা পাচার কিংবা দেশের বাইরে উপার্জিত সম্পত্তি, যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ রয়েছে, তা ফেরত না আনা কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদেশে অর্জিত অর্থ বা প্রকৃত পাওনা দেশে না আনা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থ পাচারের নানা মাধ্যম রয়েছে, যার ভেতর ই-ট্রান্সফারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ, হুন্ডি, কুরিয়ার সার্ভিস বা ব্যক্তি বাহকের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর ইত্যাদি। তবে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ পাচার বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা বা থিংক ট্যাংক গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) মতে, বাংলাদেশের মোট অর্থ পাচারের প্রায় ৮০ শতাংশ সংঘটিত হয় আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের আড়ালে। মুদ্রা বা অর্থ পাচারের ইচ্ছা থাকলে আমদানির ক্ষেত্রে দ্রব্যের অতি মূল্যায়ন এবং রফতানির ক্ষেত্রে পণ্যের অবমূল্যায়ন করা হয়। সম্প্রতি কাস্টমস দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী এ বিষয়টির দিকেই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আইনী ব্যবস্থা থাকলেও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বা সাফল্য দেখাতে পারেনি। তদন্ত করে চার্জশীট প্রদান এবং কোর্টে মামলা করার পর দীর্ঘসূত্রতা এর অন্যতম কারণ। অর্থ পাচার রোধে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সক্রিয় তৎপরতা অবশ্যই কাজে আসবে। নিয়মিত তদন্ত, বাড়তি সতর্কতা ও নজরদারিও জরুরী। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর আইন করার কথাও কেউ কেউ বলছেন। তবে শুধু আইন করলেই হবে না, তা প্রয়োগে সততা ও কঠোরতার দৃষ্টান্তও রাখা চাই। আমরা আগেও বলেছি, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও মানিলন্ডারিং দুটি ভিন্ন বিষয় হলেও একটির সঙ্গে অপরটি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন দমনে দুদক, বিএফআইইউ, সিআইডি (পুলিশ), এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রিপোর্টিং এজেন্সি এবং তার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে তৎপর হতে হবে। অর্থ পাচার রোধে কাস্টমস আন্তরিক ও অধিকতর সক্রিয় হবে বলে আমরা আশা করতে পারি। দেশের অর্জন কিছুতেই বিদেশে পাচার হতে দেয়া যাবে না।
×